Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ হয়নি নয় বছরেও

আজ সেই পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আজ সেই পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর-এর বিপথগামী সদস্যরা কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পিলখানায় নারকীয় তান্ডব চালায়। ওই দুদিনে বাহিনীর তখনকার মহাপরিচালকসহ (ডিজি) বিদ্রোহীরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী ও শিশুসহ আরও ১৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যসহ অনেকেই আপনজনদের খুজে ফিরে এ দিনে। বুকের মধ্যে দীর্ঘ কষ্ট নিয়ে আপনজনেরা ছুটে যান শহীদদের কবরস্থানে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শহীদদের কবরস্থান পরিস্কার করাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয় গতকাল।
সূত্র জানায়, পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয় দুটি মামলা। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের নিহতের ঘটনায় দন্ডবিধি আইনে করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনে। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে। গত নয় বছরেও এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। কবে বিচার কার্যক্রম শেষ হবে তা নিদিষ্ট করে বলতে পারছে না আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া প্রসঙ্গে এই মামলার পাবলিক প্রসিকিউশন মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আগামী ১৮ মার্চ এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রয়েছে। প্রতি মাসে দুই দিন করে মামলার শুনানি চলছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে এই মামলার রায় দেয়া সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর বাহিনীর আইনে বিদ্রোহের বিচার করে অনেককেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ছাড়াও আরও ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি। নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিল, তার মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া, সাত বছর করে চারজনকে কারাদন্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়। এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে আরও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছিলেন জজ আদালত। এর মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদন্ড আটজনকে সাত বছরের কারাদন্ড চারজনকে তিন বছরের কারাদন্ড এবং ২৯ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। বিভাগীয় মামলায় চাকরিচ্যুতসহ সাজা দেয়া হয় আরও অনেককে। ২০০৯ সালের নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের পর পুরো বাহিনী বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল। তবে বাহিনীর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলঙ্কিত সেই ইতিহাস ও ক্ষত ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এখনও। বিদ্রোহীদের হাতে নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচি
অন্যদিকে গতকাল বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে শাহাদত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্বে পুস্পস্তবক অর্পন করবেন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনবাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে)। এছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর পিলখানাস্থ বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গে রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক ও শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়গণ, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীগণ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া আজ রোববার দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, পিলখানাসহ বিজিবি’র সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।
বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপি
বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপিবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, প্রতিবারের মতো বিএনপির পক্ষ থেকে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দলীয় চেয়ারপারসনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাবেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ