Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চতর বইয়ের পাঠক সীমিত : গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা

অমর একুশে বইমেলা

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এহসান আব্দুল্লাহ : সাহিত্য মানে শুধু গল্প কবিতা আর উপন্যাসই নয় বরং এর পরিধি আরো ব্যাপক। প্রচলিত গল্প-উপন্যাসের বাহিরেও প্রতিবছরই বইমেলায় আসে ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, রাজনৈতিক ইতিহাস, গবেষনাধর্মী প্রবন্ধ ও তাত্তি¡ক কিছু বই। তবে এসব বইয়ের পাঠক সংখ্যা তেমন একটা দেখা যায়না পুরো বইমেলা ঘুরে। অধিকাংশ পাঠকই খুজতে থাকেন বেস্ট সেলার কোন গল্প, উপন্যাস অথবা কবিতার বই।
ইতিহাসের নানা পর্যায় ও পাঠ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, কমিউনিজম ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, ডানপন্থী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের নানা আন্দোলনের উপর প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বইয়ের উপর খোজ নিয়ে জানা যায় বইগুলো মেলায় প্রকাশিত অন্যান্য বইয়ের তুলনায় কাটতি হচ্ছে কম। এসব বইয়ের অধিকাংশ গ্রাহকই বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া কিছু তরুণ আর শিক্ষকসমাজ। এর বাহিরেও মধ্যবয়স্ক কিছু গ্রাহক আগ্রহ দেখান এসব বইয়ের প্রতি। মেলার অন্যান্য স্টলের তুলনায় এসকল স্টলের সামনে পাঠকদের ভীড়ও তেমন একটা চোখে পড়েনা কারো।
এসকল বইয়ের বিপণনকারীরা বলছেন, এইসব বইয়ের পাঠক তেমন একটা হয়না। যা হয় তা মেলার অন্যান্য গ্রাহকদের তুলনায় হয়তোবা শতকরা হিসেবে দশের কিছু বেশি হবে। তবে আশার কথা হলো যারা পড়ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণরা রয়েছে।
কেন এধরণের বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণরা এমনটা জানার জন্য কথা হচ্ছিল একটি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আসলে এইধরণের বই পড়তে প্রচুর সময় লাগে। শুধুমাত্র রিডিং পড়ে গেলে কিছুই বুঝা যায়না। একটি বই পড়ার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে আরো কয়েকটি বই পড়তে হয়। তাই অনেকে অতটা চিন্তাশক্তি খরচ করতে চায়না বলে এইসব বই থেকে দূরে থাকতে চায়।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসির আব্দুল্লাহ বলেন, প্রচলিত ধারার বইয়ের বাহিরে এসব বই আসলে আমাদের চিন্তার খোরাক যোগায়। সেক্ষেত্রে তরুণদের উচিত ইতিহাসকে জানা ও এর নিগুঢ় তত্ব অনুসন্ধান করা। সেক্ষেত্রে এসকল বিপ্লব, সংগ্রাম, দর্শন ও রাজনীতির বইয়ের কোন তুলনা নেই। তবে অধিকাংশের এসব বইয়ের প্রতি বিমুখতার কারন হিসেবে তিনি বলেন, আসলে আমার মনে হয় বর্তমান পাঠকরা ¯্রােতের বিপরীতে চলতে অনেকটা শঙ্কায় ভুগতে থাকেন সে চিন্তা থেকে তাদের এই ধরনের মানসিকতা তৈরী হতে পারে। আর এ সকল বই পড়তে হলে প্রচুর সময় ব্যয় হয় এবং চিন্তার পরিশ্রম হয় বলে অনেকেই এড়িয়ে যান।
গতকাল তরুণ লেখিকা লাতিফুল খাবিরার কাব্যগ্রন্থ অরণীর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে বইমেলার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন কেন্দ্রে। এতে উপস্থিত ছিলে কবি আব্দুল হাই শিকদার। মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১৮২টি।
সকাল ১০:৩০টায় মেলার মূল মঞ্চে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূল মঞ্চে ছিল দেশ বিভাগের সত্তর বছর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমানুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সভাপতিত্ব করেন কামাল লোহানী। প্রাবন্ধিক বলেন, দেশভাগের নানা মাত্রার মধ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা যেমন একটি, মানুষের মনস্তত্তে¡ বিভাজনও আর একটি দিক। দেশভাগের যে কোন অংশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সংখ্যালঘু মানুষ। আবার নতুন রাষ্ট্রে বিকাশের পথও খুঁজে নেন অনেকে। দেশভাগের সত্তর বছর পেরিয়ে আমাদের প্রত্যাশা-যতই ভৌগলিক বিভাজন থাকুক, হৃদয়ে হৃদয়ে যেন কাঁটাতারের বেড়া না গড়ে ওঠে। আলোচক সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, দেশভাগ সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের জন্যই এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। আপন ভিটেমাটি থেকে মানুষের উচ্ছেদ হওয়ার ক্ষত যেমন কখনোই কোন ক্ষতিপূরণে মুছে যাবার নয়। সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে দেশভাগ রেখে গেছে গভীর অভিঘাত। চলচ্চিত্র ও চিত্রকলাতেও দেশভাগের ছায়া পড়েছে। দেশভাগে সবসময় সুবিধা নেয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই পরিচালিত হোক আমাদের সকল মানবিক লড়াই। গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য অলকানন্দা প্যাটেল রচিত ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, সুফি মুস্তাফিজুর রহমান রচিত ‘বাংলাদেশের প্রতœতাত্তি¡ক উত্তরাধিকার’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্স, মঈন আহমেদ সম্পাদিত ‘মিনি বিশ্বকোষ পাখি’ গ্রন্থের জন্য সময় প্রকাশনকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮ এবং ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কথাপ্রকাশ-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-র সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পুরস্কার পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ