পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : যথাযথ মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ভাষা শহিদ ও ভাষা সৈনিকদের স্মরণের মাধ্যমে পালিত হয়েছে ভাষা শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ২০১৮ এর প্রথম প্রহর।
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে জাতির পক্ষ থেকে শহিদ মিনারের বেদিতে সর্বপ্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদ ও ভাষা সৈনিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় সাউন্ড সিস্টেমে বেজে ওঠে অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি...’।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
পরে, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় শহিদ মিনারে মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবর্গ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপরপরই বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিরোধী দলীয় নেতার পর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতৃবৃন্দ, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক. ড. মো. আখতারুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এসময় সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও সমিতির অন্য নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসিন ও সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান নয়ন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি মীর আরশাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, দপ্তর সম্পাদক রায়হানুল ইসলাম আবির, কার্যকরী সদস্য মুনির হোসাইন, মাহদী আল মুহতাসিম।
এরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন।
পরে পর্যায়ক্রমে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউজে), ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক ফোরাম, ইয়ুথ জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলবে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত।
অমর একুশে ফেব্রæয়ারী বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি বেদনার দিন হলেও মাতৃভাষা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমা হিসেবে এটি উদ্ভাসিত হয়ে থাকবে।
সেই ত্যাগের স্বীকৃতিসরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কতৃর্ক এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনা করা হয়। সেই থেকে আজও জাতিসংঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আজ মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পূর্ণ হলো। একুশে ফেব্রæয়ারি শোকাবহ হলেও এর যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে, তা পৃথিবীর বুকে অনন্য। কারণ বিশ্বে এ যাবতকালে একটি মাত্র জাতিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। আর সে জাতি হলো বাঙালি।
১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রশাসনের জারিকৃত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে মিছিল নিয়ে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের এ দুর্বারগতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, রফিক ও বরকতগুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন ‘মায়ের ভাষা’র মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নব প্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।
অমর একুশে উপলক্ষ্যে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় চারস্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ মিনারকে ঘিরে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, আজিমপুর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
আজ ২১ ফেব্রæয়ারি সরকারি ছুটির দিন। আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান স¤প্রচার করছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।