Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অযত্নে মলিন লিটল ম্যাগ

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এহসান আব্দুল্লাহ : মূলত উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকা ও ইউরোপে লিটল ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলায় একে সর্বপ্রথম পরিচিত করান বুদ্ধদেব বসু। ১৯৫৩ সালে ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পত্রিকার মে সংখ্যায় তিনি তার সাহিত্যপত্র প্রবন্ধে সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগাজিনের সাথে এদেশের সাহিত্য প্রেমীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
লিটল ম্যাগ বা লিটল ম্যাগাজিনগুলো সাধারণত গতানুগতিক ধারার বাহিরে লেখা প্রকাশ করে থাকে। আর এইসব ম্যাগাজিনের লেখকরাও সাধারণত অতটা পরিচিত হননা। মূলত যারা খুব বেশি প্রথা বিরোধী সাহিত্য চর্চা করেন বা গতানুগতিক ধারার লেখনীতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননা তারাই প্রধানত লিখে থাকেন এইসব লিটল ম্যাগাজিনে।
এইসব ছোট পত্রিকায় নানা ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজতত্ত¡ নিয়ে নানা লিখা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন এর লেখকরা। এর বেশিরভাগই আবার প্রচলিত বিশ^াস বা রাজনৈতিক ধারার বিরোধী। লিটল ম্যাগের লেখকরা সাধারণত সমাজের প্রচলিত অন্যায় অত্যাচার বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে খুব সাবলীলভাবে তাদের লেখা প্রকাশ করে থাকেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এর লেখক ও সম্পাদকরাই এইসব ম্যাগাজিনে প্রকাশক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন প্রকাশনা বা ব্যক্তি উদ্যোগে এইসব লিটল ম্যাগ বাজারে আসে। এগুলো মূলত অনেকটা অবাণিজ্যিক ও আদর্শবাদী হয়ে থাকে। আমাদের দেশ এর বিস্তার ঘটতে শুরু করে মূলত ষাটের দশক থেকে। পরবর্তীতে এই লিটল ম্যাগ তরুণ লেখকদের সাহিত্য চর্চার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাড়ায়।
পশ্চিমের আদলে আমাদের দেশে সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন প্রমথ চৌধুরী। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’কে (১৯১৪) সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ষাটের দশকে আমাদের দেশে লিটল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে একপ্রকার সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠে। সেসময় মানুষ তারা চেতনা ও স্বাতন্ত্রধর্মী লেখার জন্য অনেকাংশেই নির্ভর ছিল এইসব লিটল ম্যাগাজিনের উপর। পরবর্তীতে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্য সংখ্যা সেই জায়গা দখল করে নিলে আস্তে আস্তে কমতে থাকে লিটল ম্যাগের কদর।
তবে যুগের সাথে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে অনেক লিটল ম্যাগ। যারা এখনো সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলে। সরকারের নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা নির্ভয়ে করে যায়। এইসব কারণ অনেক সময় লিটল ম্যাগগুলোর উপর নেমে আসে প্রকাশনা বন্ধের খড়গও।
অমর একুশে বইমেলায় প্রতিবারই বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় বসে লিটল ম্যাগ এর আসর। তবে এই দিকে তেমন একটা আগ্রহ দেখাননা বইপ্রেমীরা। তারা মূলত গল্প বা উপন্যাসের স্টলগুলোতে ভীড় করে থাকেন।
অনেক তরুণ এখানে আসলেও শুধু উল্টে পাল্টে দেখেই চলে যান কেনার আগ্রহ দেখান শতকারা এক/দুই জন।
এর জন্য অবশ্য লিটল ম্যাগের প্রকাশকরা তাদের কে বরাদ্দ দেয়া স্থানের অপরিকল্পনাকে দায়ী করছেন।
কয়েকটি লিটল ম্যাগের প্রকাশক বলেন, আমাদের কে যে জায়গাটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মেলার একেবারে পিছন দিকে আর অনেকটা লোকদৃষ্টির আড়ালে। ফলে পাঠকরা এদিকে আসতে আগ্রহ পায়না। এছাড়াও প্রসিদ্ধ প্রকাশনীগুলোর স্টল উদ্যান অংশে হওয়ায় একাডেমির অংশে পাঠকরা কম আসেন। সেক্ষেত্রে আমাদের যদি উদ্যান অংশে স্টল বরাদ্দ দেয়া হতো তাহলে বেচাকেনা ও পাঠক সন্তোষজনক হতো।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখক মাইনুদ্দিন সেজান বলেন, আমাদের উচিত তরুণ প্রজন্মেও কাছে লিটল ম্যাগকে আরো পরিচিত করে তোলা। কারণ এইসব লিটল ম্যাগে বিভিন্ন নিরীক্ষণমূলক লেখনীর মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের অনেক কথা উঠে আসে। সেই ক্ষেত্রে তরুণরা তাদের লেখণীর মাধ্যমে এইসব লিটল ম্যাগকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ