Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেনাবাহিনী-র‌্যাবের যৌথ অভিযান : বান্দরবানে ২৫টি অস্ত্র ২ হাজার গুলিসহ ৪ পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম ব্যুরো : বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই হাজার ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় পাকড়াও করা হয়েছে চার পাহাড়ী সন্ত্রাসীকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন ও এলিট বাহনী র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম বৃহস্পতিবার রাতে এ যৌথঅভিযান পরিচালনা করে। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৪টি এসবিবিএল ও ১১ টি ওয়ানশুটার গান। গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার রাউন্ড পয়েন্ট ২২ রোবের গুলি ও ৩৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি।
র‌্যাব জানায় দীর্ঘদিন যাবত দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়ী সন্ত্রসীরা খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান, মানুষ অপহরণ ও মানুষ আটক করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এখন পাহাড়ে চলছে ফসল কাটার মওসুম। পাহাড়ে শাক-সবজি, ফলমূল ও মশলা কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়াও বেড়েছে। এই সময়ে অস্ত্রধারীরা এসব ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছে। উপজাতি চাষী ও খামারারিরাও চাঁদাবাজদের কারণে অতিষ্ট। জানা যায়, সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। দীর্ঘদিনের নিবিড় পর্যবেক্ষন ও গোয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে র‌্যাব নিশ্চিত হয় বান্দরবান জেলার লামা থানার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর রাজাপাড়াস্থ দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় কতিপয় সংঘবদ্ধ পাহাড়ী সন্ত্রাসী জড়ো হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সেখান থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করা। এই লক্ষ্যে তারা সেখানে বিপুল অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অবস্থান করছে মর্মে খবর আসে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন ও র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম সেখানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের চৌকস সদস্যরা পুরো এলাকা ঘেরাও করে অস্ত্রধারীদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে পাকড়াও করা হয় চার জনকে। তারা হলো, তুইসা মং (৩৬), এক্য মারমা (৩৯), মিফং মারমা (৪৫) ও চাইনুং মারমা (৩৬)। তাদের কাছ থেকে ১৪ টি এসবিবিএল এবং ১১ টি ওয়ানশুটার গানসহ ২৫টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৩৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ অভিযানে পাহাড়ী জনপদে জনমনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরী।
এদিকে র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ভৌগলিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ন স্থান হওয়ায় এখানে অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, অপহরণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধ প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে। র‌্যাব-৭ এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে এবং বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গুলি, অপহরনকারী, সন্ত্রাসী, জালটাকার ব্যাবসায়ী, চোরাকারবারী, ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আটকসহ বিপুল পরিমান ইয়াবা ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম গত এক বছর দেড়মাসে ৩৪৬ টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ মোট ৪৮ টি ম্যাগাজিন এবং ৫ হাজার ৫১৯ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে।
অভিযানে এলাকাবাসী খুশি
লামা (বান্দরবান) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ত্রিশডেবা এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে যৌথ বাহিনী। চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর রুহুল আমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা আলীকদম সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে গয়ালমারা এলাকার রাজার পাড়া দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদার জানান, গয়ালমারা, বনফুর এলাকাটি সন্ত্রাসপ্রবণ। দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রæপ চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে এলাকাবাসীকে অতিষ্ট করে তুলেছে। অভিযানের পর এলাকায় অনেকে আনন্দ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, এখানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি করছিল একদল সন্ত্রাসী। তবে বান্দরবান- কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় পুলিশও তাদের কিছু করতে পারেনি এতদিন। আলীকদম পুলিশ অভিযানে আসলে তারা কক্সবাজার সীমান্তে চলে যেত আবার পুলিশ চলে গেলে তারা বান্দরবান সীমানায় চলে আসত। র‌্যাবের এ অভিযানের ফলে এলাকাবাসী সেনাবাহিনী ও র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, তারা এখন খুশি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ