Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনায় ধরা পড়ছে বিলুপ্ত প্রায় সুস্বাদু মাছ সিলন

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : মাছের নাম সিলন। নরসিংদীর মেঘনার একটি দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু মাছ। ৮০ দশকের পূর্ব পর্যন্ত মেঘনা নদীতে প্রচুর সংখ্যক সিলন মাছ পাওয়া যেতো। ৮০ দশকের মধ্যভাগে নদ-নদী, খাল-বিলে মাছের পঁচনরোগ দেখা দেয়ার পর মাছটি মেঘনা থেকে হারিয়ে যায়। বাঙালীর প্রিয় মাছ সিলনের নাম উঠে যায় বিলুপ্তির তালিকায়। বিগত ৩ দশক ধরে এ মাছটি মেঘনা নদীতে তেমন একটা দেখা যায়নি। যার ফলে অনেকেই এই মাছটির নাম ভূলে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন বিলুপ্তির তালিকায় থাকায় এ মাছ অনেকেই চিনতে পারে না। নাম শুনলেও দেখার পর অনেকেই চিনতে পারে না। বর্তমান প্রজন্ম এ মাছটিকে একেবারেই চিনে না। কারণ বাচা, ঘাওড়া ও সিলন মাছ দেখতে প্রায় একই রং ও একই আকৃতির হওয়ায় লোকজন সিলন মাছকে চিহ্নিত করতে পারে না। আর এ সুযোগে অনেক বিক্রেতা ঘাওড়া মাছকে সিলন মাছ বলে বেশী দামে বিক্রি করে। মাছটি শুধু নামে নয় দামেও অনেক বেশী। এক কথায় বলা যায় সিলন একটি দামী মাছ। এক সময় মেঘনার জেলেদের জালে ধরা পড়তো এই সুস্বাদু মাছ। ৮/৯ ইঞ্চি মাপের সিলন বাজার ভরে যেতো। কিনে নিতো সৌখিন ক্রেতারা। অর্থাৎ সিলন মাছের গ্রাহক হচ্ছে বড় ব্যবসায়ী, বড় চাকুরীজীবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতো বেশী পয়সার মালিকরা। মাছটি লম্বায় সর্বোচ্চ ৬ ফুটেরও অধিক লম্বা হলেও মেঘনায় পাওয়া যেতো ৮/৯ ইঞ্চি মাপের সিলন মাছ। মাছটির দেহ লম্বা। শরীর চাপা। চোখ মাঝারি ধরনের। মাথা চোখের ব্যসের ৪.২ থেকে ৪.৫ গুণ। আন্ত অক্ষিকোটর চোখের ২ গুণ। নাকের অগ্রভাগ গোলাকার। মুখাবয়ব প্রান্তীয়, প্রশস্ত এবং তীর্যকভাবে উর্ধমুখী। দাঁত ভিলিফর্ম, চোয়ালে সারিবদ্ধভাবে সাজানো। বার্বেল ২ জোড়া: ম্যাক্সিলারী বার্বেল ক্ষুদ্র, কোটরে লুকানো। মান্ডিবুলার বার্বেল বিলীয়মান অবশেষ, ত্বকে ঢাকা থাকে। পৃষ্ঠ পাখনার অবস্থান শ্রোনি পাখনার অগ্রভাগে। বয়স্ক মাছের ক্ষেত্রে বক্ষ পাখনা শ্রোনি পাখনা পর্যন্ত পৌঁছে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মাছের ক্ষেত্রে এটি শ্রোনি পাখনার গোড়া অতিক্রম করে। পুচ্ছ পাখনা দ্বি-বিভক্ত, পৃষ্ঠদেশ সবুজ, পার্শ্বদেশ ও উদর রুপালী রংয়ের হতে থাকে। পাখনাসমূহের রং ধূসর। ঠোঁট একেবারে রাঙা লালের হয়ে থাকে। কানকো কমলা হলুদ রংয়ের, শ্রোনি পায়ু ও পুচ্ছ পাখনার গোড়া হলদেটে। মাছটি সর্বোচ্চ ৬ ফুটেরও অধিক লম্বা হলেও এত লম্বাকারের মাছ খুব একটা দেখা যায় না। সিলন মাছ তৈলাক্ত বলে যে কোন তরকারীর সাথে খাওয়া যায়। তবে ভোজনবিলাসী লোকেরা সাধারণত: লম্বা বেগুন দিয়ে সিলন মাছের ঝোল রেধে খায়। এছাড়া অতিথি আপ্যায়নে এই সিলন মাছ ভূনা করে পরিবেশন করা হয়। অনেকে সিলন মাছের পাতলা ঝোল রেধে খেয়ে থাকে। সিলন মাছের চাহিদা বেশী বলে জেলেরা এর গতিবিধি লক্ষ করে জাল দিয়ে শিকার করে। ফলে সিলন মাছ খুব একটা বড় হবার সুযোগ পায় না। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত বইয়ে সিলন মাছ সর্বোচ্চ ১৮৩ সে.মি. বা ৬ ফুটেরও বেশী লম্বা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওজনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আর এত লম্বা সিলন মাছ বাজারে উঠতে দেখা যায়নি। চলতি বছর হঠাৎ করে বাজারে এই সিলন মাছের আধিক্য দেখা দিয়েছে। লোয়ার মেঘনায় এ মাছ বেশী পাওয়া যায়। এ বছর নরসিংদীর মেঘনা তথা ময়মনসিংহ, সিলেট হাওর এলাকায় বোয়াল, সরপুটি, কালো বাউস ও ঘনিয়া মাছ বেশী ধরা পড়ছে। সে সাথে ধরা পড়ছে সিলন মাছও। বাজারে যেমন আমদানী হচ্ছে তেমন বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। তবে বেশীরভাগ মাছই ১০ ইঞ্চির নীচে। সম্প্রতি নরসিংদী জেলা শহরের ব্রাহ্মন্দীর নয়াবাজারে আমদানী হয়েছে সাড়ে ৯ কেজি ওজনের ২ টি সিলন মাছ। একটির ওজন ৫ কেজি আরেকটির ওজন সাড়ে ৪ কেজি। প্রবীণজনেরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা উত্তরকালে এত বড় আকৃতির সিলন মাছ দেখা যায়নি। মাছ ২ টি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৭ শত টাকা। কিনে নিয়েছে একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি। মাছ দুটি ওজনে সাড়ে ৯ কেজি হলেও লম্বায় ছিল মাত্র দেড় ফুট করে। প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলন মাছ তারা ছোট বেলা থেকে বিক্রি করে আসছে এক দেড় ফুটের বেশী লম্বা মাছ তারা দেখেনি। তবে এ বছর অনেক বড় বড় আকৃতির সিলন মাছ বাজারে আমদানী হয়েছে। যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রাকৃতিক জলাশয় তথা মেঘনা নদীতে এ মাছের আধিক্য প্রাকৃতিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাদু পানির অনেক মাছই বিলুপ্তির তালিকায় ছিল। কিন্তু দেখা গেছে কিছুদিন পর এসব মাছ ফিরে আসছে জলাশয়ে। কোনোকিছুই একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। সিলন মাছও বিলুপ্ত প্রায় মাছের তালিকাভূক্ত একটি মাছ । প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই এ মাছ আবার মেঘনার পানিতে ফিরে এসেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ