Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিজেএমসি না থাকলে ব্যবসা চলে যাবে বেসরকারি খাতে -মির্জা আজম

৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচি মন্ত্রণালয়ের

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই গ্রæপে এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছয়জনকে ৬ মার্চ পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ১১টি ক্যাটাগরিতে আও ১২ জনের হাতে পাট দিবসের পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম পাট দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। 

আগামী ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করা হবে। মির্জা আজম বলেন, পাট দিবসের গুরুত্ব ও পাট সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জাতীয় পাট দিবস সামনে রেখে গত ২৭ থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি শিল্পকলা একডেমি মিলনায়তনে পাটের ক্যানভাসে শিল্পীদের আর্ট ক্যাম্প, ১ মার্চ মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত রোড শো এবং ২ মার্চ মানিকমিয়া এভিনিউ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত রোড শো হবে। তিনি বলেন, ৩ মার্চ হাতিরঝিলে নৌ শোভাযাত্রা, ৪ মার্চ জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে কবিতা পাঠের আসর, ৫ মার্চ সিরডাপ মিলনায়তনে সেমিনার, ৬ থেকে ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাটপণ্যের মেলা, ৭ মার্চ ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। দিবসটি উদযাপনে রাজধানীর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপে আলোকসজ্জা এবং পাটপণ্য দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের উপর নির্ভরশীল। আজম বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নিরন্তর চেষ্টায় পাট ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় নির্দিষ্ট ১৭টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়টি এজেন্ডভুক্ত রাখা হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়, প্রতি মাসেই আমরা প্রতিবেদন পাই। প্রায় শতভাগ পণ্যেই ( যেসব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক) পাটের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। আজম বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পর চাল আমদানিতে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ ডিসেম্বর ওই সুযোগ শেষ হয়েছে। মানুষ পাট পণ্যকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত পণ্যের মোড়কে পাটপণ্য ব্যবহার না করলে আইন অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সর্বোচ্চ এক বছর জেল দেওয়া যায়। এ আইন বাস্তবায়নে গিয়ে কিছুটা জরিমানা করা হলেও কাউকে জেল দেওয়া হয়নি। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৬৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিজেএমসি এখনও লোকসান দিচ্ছে। আজম বলেন, মোট পাটের আট শতাংশের কাজ বিজেএমসির হাত দিয়ে হয়; ৯২ শতাংশ হয় বেসরকারি খাতে। সরকার কখনও ব্যবসায়ী হতে পারে না। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে বিজেএমসি মাত্র দুই বছর কিছুটা লাভ করেছে। বেসরকারি পাটকলগুলো মজুরি কমিশনের আওতায় পড়েন না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিজেএমসির প্রমিকরা মজুরি কমিশনের আওতায়। বেসরকারি জুট মিলে যে শ্রমিক ৩০০ টাকা বেতনে (দিনে) কাজ করে, তার বয়স ১৮ বছর। আমার এখানে ৫৯ বছরের যে শ্রমিক কাজ করেন, বয়স বাড়ার কারণে ওই ১৮ বছরের শ্রমিকের সমান কাজ করতে পারেন না। কিন্তু তাকে প্রতিদিন বেতন দিতে হয় বারশ টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একজন শ্রমিককে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ২০০ টাকা বেতন দিতে পারলেও বিজেএমসিকে প্রত্যেক শ্রমিকদের পেছনে মাসে গড়ে ১১ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এ কারণে বেসরকারি জুট মিলের থেকে (সরকারি জুট মিলে) প্রতি বছর ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মজুরি দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি জুট মিল নতুন মেশিনে কাজ করে। আর সরকারি মিলে পুরোনো ও অর্ধেক কার্যকর মেশিনে কাজ করায় উৎপাদন কম হলেও বিদ্যুৎ ও শ্রমিকদের খরচ পুরোটাই হচ্ছে। বিজেএমসির যে স্বীকৃতি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে, এটা হওয়ার পেছনে অতীতের সরকার গুলোর অবদান আছে। বিএনপি সরকারের আমলে আদমজী জুটি মিল বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিজেএমসির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলেছে এবং বিভিন্ন সরকারের আমলে বিজেএমসিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিজেএমসিতে দুর্নীতির মাত্রা এখন আগের চেয়ে কমেছে দাবি করে আজম বলেন, এজন্য গতবার থেকে চলতি বছর লোকসান ১৮০ কোটি টাকা কমানো গেছে। পাট ব্যবহারে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক বছর আগেও বহুমুখী পাটপণ্যের সংখ্যা ছিল ১৩৫টি। এখন তা বেড়ে ২৩৫টি হয়েছে। বিজেএমসির হাত দিয়ে আট শতাংশ পাট কেনাবেচার মাধ্যমে শতভাগ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। বিজেএমসি না থাকলে সব ব্যবসা চলে যাবে বেসরকারি খাতে, তখন কৃষক মরে যাবে। এজন্য লোকসান দিয়ে হলেও বিজেএমসিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বিজেএমসিতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা এক সময় কাজ না করেও বেতন তুলতেন স্বীকার করে আজম বলেন, এখন সেই পরিস্থিতি নেই। সিবিএর নেতাকে আট ঘণ্টা না হোক, অন্তত ছয় ঘণ্টা ডিউটি করতে হচ্ছে। অন্যদের মধ্যে বস্ত্র ও পাট সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান ছাড়াও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ