Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের এক এসআইয়ের কান্ড : পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বিমানে

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টর : গভীর রাত। ঘড়িতে তখন প্রায় দেড়টাা। পুলিশের পোষাক পড়ে বিমানের সিটে বসে আছেন একজন উপ-পরিদর্শক। রাত দুইটায় বিমান ফ্লাই করার কথা। কিন্ত পাইলট নিরাপত্তা আশঙ্কায় পুলিশের পোষাক পড়া অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে নিয়ে ফ্লাই করতে অস্বীকৃতি জানান। নিরাপত্তা বিঘœ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। যাত্রীদের মধ্যে ছড়িযে পড়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। বিমান ছাড়তে বিলম্ব হতে পারে এমন আশঙ্কায় যাত্রীরাও পাইলট ও ক্রুদের সাথে কথা বলে বিষযটি জানতে চান। পরবর্তীতে বিমানের পাইলট ও তার সহযোগীরা জানতে পারেন পুলিশের পোষাক পড়া ব্রক্তিটি কাছে কোন পাসপোর্ট-ভিসা নেই। এতে পাইলট আরো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বিমান ফ্লাই না করে ওই ব্যক্তিকে আটক করার দাবী জানান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা বিমানের ভিতরে গিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নামিয়ে নিয়ে আসেন। পরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের রাখা হয়। এঘটনায় বিমানবন্দরে তোলপাড় শুরু হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নে ওঠে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বিষয়টি দামাচাপা দিতে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থার কাছে হস্তান্তর না করে গতকাল দুপুরে পুলিশের কাছেই পিরিয়ে দিয়েছে। এনিয়ে ইমিগ্রেশন এপিবিএন ও সিভিল এভিয়েশনের বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে তোলপাড় চলছে।
গত শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ব্যাংককগামী টিজি-৩৪০ উড়োজাহাজটির শনিবার রাত দুইটার সময় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে রাত তিনটার দিকে উড়োজাহাজটি এক ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছাড়ে।
বিমানবন্দর সুত্র জানায়, আত্মীয়কে এগিয়ে দেয়ার কথা বলে পুলিশের পোশাক পরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককগামী থাই এয়ারওয়েজের বিমানে উঠে বসেছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান। বিষয়টি ধরা পড়লে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ রয়েছে বলে পাইলট বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এক ঘণ্টা দেরিতে উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ে।
আলোচিত এসআই আশিকুর রহমান ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) বদলি হয়েছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ বলে তিনি বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও বিমানবন্দরে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে চেষ্টা করে গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যপারে জানতে চাই শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশের পোশাকের এ ধরনের অপব্যবহার খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যখন অনেক চেষ্টার পরে একটা ফল (যুক্তরাজ্যের কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার) পেতে যাচ্ছি, তার আগের দিন পুলিশ কর্মকর্তার এ ঘটনা খুবই অনাকাঙিক্ষত। আমরা পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের কাছে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করব। আমরা একদিকে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর এর মধ্যে ইউনিফরমধারী কেউ যদি এ রকম করেন, তাহলে তো চলবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যাবে না।
তিনি বলেন , বিষয়টি খুবেই উদ্বেগের। ইতোমধ্যেই থাইল্রান্ডে এ ব্যপারে একটি খারাপ বাতৃা চলে গেছে, যা আমাদের জন্য বড়ই ক্ষতিকর।
১০ শর্তে প্রায় দুই বছর পর গতকাল রোববার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে বাধা কাটে। নিরাপত্তাসহ কয়েকটি কারণে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যেই শনিবারের এ ঘটনা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিব্রত করেছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শনিবার রাতে রেঞ্জ পুলিশের নীল ইউনিফরম পরে এসআই আশিকুর রহমান বিমানবন্দরে ঢোকেন। কর্মকর্তারা তাঁকে আটকালে তদন্তের প্রয়োজনে ভেতরে যাওয়া প্রয়োজন বলে তিনি গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে তাঁকে আবিষ্কার করা হয় থাই এয়ারওয়েজের ভেতরে। বিমানটি তখন উড্ডয়নের প্রস্তুতিত নিচ্ছিল। এ সময় বিমানে তাঁর বেআইনি অবস্থান শনাক্ত হলে বিমানকর্মীরা তাঁকে নামিয়ে আর্মড পুলিশের হেফাজতে দেন। বিমানটির উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। ভ্রমণের ন্যূনতম কাগজপত্র ছাড়া বিমানে কারও উঠে বসার পরে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান ক্যাপ্টেন। এরপরে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দরের লোকজন বিমানটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেনদরবারের পরে তিনি বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন।
আটকের পর ওই এসআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি তাঁর মামিকে এগিয়ে দিতে বিমানের ভেতরে গিয়েছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় চরম বিব্রত হয়েছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কেউ কেউ বিষয়টিকে গণমাধ্যমে না আনার কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি যে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা লংঘন, তা সবাই স্বীকার করেছেন। সাধারণত বিমানবন্দরের এমন জায়গায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তল্লাশি ছাড়া কারোরই ঢোকার কথা নয়।
তবে এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু জানানো হয়নি, আর পুলিশের কোনো লোককে থানা হেফাজতে রাখাও হয়নি।’
বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা সুলতান, গতকাল বিকেলেও এ ঘটনার কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আটক আশিকুরকে গতকাল দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের কাছে হস্তান্তরর করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ