পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : ‘আমারও ইচ্ছে করে পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে বইয়ের প্রতিটি পাতা পড়তে। অবসরে পছন্দের বইগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে। কিন্তু শুধু বইয়ের গন্ধ নিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হয়। কালো অক্ষরের লেখাগুলো চোখে ধরা দেয়না। পুরোটাই অন্ধকার মনে হয়। মনের রঙে ভেবে নেই কি কি লিখা আছে এখানে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থী নাদিম সিদ্দীকি।
ফেব্রæয়ারী মাস আসলেই বইপ্রেমীদের মনে জাগে এক অন্যরকম আনন্দ। সারা বছর অপেক্ষায় থাকার পর নতুন প্রকাশিত বইয়ের স্বাদ নিতে তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠে। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিড়ে সারা মাস কাটে তাদের এক অন্যরকম উন্মাদনায়। কবে নতুন বই আসবে, কি কি নতুন বই আসবে, পছন্দের লেখকের বই কবে প্রকাশিত হবে এইরকম আরো কত জল্পনা কল্পনা।
এর মাঝেও কিছু মানুষ আছে যারা নিভৃতে কেঁদে যায় এই আনন্দে শামিল না হতে পেরে। তাদের কান্না শোনার সময় হয় কি কারোর। হ্যা; বলছিলাম দৃষ্টিহীনদের কথা। দুচোখ জুড়ে পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য যেমন তাদের হয়ে উঠেনা তেমনি দুচোখ জুড়ে ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত কালো কালো হরফের লেখা পড়ার সৌভাগ্যও তাদের হয়না।
এক অসহনীয় দুঃখে তাদের মন দুমড়ে মুচড়ে উঠে তখন। চারপাশের মানুষ যখন হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দের বই তখন তারা যেন চারপাশের কোলাহল শোনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেনা।
আর এইরকম দৃষ্টিহীন বইপ্রেমিকদের জন্যই প্রতিবার বইমেলায় আয়োজন নিয়ে থাকে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী।
“মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়,মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ”- এই শ্লোগান ধারন করে যাত্রা শুরু করে দৃষ্টিপ্রতিতবন্ধীদের জন্য কাজ করা স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।
বইমেলার বাংলা একাডেমি চত্বরের বাহির গেটের সাথেই তাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী স্টল নজর কাড়ে সবার। সাদাকালো থিমে সাজানো এই স্টলে প্রতিদিন ভীড় করে থাকেন শখানেক দৃষ্টিহীন বইপ্রেমিক।
স্পর্শ ব্রেইলের উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বলেন, মূলত ব্রেইলের প্রয়োজনীয়তা কে তুলে ধরতেই তাদের এই যাত্রা। সেই লক্ষ্য থেকে ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত অমর একুশে বইমেলায় আমাদের এই অংশগ্রহণ।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী ফারুক মিয়া বলেন, আমরা চাই স্পর্শ ব্রেইলের মতো বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য প্রকাশনীগুলোও ব্রেইল পদ্ধতীতে তাদের বই প্রকাশ করুক। তাহলে আমাদের মতো যারা আছে তারা অন্যের সাহায্য ছাড়াই পছন্দের বইগুলো পড়তে পারবো। এবারের বইমেলায় ১৪ টি নতুন বইসহ মোট ৬১ টি বই প্রকাশ করেছে স্পর্শ ব্রেইল। এ বছরের বইমেলায় স্পর্শ ব্রেইল থেকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে; মা, আমি তপু, আমি এবং আমরা কজন, ছোটদের সুফিয়া কামাল, স্যাং আর প্যাং, আমপারার সহজ অনুবাদ, স্বপ্ন ডানা, অনন্ত নিদ্রা, আলপনার রান্না, লবীর রান্না, কলঙ্ক ভাগী, সুন্দরবনের সাদা পাহাড়, স্বাস্থ্য তথ্য, হাঁসের পায়ে ঘুড়ি ও কলঙ্কভাগী।
মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১৩৩টি। বইমেলায় গতকাল প্রকাতি হয়েছে হাফিজুর রহমানের লিখা তুর্কি রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের জীবনী নির্ভর বই এরদোয়ান: দ্যা চেঞ্জ মেকার বইটি। বইমেলায় সূচিপত্রের ৩৫০ নং স্টলে পাওয়া যাবে বইটি।
গতকাল বিকেল ৪:০০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ \ মুজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী \ এ কে নাজমুল করিম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুনতাসীর মামুন, মীজানূর রহমান শেলী এবং সোনিয়া নিশাত আমিন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মুনতাসীর মামুন বলেন, অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ বাঙালির সত্যসন্ধ ইতিহাসচর্চার এক অনন্য পুরোধা-ব্যক্তিত্ব। অসা¤প্রদায়িক-মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রণয়ন করেছেন অসামান্য গবেষণাকর্ম। আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড় যুক্ততার মধ্য দিয়ে মৌলবাদ-ধর্মান্ধতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার অবস্থান ছিল গণতান্ত্রিক-বহুত্ববাদী সমাজ-নির্মাণে আমাদের অফুরান প্রেরণার উৎস।
মুজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ড. মীজানূর রহমান শেলী বলেন, অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী ছিলেন গুণী শিক্ষক, সত্যসন্ধ পÐিত এবং পরিশ্রমী লেখক। ১৯৪৮-৫২ এর ভাষা আন্দোলনের কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক হিসাবে তিনি তৎকালীন রাজন্যবর্গের রোষে পড়েছিলেন। যেখানে রাজনীতি জীবন, যেখানে জীবন মাতৃভাষা এবং জাতীয় স্বাধিকারের মৌল জিজ্ঞাসা; সেখানে অধ্যবসায়ী শিক্ষক হয়েও তিনি বিচ্ছিন্ন, গজদন্তমিনারচারী ছিলেন না।
এ কে নাজমুল করিম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থান করে সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, ড. করিম সম্ভবত উপমহাদেশের সেই পথিকৃৎ সমাজবিজ্ঞানী যিনি সমাজবিজ্ঞানের প্রয়োগপদ্ধতি নিয়ে বিশদ কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষকও। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রগতিমুখীন অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নীরবে কাজ করে গেছেন, তাঁদের অন্যতম এ কে নাজমুল করিম।
আজ বিকেল ৪:০০টা মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করবেন হাসনাত আবদুল হাই।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে সামিউন জাহান দোলার একক অভিনয়ে ধ্রæপদী অ্যাক্টিং স্পেস-এর নাটক নভেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।