Inqilab Logo

রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে আগ্রহ এডিবির

সংবাদ সম্মেলনে এডিবি প্রেসিডেন্ট

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

০ সরকার চাইলে রোহিঙ্গাদের সহায়তা  ০ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সঠিক পথেই বাংলাদেশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও বলেছেন, বাংলাদেশে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে তারা প্রস্তুত।
প্রতিশ্রæত ঋণ-সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে এই অর্থায়নের পাশাপাশি সরকার চাইলে যে কোনো বড় প্রকল্পে এডিবি অর্থ দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ সফররত তাকেহিকো নাকাও গতকাল বুধবার ঢাকায় এডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার এক বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে আমাদের অর্থায়ন করতে বলেছেন। আমরা সেখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি। সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে অবশ্যই আমরা সেটা বিবেচনা করব।
প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ক্ষেত্রেও এডিবি সহায়তা করতে পারে বলে জানান ম্যানিলাভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আট বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি রয়েছে এডিবির। এই অংক আগের পাঁচ বছরের (২০১১-২০১৫) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।
যদি প্রয়োজন হয় এর বাইরেও বাংলাদেশকে আমরা অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা দেব। সেটা চলমান প্রকল্প এবং নতুন প্রকল্পেও হতে পারে। এমনকি সরকারের যে ১০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোতেও আমরা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি।
বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে এডিবিও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সে সময় প্রাথমিক চুক্তি হলেও পরে নানা জাটিলতায় শেষ বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ করে দেয়। এডিবিও আর পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী পদ্মার পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে ছয় দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ।
তাকেহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) বাড়াতে এডিবি অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ এবং নগর এলাকার উন্নয়নে ঋণ-সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
এর বাইরে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়তেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেন এডিবি প্রেসিডেন্ট।
এক প্রশ্নের জবাবে তাকেহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্যও এডিবি সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা কতটা সম্ভব-এ প্রশ্নে তাকেহিকো নাকাও বলেন, অসম্ভব নয়। তবে খুবই কঠিন। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। আর সেজন্য প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। দেশি বিনিয়োগের পাশপাশি বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক। তবে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহাত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।
তিন দিনের সফরে সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন এডিবি প্রেসিডেন্ট নাকাও। গতকাল বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। বাংলাদেশের বড় অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এডিবি প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীন ও ভারতের মত বড় অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার জোর সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে।
এডিবির প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক দেশই এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে এডিবির কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তাকেহিকো নাকাও এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন। ইহসানুল করিম জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি টেকনাফের পরিবেশ ও জনমিতির ওপর এর বিরূপ প্রভাবের কথাও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসায় তাকেহিকো নাকাওয়ের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়নই তার সরকারের মূল লক্ষ্য। যোগাযোগের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন। আর শিক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিজ্ঞান চর্চায় জোর দিচ্ছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদস্য হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ঋণ-সহায়তা দিয়ে আসছে।
এডিবি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছে। প্রধানত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, সুশাসন ও আর্থিক খাতে ঋণ দেয় সংস্থাটি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ