Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

১১ মার্চ সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করবে বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১১ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে বিএনপি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) প্রধানমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (নিবাচন-পূর্ব সময়) ডিজিটাল প্রচারণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিধানযুক্ত করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধন চুড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এই আইনে থাকবে, তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত প্রচারণায় ইলেকট্রনিক মাধ্যম, ডিজিটাল ডিসপ্লে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যাবে না। কোন রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী প্রচারণা চালালে কারাদÐ ও অর্থদÐে দÐিত হবেন। যেটি ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনের চরম পরিপন্থি। নির্বাচনে শুরু থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম, প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, নমিনেশন পেপার জমাদানে বাধা, ছিনতাই, প্রচারণায় বাধা, ভাংচুর, জোর জবরদস্তি, ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং আওয়ামী লীগের ভোট সন্ত্রাস যাতে প্রচার না হয় এজন্যই এ নতুন আইন করতে উদ্যোগ নিয়েছে ইলেকশন কমিশন। দলের এই নেতা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেন, নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিধানযুক্ত করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের নামে একটা নতুন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে কালো আইন তৈরীর উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি কারসাজী আড়াল করতে অবাধ তথ্যপ্রবাহের হাত-পা কেটে ফেলা। এজন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায় এমন কালাকানুন থেকে সরে আসার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনসহ পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, সিটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে কিভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, রক্তাক্ত ভোট সন্ত্রাস, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের নমিনেশন জমা দানে বাধা দেয়া হয়েছে। কিভাবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ভোট সন্ত্রাস হয়েছে এটা সকলেই অবগত। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাÐ যাতে মানুষের নিকট প্রকাশ না পায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটারশূন্য অবলা-প্রাণী-মার্কা ইলেকশন যাতে দেশ বিদেশের মানুষ জানতে না পারে সেজন্যই আওয়ামী লীগ প্রধানের নির্দেশে এ নতুন আইন করা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে বলে আসছি তিনি সরকারের সবুজ সংকেত ছাড়া কোন কাজ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়নই তাঁর প্রধান কাজ। আপনারা দেখেছেন নির্বাচন কমিশনের সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রায় সকলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছেন। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ওপর প্রায় সকলেই গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু বর্তমান ইসি সেসব মতামতকে উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীর নাম বাদ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- আবারও একটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারি প্রেসক্রিপশনে এগুচ্ছে ইসি। যা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়। সিইসি’র নেতৃত্বে আবারও একটি নীল নকশা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা হচ্ছে, যে নির্বাচন হবে একচেটিয়া ও একতরফা এবং তা হবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলকে বিনা ভোটে জেতানোর নির্বাচন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে পরিকল্পিতভাকে একটি বানোয়াট ও কারসাজিমূলকভাবে জাল নথি বানিয়ে মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করাসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাজা দেয়া হয়েছে। আধিপত্য-অভিলাষী সরকার গাণিতিক হিসাবে বিএনপিকে দমন করার কাজ চালাচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন কিভাবে বাধাগ্রস্ত করা যায় তা নিয়েও সরকার ষড়যন্ত্র করছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে, পশুবৎ হামলা করা হচ্ছে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে। নেতা-কর্মীদের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে দেশব্যাপী, নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে দেশজুড়ে। অন্যদিকে নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা ছাড়াই সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি খরচে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। যা নির্বাচনে সমতল মাঠ নির্মানে সহায়ক নয়। নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরি করা।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিএনপি’র লিফলেট বিতরণকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে মানিকগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেয়ালে পোস্টার লাগাতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশ মারমুখী হয়ে পোস্টার লাগাতে বাধা দেয় এবং পোস্টার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। বান্দরবানে যুবদল নেতা মোঃ হেলাল একই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এছাড়া মৌলভীবাজারে লিফলেট বিতরণের সময় পুলিশী হামলায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল মোমিন পিন্ট ও পৌর বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন এবং ফকিরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল হোসেন প্রমুখ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ