Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চবিতে আরো বেপরোয়া অভিভাবকহীন ছাত্রলীগ

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চবি সংবাদদাতা : দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাÐে মেতে আছে সংগঠনটি। ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে প্রশাসন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারাও কার্যত নির্লিপ্ত। এ অবস্থায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে। সেশন জট বৃদ্ধির শঙ্কায় বেড়েছে উৎকণ্ঠা। ক্যাম্পাসে অনেকেই বলছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কর্তৃক চবি ছাত্রলীগের কমিটি প্রথমে স্থগিত পরে বিলুপ্ত ঘোষণা করা সত্তে¡ও এখন আর কেউ কারও কোনো পরোয়া করছেন না। নেতা-কর্মীরা যে যার ইচ্ছেমতো ক্যাম্পাসে দাপট দেখাচ্ছেন। বাড়ছে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা, আর্থ-স্বার্থগত কর্মকাÐ আর দ্ব›দ্ব-সংঘাত। যদিও চবি ছাত্রলীগের এতোসব অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘চবিতে কোনো ছাত্রলীগ নেই’ বলেই দাবি করে আসছে। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে এর দায়ভার নিচ্ছেন না। বাস্তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবকহীন ছাত্রলীগ হয়ে উঠেছে আরও বেপরোয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকের মাথায় অস্ত্র ঠেকানো, ভিসির কার্য্যালয়, প্রক্টর ও ডিন অফিস ভাঙচুর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি শিক্ষক বাস ভাঙচুর, শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা আদায়, নিজেদের মধ্যে কলহ-কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, বিভিন্ন পদে নিয়োগে তদবির, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী এমনকি সমর্থকদের নিপীড়ন-বিতাড়নসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন অনৈতিক দাবি আদায়ের নামে ক্লাস ও পরীক্ষায় বাধাদান, চবি শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কাটাসহ শিক্ষক বাস বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগও আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। এসব নৈরাজ্যের কারণে গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে যেন আতঙ্কপুরীতে। বিঘিœত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন।
জানা গেছে, নিজেদের মধ্যে আধিপাত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে বার বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার কারণে গত বছর ২০১৭ সালের ৪ মে চবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি স্থগিত হওয়ার পরেও তারা দমেনি। বরং নতুন কমিটিতে স্থান পেতে এবং ক্যাম্পাসে স্বার্থগত বিভিন্ন কারণে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে করে গত ৬ ডিসেম্বর’১৭ই চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি বিলোপের পর আরও বেসামাল হয়ে টেন্ডারবাজি, কর্মচারী নিয়োগে তদবির, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ হরেক নেতিবাচক ঘটনাবলীতে ক্যাম্পাস অস্থির করে তুলেছে।
এরমধ্যেই গত ২২ ফেব্রæয়ারি (বৃহস্পতিবার) টেন্ডার না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছৈয়দ জাহঙ্গীর ফজল নামে এক প্রকৌশলীকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহে ৪ দিনের ব্যবধানে ২ শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ ফেব্রæয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাÐব চালায় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দেয়, শিক্ষক বাসের চাবি ছিনিয়ে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলায়, সাংবাদিকের গাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাস মিলিয়ে ১৬টি গাড়ি ভাঙচুর করে। ১২টি ক্লাস রুমসহ ক্যাম্পাসে চালায় ব্যাপক ভাঙচুর। এ অবস্থায় বন্ধ থাকে ক্লাস ও পরীক্ষা। অঘোষিতভাবে অচল হয়ে পড়ে চবি ক্যাম্পাস। ভীতি-শঙ্কায় এখনও তটস্থ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকদের মাঝে বিরাজ করছে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়েজিত র‌্যালিতে আগে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় ২৭ জন। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলে কয়েক ঘণ্টা। এসময় সোহরাওয়ার্দী ও শাহজালাল হলের ১০টি কক্ষ এবং দুটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গত ২১ জানুয়ারি হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের ৩ জন কর্মী আহত হন। চবি মেডিক্যাল সেন্টারে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ২৪ জানুয়ারি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে হামলা করে চবি ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীসহ ১০ জন আহত হয়। আহতদের চবি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্রলীগের একাংশের আন্দোলনের সময়ে গত বছর ৫ নভেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিনকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন নেতা-কর্মীরা। এই হুমকির প্রতিবাদে শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। হাটহাজারী থানায় জিডি করেন। অভিযোগ ও জিডি করায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের একাংশ আমির উদ্দিনকে ‘অবৈধভাবে’ বিশ^বিদ্যালয় নিয়োগ দেয়ার অজুহাত তুলে তার অপসারণ দাবিতে প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরই তাÐব চালায় ছাত্রলীগের এই অংশটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয়, প্রশাসনিক ভবনসহ বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর করে। পরে শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেয়। প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেয় তালা। বিগত ১৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ হত্যা মামলার আসামী সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে, শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করে অচলাবস্থা। এভাবে ঘটে চলেছে একের পর এক ঘটনা। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতা এবং সেশন জটবৃদ্ধির শঙ্কা থেকে পরিত্রাণ চান। চান শান্ত-স্বাভাবিক ক্যাম্পাস।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ