Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইয়াবার আগুনে পাঁচ টাকার নোট

প্রতিদিন পুড়ছে লাখ লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

 নূরুল ইসলাম : রাজধানীর গুলিস্তানে পাঁচ টাকার একশ’ নোটের নতুন এক বান্ডেল নিতে গেলে দিতে হয় কমপক্ষে একশ’ টাকা। অথচ অন্য যে কোনো নোটের ক্ষেত্রে দিতে হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পাঁচ টাকার নতুন নোটের দাম এতো বেশি কেন? আওলাদ নামে এক নতুন নোট ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদা বেশি। সে কারনে দামও বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াবাসেবীরা পাঁচ টাকার নোটের চাহিদা বাড়িয়েছে। ইয়াবা সেবনের জন্য ‘পাইপের’ প্রয়োজন হয়। পাঁচ টাকার নোট দিয়ে সহজেই সেই ‘পাইপ’ বানানো যায়। শুধু তাই নয়, ইয়াবা সেবনকালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘পাইপ’ হিসাবে ব্যবহৃত পাঁচ টাকার নোট পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে এমনিভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পুড়ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে প্রতিদিন সারাদেশে ৮ লাখের বেশি ইয়াবা সেবন করা হয়। এই ৮ লাখ ইয়াবাসেবীর অর্ধেকও যদি ইয়াবা সেবনের সময় পাঁচ টাকার নোট ব্যবহার করে থাকে তাহলে প্রতিদিন ৪ লাখ পাঁচ টাকার নোট পুড়ে ছাই অথবা বিনিময়ের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আর টাকার অঙ্কে প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। 

আলাপকালে কয়েকজন ইয়াবাসেবী জানান, বাজারের নতুন হালকা নীলাভ রঙের পাঁচ টাকার নোট ইয়াবা সেবনের জন্য খুবই ভালো। এটি অতি সহজে গোল করে ‘পাইপ’ বানানো যায়। এরপর সেটি নাকে দিয়ে সহজেই ইয়াবার ধোঁয়া টেনে নেয়া যায়। কিছুক্ষণ এভাবে টানার পর নোটের মাথার অংশ পুড়ে যায়। এরপর সেটির আর কার্যকারিতা থাকে না। ইয়াবা সেবনের জন্য আগেও নতুন টাকা ব্যবহার করা হতো। তবে পাঁচ টাকার নোট আসার পর বড় বড় নোটের ব্যবহার কমে গেছে। এখন এই পাঁচ টাকার নোটের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে, ইয়াবার সাথে এখন পাঁচ টাকার নোট দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। একজন ইয়াবাসেবী জানান, একটা ইয়াবার সাথে একটা পাঁচ টাকার নোট নিতে গেলে কমপক্ষে ১০ টাকা দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা ইনকিলাবকে বলেন, ইয়াবা সেবনের জন্য একটা পাইপের প্রয়োজন হয়। এজন্য মাদকসেবীরা আগে ক্যালেন্ডারের মোটা কাগজ ব্যবহার করতো। কিন্তু পকেটে মোটা কাগজ রাখলে পুলিশ সন্দেহ করে বলে ইয়াবাসেবীরা কাগজের পরিবর্তে টাকা ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে পাঁচ টাকার নোট ইয়াবাসেবীদের কাছে নিরাপদ। টাকা পকেটে থাকলে সন্দেহ করার অবকাশ থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সঙ্কটের কারনে ২০১৬ সালের জুন মাসে বাজারে নতুন পাঁচ টাকার নোট ছাড়া হয়। এরপরও চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আবারও নতুন পাঁচ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে দুই বার পাঁচ টাকার নোট বাজারে ছাড়ার পর এখন সঙ্কট চরমে। রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, কোতয়ালী, মতিঝিল, পল্টন ও লালবাগ থানা এলাকার কয়েকটি দোকানে গিয়ে পাঁচ টাকার নোটের চাহিদা নিয়ে কথা বলে এই সঙ্কটের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, পাঁচ টাকার নোটের সঙ্কট সব সময় লেগেই থাকে। নতুন নোট তো বহুদিন হাতে পড়েনি। তিনি বলেন, গত বছরের প্রথম দিকে হাজার হাজার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল আর কখনও পাঁচ টাকার নোটের সঙ্কট হবে না। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আগের মতোই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোডের হোটেল ম্যানেজার সুজা উদ্দিন বলেন, পাঁচ টাকার নোট এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। কাস্টমারদের টাকা ফেরত দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঝামেলায় পড়তে হয়। মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার সিগারেট বিক্রেতা তছলিম বলেন, অন্যান্য নোটের তুলনায় পাঁচ টাকার নোট কমই পাওয়া যায়। ভাংতি দিতে গেলেই সমস্যায় পড়ে যাই। ফকিরেরপুলে এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, ২০ টাকা, ১০ টাকা ও ৫ টাকার নোটের সমস্যা সব সময় আছে। খাবারের বিল দিতে আসা কাস্টমারদের হাতে থাকে শুধু বড় বড় নোট। পাঁচ টাকার নোটের সংকট বেশি বলে তিনি জানান। কাস্টমারদেরকে দেয়ার জন্য পাঁচ টাকার কয়েন সংগ্রহ করে রাখেন বলে তিনি জানান।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক ইয়াবাসেবী জানায়, তার পরিচিত সবক’টি স্পটে এখন ইয়াবা সেবনে পাঁচ টাকার নোট ব্যবহার করা হয়। অনেকে পরিচিত দোকান থেকে নতুন পাঁচ টাকার নোট সংগহ করে। আবার কেউ কেউ ইয়াবা বিক্রেতার কাছে থেকে ১০ টাকা দিয়ে একটা পাঁচ টাকার নোট কেনে। আলাপকালে পুলিশের একজন এসআই জানান, ইয়াবাসেবীরা সাধারনত পকেটে নতুন পাঁচ টাকার নোট রাখে। পুলিশের ভয়ে কেউ কেউ পাঁচ টাকার মানিব্যাগের চিপায় ঢুকিয়ে রাখে।
আইসিডিডিআরবি’র ২০১৩ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির মাদক ব্যবহারজনিত ব্যয় বছরে ৫৬ হাজার ৫৬০ টাকা থেকে ৯০ হাজার ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে ৬৬ লাখ মাদকসেবী বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। এর সঙ্গে মাদক নিরাময় কেন্দ্র, এনজিও কার্যক্রম ও সরকারি কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। তবে গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত ব্যক্তির বার্ষিক গড় ব্যয় প্রায় তিন লাখ টাকা। একটিভ টুয়েন্টি-ফোরটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন মাদক জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০০২ সালেও বাংলাদেশে মাদকাসক্তরা বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতো। এখন সে ব্যয়ের পরিমাণ ৭/৮ গুণ ছাড়িয়ে গেছে। মাদকের ব্যবহারজনিত এই সব হিসাবে পাঁচ টাকার নোট ব্যবহারের কোন অঙ্ক এখনও কোথাও যোগ হয় নি। ##

 

 



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    ইয়াব বন্ধ হবে কিভাবে ? এর সাথে তো বড় বড় লোকজন জড়িত
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    এগুলো বন্ধ করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ