পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : পেয়ারে পাকিস্তানওয়ালাদের থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছিল, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা এদের হাতে তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। জাতি যেন কোনদিন তাদের ক্ষমা না করে জাতির প্রতি আজকের দিনে আমার এটাই আবেদন থাকবে। মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এই ভাষার চর্চার পাশাপাশি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা শেখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদও দেন তিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারের গুরুত্ব কম দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা সাবজেক্ট নাকি এখন সাবসিডিয়ারি। এই বিষয়টা আমি আগে জানতাম না। এটা কেন, খোঁজ নিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ডিপার্টমেন্ট থাকবে না, বাংলার চর্চা থাকবে না, এটা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ভাষার জন্য আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছেন, সে ভাষা শিখব না কেন, চর্চা করব না কেন, মর্যাদা দেবো না কেন? শুধু একুশে ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষা চর্চা করব, এটা হতে পারে না। মাতৃভাষার চর্চা একান্ত অপরিহার্য।
আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমাদের অনেকে আছেন ইংরেজি বোঝেন না। তার উকিল যা বোঝাবেন তাকে তা বুঝতে হচ্ছে। সেই উকিল ঠিকমতো বোঝাতে পারছেন নাকি আরও কিছু টাকা খসানোর বা পকেট খালি করার জন্য অন্যভাবে বোঝাচ্ছেন তা কিন্তু তার মক্কেল বুঝতে পারেন না। তবে, এখন নিম্ন আদালতে মোটামুটি বাংলায় রায় লেখা শুরু হয়েছে।
একই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকাল দেখা যায়, বিয়ের কার্ড ইংরেজিতে লেখা হয়। বিয়ের দাওয়াত কার্ডে বাংলা কেন থাকবে না? বিদেশিদের জন্য ইংরেজি থাকতে পারে কিন্তু বাংলা কেন থাকবে না? এটা তো ব্যাধির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এগুলো কিভাবে সুরাহা করা যায়, উপায় বের করে ব্যবস্থা নেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আর হ্যাঁ, অন্য ভাষাও শিখতে হবে। অন্য ভাষা শেখার বিরুদ্ধে আমি নই। কিন্তু অন্য ভাষা শিখতে না পারলে উন্নত হওয়া যাবে না, এই ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। জাপানিজরা তাদের নিজের ভাষা চর্চা করে, নিজেদের ভাষার ব্যাপারে সতর্ক থাকে, তারা কী উন্নত নয়? তিনি বলেন, যে ভাষার জন্য আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছেন, সে ভাষা শিখব না কেন, চর্চা করব না কেন, মর্যাদা দেবো না কেন? শুধু একুশে ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষা চর্চা করব, এটা হতে পারে না। মাতৃভাষার চর্চা একান্ত অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে দেখা যায়, বাংলা ভাষা ইংরেজি টোনে বলা হয়, এটা কেন? ১৯৭৫ সালে আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা তখন বিদেশে লেখাপড়া করেছে। তারা বিদেশে থেকেও ভালো বাংলা বলতে পারে। যারা বাংলাদেশে থেকে বড় হয়েছে তারা কেন ইংরেজি ঢংয়ে বাংলা বিকৃত করে বলবে? তিনি বলেন, আবারও বলছি, দ্বিতীয় ভাষাও শিখতে হবে। কিন্তু যে ভাষার জন্য আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছেন, সে ভাষার চর্চা অবশ্যই করতে হবে। এটা পরিবার থেকে শেখানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের হৃদয় থাকে পাকিস্তানে, তারা বাংলাদেশে থেকে সব রকমের আরাম আয়েশ ফল ভোগ করবে আর অন্তরাত্মাটা পড়ে থাকবে ওখানে (পাকিস্তানে)। তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এখন মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন একটি সময় দেখেছি মানুষ নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে সাহস পেতেন না। সরকারি চাকরি পেতে মুক্তিযোদ্ধা কথাটি লিখতেও ভয় পেতেন। কারণ, তাহলে চাকরি পাবেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই অবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, দীর্ঘ ৯ বছর আমরা সরকারে থাকার কারণে এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে মানুষ গর্ববোধ করেন। তারা এখন আর ভীত সন্ত্রস্ত হন না। এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো সামনে আসছে। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়। এমন কোনও অন্ধকারে আমরা যেন আবার না পড়ি। এই পরিবেশ যেন বাংলার মাটিতে আর না আসে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আবার যেন সেই ধরনের বিপদে আমরা পড়ে না যাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে বসে ভাষার আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার দিক-নির্দেশনা দিতেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে তা আদায় করে ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন হয়। ওই শাসনতন্ত্রে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ওই সময় ২১ ফেব্রæয়ারি সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
আমরা যা কিছু পেয়েছি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পেয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সংগ্রামের পথ ধরে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রতিটি অর্জনের পেছনে এদেশের জনগণের ত্যাগ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশকে যেন পাকিস্তানের প্রদেশ বানানোরই চেষ্টা হয়েছিল। তখন পরাজিত শক্তির প্রতি (ক্ষমতাসীনদের) তোষামোদি আমরা দেখেছি। যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ দেয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে চাকুরি করার সুযোগ করে দেয়া।
খালেদা জিয়ার শাসনামলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্টের খুনিদের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে, তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিল, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল, জাতি যেন কোনো দিন তাদের ক্ষমা না করে। তিনি বলেন, যারা আমার মা বোনকে রেপ করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে, যারা এদেরকে মর্যাদা দিয়েছিল, তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপাকে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে কিন্তু জাতি কোনাদিন ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা করবেন না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার আমাদেরকে যেন সেই অন্ধকারের দিকে চলে যেতে না হয়, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে আবার দ্বিধাবোধ করতে না হয়, সেই পরিস্থিতি যেন আর কোনোদিন বাংলার মাটিতে না আসে। সে জন্য আমি সবাইকে বলব, সচেতন থাকতে হবে। আবার যেন আমরা সেই ধরনের বিপদে না পড়ে যাই। পেয়ারে পাকিস্তাানওয়ালাদের কাছ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী রফিকুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় মাছ ইলিশ আজ বাংলাদেশ ইলিশ নামে জিআই পণ্য
অনেক আগে থেকেই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও আমিষের চাহিদা পূরণে ইলিশ মাছ অন্য ভূমিকা রেখে আসছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ আজ ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ নামে একটি ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
এবারের প্রতিপাদ্য ‘জাটকা ধরে করব না শেষ, বাঁচবে জেলে হাসবে দেশ’কে অত্যন্ত সময়োপযোগী মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ মাছ উৎপাদনে স্বংয় সম্পূর্ণ। আমাদের খাদ্য আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ যোগান দেয় মাছ।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা নিধন বন্ধ ও ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সব মানুষকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।