একজন বিচারক সবসময়ই বিচারক থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘একজন বিচারক সবসময়ই বিচারক থাকেন। তাই বিচার কাজের বাইরেও বিচারকদের এমন কোনও আচরণ করা যাবে না যার ফলে বিচারক ও বিচার বিভাগের ওপর জনগণ আস্থা হারায়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ধানমন্ডির এক রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিচারকদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। তাদের সবসময় সতর্ক হয়ে কথা বলতে ও চলাফেরা করতে হবে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। বিচারক হিসেবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য দৈহিক ও আত্মীকভাবে সবটুকু মনোযোগ দিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একজন বিচারক সবসময় বিচারক থাকেন। তাই এজলাসের পরের সময়টুকু বিচারকের আচরণ এমন হতে পারবে না যাতে মানুষ আস্থা হারায়। আমাদের আচার-আচরণ, চলাফেরা, মেলামেশা সবকিছুতেই সতর্ক থাকতে হবে এবং কথা বলতে হবে সতর্ক ও সংযত হয়ে। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকে যদি তার দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করে, কেবল তখনই বড় অর্জন সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সা¤প্রতিক কালে বিচার বিভাগের অর্জন উল্লেখ করার মতো। আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেক চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’
বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘পূর্বে বিচারকদের জন্য দেশের বাইরে কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে বিচারকরা অস্ট্রেলিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এটা আইনমন্ত্রীর অবদান। সুপ্রিম কোর্ট থেকেও আমরা উদ্যোগ নিয়ে ভারতে বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সেটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে সরকারের সহযোগিতার ফলে। আমি আশা করি, বিদেশে অধ্যয়নের ফলে বিচারকদের জ্ঞানের সীমা আরও বিস্তৃত হবে এবং তাদের দক্ষতা হয়ে উঠবে বহুমাত্রিক। এসব প্রশিক্ষণের ফলে বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। উন্নত দেশসমূহের ভালো ব্যবস্থাপনাগুলো বিচারকগণ এদেশে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশে ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রেষণে পদায়নের ফলে বিচারক শূন্যতার কারণে অধঃস্তন কোনও আদালতের কার্যক্রম যেন স্থবির না হয়ে পড়ে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সেটা নিশ্চিত করার জন্য নিম্ন আদালতের মোট আনুপাতিক পদের ১০ ভাগ রিজার্ভ পদ সৃজনে আইনমন্ত্রী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিচার বিভাগের গতি আরও বেগমান হবে বলে আমি মনে করি।’
বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের পক্ষে ইতোমধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে জানতে পেরে আমি গর্বিত। এর অংশ হিসেবে সরকারের সহযোগিতায় দেশের সব বিচারককে একটি করে ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। এটুআই প্রজেক্টের মাধ্যমে অনলাইনে নিম্ন আদালতের কজলিস্ট চালু হয়েছে যা দ্রæত আইনি সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। আশা করছি, এ বিষয়ে আমরা একসাথে কাজ করে সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’
নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচারকগণের প্রতি আমার নির্দেশ, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলারসমূহ প্রতিপালন এবং সিভিল ও ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারের বিধান মতে নিয়মিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলন আয়োজন, আদালতসমূহ পরিদর্শন ও তত্ত¡াবধান কার্যক্রম পরিচালনা জোরদার এবং মামলার বিবরণী সঠিকভাবে হাইকোর্টে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।’
জেলা জজদের উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেলা জজগণের প্রতি আমার নির্দেশ- মামলাসমূহ যুগ্ম এবং দায়রা জজ কর্তৃক শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জেলা জজগণ নিজেরা সিভিল আপিল শুনানি করবেন এবং তা দ্রæত নিষ্পত্তি করবেন। আপনাদের সুবিধা-অসুবিধা, চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে আমি অবগত আছি।’
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সায়মা খালেক, সংগঠনের মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকসহ সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালতের বিচারিক কর্মকর্তারা।