Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও রূপালী ব্যাংক বগুড়ার মহাস্থান শাখার ব্যবস্থাপক

তিনি আসলে উধাও না গুম : জনমনে রহস্য ও ধূম্রজাল!

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : রূপালী ব্যাংক বগুড়ার মহাস্থান গড় শাখার অসংখ্য গ্রাহকের একাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক জোবায়েনুর রহমান (৩৫) কে নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকটির শত শত গ্রাহক ও তার নিজের পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারছেনা যে তিনি উধাও হয়েছেন না গুম হয়েছেন ? মহাস্থান এলাকায় গুঞ্জন চলছে আসলে এই ব্যাংকের কতজন গ্রাহকের কত টাকা লোপাট হয়েছে, আর শুধু একজন শাখা ব্যবস্থাপকের একার পক্ষে কি গ্রাহকের আমানতের এই যথেচ্ছা তছরুপ সম্ভব ?

ডিজিএমের মামলা
৪ ফেব্রæয়ারী শাখা ব্যবস্থাপক জোবায়েনুর রহমানের উধাও ঘটনার পর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ডিজিএম সরদার হাবিবুর রহমান ৭ ফেব্রæয়ারী বগুড়া সদর থানায় জোবায়েনুর রহমানকে ১নং আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন । মামলাটির সারসংক্ষেপে বলা হয় অভিযুক্ত শাখা ব্যবস্থাপক গত বছরের ৬-৪-১৭ ইং থেকে ৯-৪-১৭ ই সময়কালে ব্যাংকের গ্রাহক আজমল ট্রেডার্সের সত্ত¡াধিকারি আজমল হোসেন (৫৯) এর সাথে যোগসাজশ করে ৭টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি একাউন্টে ২ কোটি ৬৯ লাখ ১ হাজার ৮শ ১ টাকা পার করেন। আর এই পরিমাণ টাকার ঘাটতি পূরণের জন্যই উক্ত শাখা ব্যবস্থাপক ব্যাংকের অন্যান্য গ্রাহকের একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা সরিয়ে ফেলেন ।
গ্রেফতারের পরদিনই জামিন পেলেন আজমল
রুপালী ব্যাংকের ডিজিএমের মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযুক্ত গ্রাহক মহাস্থান হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বগুড়া জেলা জজ আদালতে জামিনের আবেদন জানান এবং তিনি আদালতের নির্দেশে জামিনে বেরিয়ে আসেন কারাগার থেকে । ইনকিলাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আজমল হোসেন তার পক্ষে ব্যাংকের স্টেটমেন্ট দেখিয়ে বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা করার মুলধন তার একাউন্টে বৈধ ভাবেই ছিল, কাজেই অন্যের একাউন্টের টাকা হাতানোর কোন প্রয়োজন ছিলনা। আদালত তার প্রমাণ পেয়েই তাকে জামিন দিয়েছে । উল্টো তিনি অভিযোগ করে জানান যে, খোদ তার ৩ টি একাউন্টের প্রায় সব টাক্ইা লোপাট হয়েছে। আর এই লোপাটের সাথে ডিজিএম হাবিবুর রহমান সহ অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকতে পারেন বলে তার ধারণা ।
লোপাট কত কোটি টাকা ?
ইনকিলাবের পক্ষ থেকে এই চাঞ্চল্যকর ব্যাংক লোপাটের ঘটনা অনুসন্ধান কালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত্ েমনে হয়েছে, ব্যাংটির বগুড়া শাখার ডিজিএম কর্তৃক দায়ের কৃত মামলায় বর্ণিত ২ কোটি ৬৯ লাখ ১ হাজার ৮শ ১ টাকাই লোপাট হয়নি বিভিন্ন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে লোপাট হওয়া অর্থের পরিমান ১০ কোটি টাকারও বেশি। আর শুধু একা জোবায়েনুর রহমানই এতে জড়িত নন, ব্যাংকের মহাস্থান শাখার কিছু অধস্তন এবং কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি এই জালিয়াতির সাথে জড়িত ! প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, এই ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স রাজ্জাক মটর্সের ২২ লাখ, মোশারফ হোসেন এর একাউন্টের ২ লাখ, হোসেন ট্রেডার্সের সাড়ে ৪ লাখ, আঞ্জুমান আরা হকের ২৩ লাখ, জাহেদুর রহমানের ৪৬ লাখ, ডিম ব্যাবসায়ী রানার, ২ লাখ, কম্পিউটার ব্যবসায়ী রানার ৬ লাখ, কটকটি ব্যাসায়ী রফিকুল ইসলামের ৬০ ও ৪৫ লাখ টাকার পৃথক দুটি এফডি আরের ৮০ ভাগ সহ অন্তুত শতাধিক গ্রাহকের একাউন্টের এফডি আর বা সেভিংস ও কারেন্ট একাউন্টের টাকা তাদের অজান্তে জাল আবেদন বা চেকে ভুয়া স্বাক্ষরে সরিয়ে নিয়েছেন জোবায়েনুর রহমান। এই ব্যাংকের শাখায় ১০-১২ জন বিখ্যাত সুদের কারবারি, মাদক ও মুর্তি ব্যবসায়ীর কোটি কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যাদের অনেকের টাকা লোপাট হলেও লোক লজ্জা ও আইনের লম্বাহাতের ভয়ে মুখ খুলছেনা তারা । মহাস্থান মাজারের পাশেই অবস্থানকারী চীরকুমার এক পেশোয়ারী পীর সাইয়েদ নুর হুজুর এর একটি একাউন্টেও রয়েছে বিপুল অংকের টাকা। সম্প্রতি তিনি বার্ধক্যজনীত কারণে ইন্তেকাল করায় তাঁর একাউন্টের কি পরিণতি ঘটেছে তা জানেনা কেউ। এছাড়া মহাস্থান মাজার কমিটির একাউন্ট থেকেও প্রায় কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বিধায় মাজারের বেতন ভোগীদের গত জানুয়ারী মাসের বেতন দিতে সমস্যায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ ।
কোথায় গেল এত টাকা ঃ
যে শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের এই অভিযোগ সেই জোবায়েনুর রহমান সম্পর্কে অনুসন্ধান কালে জানা যায় ব্যাংকটির বগুড়া শাখার সব শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মকাচীর কাছেই তিনি , সৎ, নির্লোভ দক্ষ ও চৌকষ হিসেবে পরিচিত। পারিবারিক ভাবেও তিনি অত্যন্ত অবস্থাশালী । তার পরও কিভাবে তিনি অন্যের একাউন্টের টাকা নিতে গেলেন, আর এই লোপাট হওয়া টাকাই বা গেল কোথায় ? প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই তিনি হয়তো স্থানীয় দাদন কারবারী, মুর্তি ও মাদক ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়েছিলেন যারা তাঁকে রাতারাতি বিলিওনার বানাবার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহকের পুঁজি তাদের অজান্তেই বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। গত ২৮-০৫-১৫ থেকে এই শাখায় দায়িত্ব পালনের পর থেকেই তিনি এই কাজের মাধ্যমে ব্যাংকের কাছে রাখা গ্রাহক আমানতের খেয়ানত করে আসছিলেন। আর এটা করতে গিয়ে তাঁকে তার ব্যাংকের অধস্তন ও উর্ধতনদের নিয়ে সিন্ডিকেট করতে হয়েছে। নাহলে নিয়মিত অডিট ও জুন ও ডিসেম্বর ক্লোজিং এর সময় এত বড় জালিয়াতি ধরা না পড়ার কথা নয় !
চলছে তদন্ত কথা বলা বারণ ঃ
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রুপালী ব্যাংকের মহাস্থান শাখায় দায়িত্ব পালন রত ম্যানেজার আল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় ব্যাংকটির একাধিক অভ্যন্তরীণ অডিটের কাজ চলছে। অডিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। পরে যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন। শুধু এই শাখা ব্যবস্থাপকই নয়, ডিজিএম সহ অন্য যার সাথেই যোগাযোগ করে এব্যাপারে কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে সবাই থেকেছেন নিশ্চুপ।



 

Show all comments
  • মাহমুদা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৩:১৫ এএম says : 0
    দ্রুত এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ