Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার চায় বাংলাদেশের চা গুণগত মানে উন্নত হয়ে সারাবিশ্বে নিজের স্থান করে নেবে। আমরা চাই আমাদের চা সারাবিশ্বে নিজের স্থান করে নিক। আরো উন্নত হোক এবং চা গবেষণা ইনস্টিটিউট চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্যও গবেষণা আরো জোরদার করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত চা ছাড়াও চা থেকে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, যেমন- সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট প্রভৃতি এবং খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে টি কোলা, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
গতকাল রবিবার সকালে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী ২০১৮’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) যৌথভাবে তিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। দেশ-বিদেশের চা প্রেমীদের কাছে চায়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে প্রদর্শনীতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা উৎপাদনের জন্য যে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি আমরা নিচ্ছি তা ছাড়াও যে চা গাছটা থেকে যাচ্ছে তা বহুমুখীকরণে আমাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড চা ও চা জাত পণ্য বহুমুখীকরণের উপর কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে মূল্য সংযোজিত বিভিন্ন ধরনের চা উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। সাতকড়া চা, লেমন চা, মশলা চা, জিনজার চা, তুলসি চা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার ও পেস্টিসাইডস ব্যবহার না করে অর্গানিক পদ্ধতিতেও চা উৎপন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাগানে সিটিসি বø্যাক টির পাশাপাশি গ্রীণ টি ও অর্থোডক্স টি তৈরি করা হচ্ছে। চায়ের মোড়কজাত ও বাজারজাতকরণে এসেছে নতুনত্ব। বিভিন্ন কোম্পানি আকর্ষণীয় মোড়ক, সিলিন্ডার ও টি ব্যাগে চা বাজারজাত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ভ্যালু এডেড চা উচ্চমূল্যে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। চা গাছের পোকা মাকড় দমনে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করাসহ ফ্লেভার্ড চায়ের বিষয়েও গবেষণা চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এতে করে চায়ের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এর গুণগত মান আরো উন্নত হবে।
ধানের বিভিন্ন প্রজাতির মত ক্ষরা সহিষ্ণু বা অল্পবৃষ্টি সহিষ্ণু চা উৎপাদনের দিকেও সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি চা শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্যও বাগান মালিকদের প্রতি আহŸান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনিই পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ অঞ্চলে চাষকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং সে সরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়াতেই পঞ্চগড়ে চা চাষের শুরু। আজকে এই চা ইংল্যান্ডের হ্যারডসেও পাওয়া যাচ্ছে।
মাটির রকম ভেদে চায়ের স্বাদ ভিন্ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার এক জায়গার চায়ের সঙ্গে আরেক জায়গার চা বেøন্ড করেও খাওয়া হয়। খুব কড়া চায়ের জন্য আসাম টি এবং সুগন্ধি চা হচ্ছে দার্জিলিং টি। শ্রীলংকায় হয় মসলা চা, সর্দি-কাশিতে এটি খুবই ভাল শরীরের জন্য। আসামের সঙ্গে দার্জিলিং চা মিক্স করে খেতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দ করেন বলেও উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানগুলো পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জাতির পিতার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (জাতির পিতা) ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ থেকে ৩০ লাখ রুপি ঋণ নিয়ে চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করেন এবং সেগুলো চা বাগানগুলোকে প্রদান করে সহজ শর্তে মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ দেন।
চা বাগানের শ্রমিকদের বঙ্গবন্ধু নাগরিকত্ব ও ভোটের অধিকার প্রদান করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চা বাগানের মালিকদেরকেও ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সংরক্ষণের অনুমতি প্রদান করেন। জাতির পিতার যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে চা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্য।
আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার আর্দশ অনুসরণ করে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পুনরায় চা শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা ‘চা আইন ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি।চা শিল্পের উন্নয়নে সরকার ২০১৬ সালে ‘উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প’ শিরোনামে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশে বর্তমানে চায়ের উৎপাদন প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ সালে দেশে চায়ের মোট উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ১৪ কোটি কেজি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চা বাগানে কর্মরত গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং অন্যান্য নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যথাসম্ভব দ্রæততার সঙ্গে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চা বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চায়ের অব্যাহত চাহিদা মেটাতে আমরা ‘ক্ষুদ্র চা চাষ প্রকল্পে’ উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারি, দিনাজপুর, লালমনিরহাট এবং পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্র চা চাষ প্রকল্প ব্যাপক বিস্তার ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বোস এবং চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান আর্দাশিল কবির অনুষ্ঠানে বিটিবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। দেশের চা শিল্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থল থেকে মতিঝিলে ৩০তলা বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু চা ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে চায়ের নতুন জাত ‘বিডি ক্লোন-২১’ অবমুক্ত এবং ৭টি ক্যাটাগরিতে চা উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন প্রধানমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • ইমরান ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:১৪ এএম says : 0
    এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন খন্দকার ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    আসলেই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ