পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচার থেমে নেই। ভারতের পর এবার চীনের পতিতালয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বাংলাদেশী তরুণীরা। বিয়ের নামে প্রতারণা করে তরুণীদের চীনে বিক্রি করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ কাজের সঙ্গে উত্তরার এম এন্টারপ্রাইজসহ ১০টি ম্যারেজ মিডিয়ার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। গত ৬ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ১৭ জন তরুনীকে চীনে পাচার করা হয়েছে। সম্প্রতি ডিবি পাচার হওয়ার সময় সুবর্ণা চাকমা নামে এক তরুণীকে উদ্ধার করেছে ডিবি। এসময় চায়না ৩ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, চীনে নারী পাচার চলছে অভিনব কায়দায়। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের কাজ করছে। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে দু’দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
অভিনব এই মানবপাচারের কৌশল নিয়ে তদন্ত করছেন ডিবির পরিদর্শক মো. আরমান আলী। তিনি বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের জন্য চীনে যাওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে মামলাটি তদন্তে চীনে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তরা থেকে হাতেম নামে একটি ম্যারেজ মিডিয়ার মালিককে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ী তরুণীদের বিয়ের নামে চীনে পাচার করার তথ্য পেয়েছে ডিবি। হাতেম ডিবিকে জানায়, চাইনিজদের সঙ্গে বাংলাদেশি পাহাড়ি মেয়েদের বিয়েতে তারা ৩০ হাজার টাকা করে আয় করে। এভাবে গত ৬ মাসে পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কমপক্ষে ১৭ জন পাহাড়ি তরুণীকে বিয়ে করেছে বেড়াতে আসা চীনা নাগরিকরা। এরপর তাদের নিয়ে গেছে চীনে। এসব তরুণীদের সবাই অল্প শিক্ষিত। ৯ম শ্রেণি থেকে এসএসসি পাস। সহজ-সরল এসব দরিদ্র পাহাড়ি মেয়েদের এভাবে বিয়ের ফাঁদে ফেলে পাচার করা হচ্ছে চীনে। চীনে নিয়ে ৩-৪ মাস সংসার করার পর পতিতালয়ে বিক্রি করা হচ্ছে তাদের। অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি মেয়েদের।
স¤প্রতি সুবর্ণ চাকমা নামের এক পাহাড়ি তরুণীকে পাচার করার সময় উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সঙ্গে গ্রেফতার করে এক চীনা নাগরিকসহ ৩ জনকে। সেই সূত্র ধরে বিয়ে করে চীনে যাওয়া মেয়েদের খোঁজ নেয়া শুরু করে তারা। তদন্ত উঠে এসেছে, ‘পাচার হয়েছে পাহাড়ি মেয়েরা।
সুবর্ণ পাচারের শিকার হচ্ছে বুঝতে পেরে থানায় একটি মামলা করে তার পরিবার। মামলা নিয়ে ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে ডিবি অভিযান চালিয়ে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর রোডের ৬৮ নম্বর বাসার ৬ তলা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা এভাবে মারশী চাকমা, ইলা চাকমা ও হেলেনা চাকমাসহ বেশ কয়েকজন নারীকে চীনে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তদন্ত করে ডিবি জানতে পারে, বাংলাদেশের ম্যারেজ মিডিয়াগুলো পাহাড়ি মেয়েদের তথ্য সংগ্রহ করে চীনা মিডিয়াগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে চীনা পুরুষরা বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে ওই সব মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিয়ে করে। এছাড়া পাহাড়িরা কম শিক্ষিত, সহজ-সরল এবং নিম্ন আয়ের। তারা অতি অল্পতে মানুষকে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করতে ভালবাসে। তাই চীনা যুবকদের বিয়ে করতে অত কষ্ট হয় না। বিয়ের পর তারা চীনা দূতাবাসে গিয়ে অনুমতি নিয়ে তাদের চীনে নিয়ে যায়।
তদন্ত ভিত মজবুত করতে বাংলাদেশ থেকে চীনে যাওয়া দুই পাহাড়ি তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিবি। দিনে কয়েক দফা তরুণীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমো’তে ভিডিও কল করে। তদন্তের কৌশল হিসেবে ডিবির একজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে সকালে, দুপুরে, রাতে এবং মধ্য রাতে কথা বলেন।
ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা (দুই পাহাড়ি তরুণী) ফোনে বলেছে ভালো আছে। তবে আমাদের কাছে একটা বিষয় অবাক লেগেছে। যখনই সেই তরুণীদের ভিডিও কল দেয়া হয় তখনই তাদের পেছনে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে ক্যামেরায় দেখা যায়। এমন মনে হয় তারা আমাদের দেখানোর জন্য ভিডিও কলের সময় তরুণীদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
কয়েকজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে ডিবি জানতে পারে, সে দেশের পতিতালয়ে অধিকাংশ নারী নেপাল এবং মিয়ানমারের। তবে চীনা পুরুষরা একরাতের সঙ্গী হিসেবে চীনা মুখ বেশি পছন্দ করে। বাংলাদেশের পাহাড়ি মেয়েদের সঙ্গে চীনের মেয়েদের চেহারা মিলে যাওয়ায় তাদের চাহিদা বেশি।
২-৩ বছর আগেও চাইনিজ ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা বিয়ের জন্য লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে যেতেন। সেখানকার অনেক নারী প্রতারণা ও পাচারের শিকার হওয়ায় সে দেশের সরকার বিদেশিদের বিয়ে করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাই চাইনিজ নাগরিকরা বিয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে ৬০ নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে ৩৫ জন নারীকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে বিভিন্ন দেশে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার ৯ জন নারীকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।