পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : তরুণদেরকে দেশ চালাতে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর কত’। তিনি বলেন, আমাদের তো দিন প্রায় শেষ, বয়স হয়ে গেছে, বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর কত? এরপর তো তোমাদের চালাতে হবে। তোমাদেরকে নিতে হবে দেশকে এগিয়ে। পারবে না তোমরা? আমার বিশ্বাস আছে, তোমরা পারবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি বলব, তোমরাই তো আমার সোনার ছেলে, তোমরাই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা আশা করি। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী উচ্চশিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিই পারে সকল প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সভ্যতাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে। গতকাল রবিবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রদত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোতে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ পাওয়া ২৬৫ জন শিক্ষার্থীকে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক’ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি তরুণদের নিয়ে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘২০৪১ সালের মধ্যেই আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারব’-এমন আশার কথা শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর সে অর্জনটা করে দিতে হবে তাদের, আজকে যারা মেধাবী ছেলে মেয়ে। তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমাদেরকেই করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধা বেশি বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু একটা জিনিস দরকার। সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা, মেধা ও মনন চর্চা করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা। সেটা করতে পারলেই আমাদের ছেলে মেয়েরা কত ভালো করতে পারে। সেটা আমার জানা আছে।
মার্চেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদেরকে আর কেউ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারবে না। সেই জায়গাটায় আমরা পদার্পন করবার সফলতা অর্জন করেছি।
স্বর্ণপদক বিজয়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো ছেলে-মেয়ে স্বর্ণ পদক পেল অর্থাৎ কত মেধা আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে মেধাবী বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আজকে ২৬৫ জনকে আমরা স্বর্ণপদক দিলাম। আমি সত্যই খুব আনন্দিত। আর ২০১৬ সালের বেলায় আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলতেন একটি সমাজে নারী-পুরুষ সকলেরই সমান অধিকার থাকা উচিত, সবাইকেই সমান সুযোগ করে দিতে হবে। কাজেই আমরা সেটারই চেষ্টা করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরো মনযোগী হবার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধুৃ লেখাপড়া নয়, খেলাধূলা এবং সংস্কৃতি চর্চা সবদিকেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এজন্য সরকার প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দেবে যেন সেখানে সারাবছর খেলাধূলা চলতে পারে। তিনি আরও বলেন, সবাইতো চলে গেছে। আমরা দুই বোনই বেঁচে আছি (তিনি ও শেখ রেহানা)। আমরা কখনই আমাদের সন্তানদের পড় পড় পড়- এভাবে বলি না বরং বলি এটা তোমার পড়া। এটা তোমাকে পড়তে হবে। নিজের গরজেই পড়তে হবে।
আগামী মাসের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইন উৎক্ষেপণ হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আকাশ থেকে একেবারে সাগরের তলদেশ পর্যন্ত সব জায়গায় বাংলাদেশ বিচরণ করবে। তিনি বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। সেনা, নৌ বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করে দিচ্ছি। আমরা বহুমুখী বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করছি। সেখানেও তো আমাদের ভবিষ্যত শিক্ষক লাগবে, প্রযুক্তিবিদ লাগবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেখানেও আমাদের অনেক লোকের দরকার। সেজন্য শিক্ষা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। এই যে বিপুল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি, সেটা কে এগিয়ে নিয়ে যাবে? আজকে যারা শিক্ষার্থী, আগামী দিনে তারাই হবে কর্ণধর।
শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, মানসম্পন্ন হতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি, শিক্ষাকে আমরা যুগোপযোগীভাবে গড়ে তুলতে চাই। কারণ বিশ্ব দ্রæত পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমরা চাই একটা শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি। জনশক্তি আমার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দিতে পারবে। সামাজিকভাবে উন্নতি করতে পারবে। আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সম্মানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের। রক্ত দিয়ে, দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আমরা এই দেশটাকে স্বাধীন করেছি। এই স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়। এই দেশ যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়। এ দেশ বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমার আকাঙ্খা।
দেশে এখন স্বাক্ষরতার হাত ৭৩ শতাংশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটাও নিরক্ষর মানুষ থাকবে না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ, কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে না। পিএইচডি করবে না, মাস্টার্স ডিগ্রীতেও যাবে না। তারা কোন ধরনের কাজ করতে চায়, সে ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে-সেই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিয়েছি। ৯৬ সালে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে কাজ শুরু করেছিলাম, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আমরা করেছি। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ৯৬ সালে একটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলাম। এখন আরও তিনটা করেছি, আমাদের লক্ষ্য আছে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। তিনি বলেন, আমাদের মাত্র একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরও চারটা বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। যে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি তার মধ্যে দুটিকে কৃষি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি অথবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি।
স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৬ সালে মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়েছে জানিয়ে রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেদেরকে পড়াশোনার প্রতি আরও মনযোগী হতে হবে। এটা ঠিক মেয়েরা যখন যেটা করে, সেটা মনযোগ দিয়েই করে, সেটার কোনো সন্দেহ নাই। আর ছেলেরা তো একটু...।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ ২০১৫ ও ২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে এ বছর ২৬৫ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৫ সালের জন্য ১২৪ জন এবং ২০১৬ সালের জন্য ১৪১ শিক্ষার্থী এই পদক লাভ করেন ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত¡ বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া জাবিন লতা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ইউজিসির সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম স্বাগত বক্তৃতা দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।