Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খুলনায় প্রধামন্ত্রীর জনসভায় বিপুল জনসমাগমের প্রস্তুতি

৯৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরের সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ৩ মার্চ খুলনা সফর ও জনসভা ঘিরে খুলনায় এখন সাজ সাজ রব। বিভাগীয় জেলা সদরে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দন মিছিল করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে জনসভার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সারা নগরীতে রাত ১২টা পর্যন্ত শত শত মাইকিং চলছে। এছাড়া মহানগরীসহ জেলার প্রবেশপথগুলোতে তোরণ নির্মাণ, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, বর্তমান অবস্থা ও করণীয় নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেছে খুলনা বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন।
এদিকে খুলনার মোট ৯৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫২টি নতুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন উদ্বোধনের জন্যে প্রকল্পসমূহের তালিকা গত মঙ্গলবার চূড়ান্ত করেছে। খুলনার উদ্বোধনযোগ্য ৪৭টি প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে আর কিছু অসম্পূর্ণ রয়েছে।
সূত্রমতে, আগামী ৩ মার্চ মহানগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মিজানুর রহমান বলেন, আশা করছি জনসভায় দশ লাখেরও বেশি লোক সমাগম হবে। জনসভায় নৌকার আদলে সুসজ্জিত মঞ্চ করা হবে। মহা জনসমুদ্রে নারীদের বিপুল সমাগম ঘটবে। খুলনা বিভাগসহ গোপালগঞ্জ থেকেও আসবেন সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা। সার্কিট হাউজ মাঠে প্রবেশে নারীদের জন্য চারটি গেট থাকবে। দু’টি থাকবে পুরুষের জন্য। জনসভা নির্বিঘœ করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এছাড়া এ জনসভা থেকেই আসন্ন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নামও ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এদিকে এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ, খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা ক্যাডেট কলেজ, মেরিন একাডেমি, পূর্ণাঙ্গ আইটি ভিলেজ, শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে রিসার্স সেন্টার, খুলনা জেনারেল হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, খুলনা প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া হাউজসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জনসভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী সম্পর্কে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। এখান থেকেই মূলত সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনের খুলনা বিভাগে প্রচারণা শুরু হবে। তাই এটি খুলনা জেলা নয়, বিভাগের জনসভা।
এদিকে, নগরীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, হাজী আব্দুল মালেক মহাবিদ্যালয় ও খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসা সরকারিকরণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৫২ সালে শহরের খানজাহান আলী রোডে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসাটিতে প্রায় হাজার ছাত্র লেখাপড়া করছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ গরীব, মধ্যবিত্ত পরিবারের ও এতিম সন্তান। খুলনা আলিয়া মাদরাসা সরকারিকরণের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শিক্ষকরা। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসাটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অসামান্য অবদান রাখছে। বর্তমানে মাদরাসাটিতে অনার্স-মাস্টার্সসহ আরবী ও ইসলামী শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষায় অসামান্য অবদান রাখছে।
আবার, স্বাধীনতার পর খুলনায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম মহাবিদ্যালয় শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজটি প্রায় চার যুগেও জাতীয়করণ না হওয়ার মনে কষ্টে ভুগছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। কলেজটির শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কলেজটি জাতীয়করণে কয়েক দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এ দায়িত্ব নেন।
১৯৮৪ সালে নগরীর জিন্নাহপাড়া এলাকায় ২ দশমিক ১১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া কলেজ। বেসরকারি হওয়াতে কলেজটির দুই সহস্র শিক্ষার্থীকে বেতন দিয়ে অতি কষ্টে পড়ালেখা করছে। অন্যদিকে, ৭০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৫০ জন এমপিও ভুক্ত, বাকিরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বর্তমানে বিবিএসহ ৮টি বিষয়ে অনার্স চালু কলেজটি সরকারিকরণে এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করলেন অধ্যাপক আসিফ ইকবাল।
বিভাগীয় শহর খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন উপলক্ষে খুলনার সকল পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে সংগঠনটি। খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের বিভিন্ন দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্বিত করে আগামী ২৭ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ নেয়া হয় সভায়।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, খুলনা মহানগরীর এই জনসভা মানেই খুলনা বিভাগে আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী জনসভা। এই সভা থেকেই খুলনা বিভাগের রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ