Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হুমকির মুখে কালাপাহাড়িয়া

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো: আল-আমিন ভূইয়া, আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদী বেস্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রতিবছরই ভাঙনের শিকার হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। এসব ম‚ল্যবান জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে এ এলাকার অসংখ্য কৃষক। চলতি বছরের শুরু থেকেই মেঘনা নদীর আগ্রাসী রূপ যেনো ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইউনিয়নের মধ্যারচর গ্রামের পাশ দিয়ে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদীভাঙন কবলিত একটি জায়গা দেখতে আসার পথে কয়েকটি জমির আল, গাছপালা নদীতে ভেঙে পড়তে দেখা গেল।
এক সপ্তাহ আগে মধ্যারচর গ্রামের আলমাছ নিজের জমি হারিয়েও নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি হাত দিয়ে দেখালেন, ওই যে দ‚রে যেখানে পানি পাক খাচ্ছে, সেখানেই ছিল তার শস্যের ক্ষেত। সোনালী সবুজে ভরা বিস্তৃত ক্ষেতে ছিল শস্য , কিন্তু এখন আর তার কিছুই নেই।
তিনি বলছিলেন, একমাস ধরেই এখানে একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করে। জমির কাছাকাছি চলে আসায় জমির আশা ছেড়ে দেন তিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে এসে দেখেন তার শস্য জমি নদীতে তলিয়ে গেছে।
নদীতে ঘরবাড়ি জমিজমা হারানোর পর, দেখার পর নিম্ন আয়ের, মধ্যম আয়ের বেশিরভাগ মানুষই ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে।
কয়েকবছর ধরেই কালাপাহাড়িয়ার মেঘনার তীরবর্তী মধ্যারচর, বিবিরকান্দী, ডেঙগুরকান্দি, প‚র্বকান্দি অংশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা ভেঙে গেছে। এমন কি বিবিরকান্দি মৌজার যৎ সামান্য বাদে পুরোটাই নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে। আরাকান্দা ও সোনাকান্দা নামের দুটি গ্রাম মেঘনা নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। নানা চেষ্টার পর র্প‚বকান্দি গ্রামটি রক্ষা করা গেলেও মেঘনার তীরবর্তী অন্যান্য গ্রামের চিত্র একেবারেই উল্টো।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, এই এলাকার ভাঙন ঠেকাতে কখনোই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আনছর আলীর জমিজমা গতবছর মেঘনায় তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন এসে তিনি অথৈই পানির দিকে তাকিয়ে নিজের জমির স্থানটি চেনার চেষ্টা করেন।
মেঘনা নদীর বুকে হাত দেখিয়ে জাহিদ আলী বলছিলেন, ‘’ওই যে ওইখানে আমার বোরো ধানের ক্ষেত ছিল। বহু বছর আগে এ জমিটি আমার বাজানে কিনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন আর তার কিছুই নেই। তারও সামনে আমাদের আরেকটি জমি ছিল। সেটি চারবছর আগে নদী নিয়ে গেছে।”
অনেক বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো এই এলাকায় পুরোদস্তুর ভাঙন শুরু হয়েছে। আর যেকোনো সময় জমিজমা, রাস্তাঘাট হারানোর আতংকে আছেন এলাকাবাসী।
আইয়ুব আলী বলছিলেন, ‘‘নদী যে এত কাছাকাছি চলে আসবে, তা কারও কল্পনায়ও ছিল না। আমাদের জমি এখনো ভাঙনের শিকার হয়নি। কিন্তু নদী দুই আড়াইশ গজ দ‚রে রয়েছে। তাই আমরাও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভয়ে থাকি, নদী পাড়ে এসে বসে থাকি। কারণ কখন কোনদিকে নদী যাবে, তা বোঝা যায় না।’’
তাদের দাবি, তাদের জন্য সরকারি কোন রিলিফের দরকার নেই, বরং কর্তৃপক্ষ নদী ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী বলছেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে চাল ডালের মতো কোন সাহায্য চাই না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, নদী ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমাদের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বেঁচে যাবে। তাহলেই আমরাও বেঁচে যাবো।’’
নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে হতাশ আমেনা বেগম বলছিলেন, ‘এখন আবার তাকে অন্যের জমিতে ফসল ফলাতে হবে। আবার মানুষ ফসল করার জন্য জমিও দিতে চাইছে না।’
কালাপাহাড়িয়ার মেঘনাপাড়ে আমেনা বেগমের মতো অনেকের চোখে শ‚ন্যতা, কারণ সামনে কি রয়েছে, তা তাদের কারোই জানা নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে নদী ভাঙন রোধে শীঘ্রই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এলাকার ম‚ল ভ‚-খন্ডের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
নদী ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন নদী ভাঙনের কথা স্বীকার করে জানান, এই নদী ভাঙন রোধে আমি মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।
আড়াইহাজার ইউ এন ও সুরাইয়া খান জানান, কালাপাহাড়ীয়া নদী ভাঙন হচ্ছে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি, যদি নদী ভাঙন দেখা-দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিবো।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এ জি) শামসুল আলম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কালাপাহাড়ীয়ার দায়িত্বে আছেন এস, ও মাহমুদ। আপনি মাহমুদ এর সাথে কথা বলেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগীয় সেকশন অফিসার (এস.ও) মাহমুদ বলেন, এটা আমার স্যার সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এ জি) শামসুল আলম সাহেব বলতে পারবেন। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারায়ণগঞ্জ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ