Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে এই পুলিশিং সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া

কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম নগরীতে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে ‘কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশের’ সদস্যরা। তারা প্রকাশ্যে যানবাহন চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। যানজট ও সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় এদের রাস্তায় নামানো হয়। অথচ এ কাজে কোন আগ্রহ নেই তাদের। তারা ব্যস্ত চালক ও সহকারীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ে। এতে করে সড়কে শৃঙ্খলা আসেনি বরং তাদের উৎপাতে কোন কোন মোড়ে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ছে। কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের অনেকে আবার ট্রাফিক সার্জনদের ‘ক্যাশিয়ার’ এর ভূমিকায় রয়েছে। নিজের চাঁদা তোলার পাশাপাশি এরা ট্রাফিক পুলিশের জন্যও চাঁদা তুলছে। কেউ আবার গণপরিবহনের লাইনম্যান হিসাবে সমিতির নামেও চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত। কমিউনিটি পুলিশের পোশাক পরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।
লন্ডন মেট্টোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট পিলের গণমুখী পুলিশিংয়ের মূলনীতি হতেই মূলতঃ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণা আসে। কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে অপরাধ সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও জনগণের যৌথ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার একটি নতুন পুলিশিং দর্শন। এ দেশেও পুলিশী কর্মকাÐে জনগণের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকরভাবে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের এ ধারণা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ক্রমবর্ধমান যানজট ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতেই কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশ মাঠে নামানো হয়। তবে তাদের এ বেপরোয়া দৃষ্টিকটূ আচরণ নতুন এই পুলিশিং ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে গণমানুষের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগের হিসাবে মহানগরীতে দুই শতাধিক কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছে। প্রথমে নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম মার্কেট এলাকায় সড়কে এদের নিয়োজিত করা হয়। এখন নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে এদের দেখা যায়। ট্রাফিক পুলিশের মতো এদের কোন ইউনির্ফম নেই। নিজেদের পোশাকের উপর কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশ লেখা একটি জ্যাকেট পরেই এরা দায়িত্ব পালন করেন। এদের বেশির ভাগ হতদরিদ্র, কমশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। কেই আবার শারিরক প্রতিবন্ধি। মূলত এর মাধ্যমে তাদের আয়ের একটি পথ বের হয়েছে। দায়িত্ব পেয়ে অনেকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করছেন। তবে বেশিরভাগ সদস্যই নানারকমের চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নগরীর প্রতিটি মোড়েই এদের চাঁদা আদায়ের দৃশ্য মানুষের চোখে পড়ে। নগরীতে গণপরিবহন সঙ্কটকে পুঁজি করে ব্যাটারি চালিত টমটম, অটোরিকশার মতো ছোট টেম্পু চলছে ব্যাপকহারে। এসব ছোট পরিবহনই তাদের প্রধান টার্গেট। ট্রাক, কার্ভাডভ্যান, বাস, মিনিবাস থেকেও তারা চাঁদা নেয়।
নগরীর ইপিজেড মোড়ে দায়িত্বরত কমিউনিটি পুলিশ সদস্য নুরুল আলম বলেন, মাসে চার হাজার টাকা বেতন দেয়া হয় তাদের। এ সামান্য বেতনে পরিবার চালানো অসম্ভব। এ কারণে পরিবহন চালকদের কাছ থেকে তিনি সাহায্য হিসেবে টাকা নেন। তিনি বলেন, সবার কাছে চাই, কেউ খুশি হয়ে দেয় কেউ দেয় না। এটাকে তো চাঁদাবাজি বলা যায় না। বিমানবন্দর থেকে ইপিজেড মোড় পর্যন্ত নিয়মিত টেম্পো চালান আবুল হাশেম। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের মোড় থেকে টেম্পো ছাড়তেই কমিউনিটি পুলিশ সদস্য এসে হাত বাড়ায়। ১০ টাকা না দিলে টেম্পো ছাড়তে দেয় না। আবার সিমেন্ট ক্রসিং মোড়েও ১০ টাকা দিতে হয়। মাঝেমধ্যে ইপিজেড মোড় ঘোরার সময়ও কমিউনিটি পুলিশের আবদার পূরণ করতে হয়। পরিবহন চালকরা জানান, মোড়ে এসে টেম্পো থামতেই কমিউনিটি পুলিশ সদস্যরা হাত বাড়িয়ে দেয়। চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত তারা গাড়ি ছাড়তে দেয় না। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানবাহনের জটলা লেগে যায়। ট্রাফিক পুলিশের কাছে নালিশ করেও কোন প্রতিকার মিলেনা। কারণ রাস্তায় তারা একে অপরের সহযোগী।
সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে এক কমিউনিটি পুলিশ সদস্যকে টেম্পো চালকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নিয়ে তা সিøপে লিখতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এ চাঁদা তার নিজের না, পুলিশের জন্য নিচ্ছেন। নগরীর সিমেন্টক্রসিং মোড়, কাটগড়, ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, আগ্রাবাদ বাদামতল, দেওয়ানহাট, কাজির দেউড়ি, নিউমার্কেট, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, চকবাজার, বড়পুল, অলংকার, একে খান গেইট, বহদ্দারহাট মোড়সহ প্রায় প্রতিটি মোড়ে এদের চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় নগরীতে কমিউনিটি পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। তারা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে দায়িত্ব পালন করছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে এজন্য তাদের কোন বেতন-ভাতা দেয়া হয়না জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবহন মালিক সমিতিগুলো তাদের কিছু ভাতা দেয়। চাঁদাবাজির বিষয়টি তারা জানা নেই বলে জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নগরীতে পরিবহন মালিকদের একাধিক সংগঠন কমিউনিটি ট্রাফিক সদস্যদের মাসিক ভাতা দেয়। তবে এভাতা নিয়মিত পান না অনেকে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ