Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মূলধন ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা চায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন চায় রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক। চলতি বাজেটে ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়েছে রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে এই অর্থ আগামী মে মাসের মধ্যে বরাদ্ধ দেবে সরকার। তবে কোন ব্যাংক কত টাকা পাবে তা চুড়ান্ত হয়নি। করের টাকা থেকে মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্র্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ফের মূলধন জোগানের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে সরকার। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির গুরুত্ব এবং বরাদ্দ বিবেচনা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মূলধন বরাদ্ধের সুপারিশ করবে। 

গতকাল বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপ্রতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ সোনালী, রূপালি, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০ হাজার কোটি টাকা চায় রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) তাদের চাহিদার কথা জানান। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জানানো হয়, তবে চলতি অর্থবছরের বাজেট ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ঘাটতি বিবেচনায় অর্থ ছাড় করা যেতে পারে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ছয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বিষয়ে আলোচনা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মূলত খেলাপী ঋণের কারণেই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির গুরুত্ব এবং বরাদ্দ বিবেচনা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সুপারিশ করবে। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। এপ্রিল-মে মাসের মাধ্যেই এ অর্থ ব্যাংকগুলোকে দেওয়া সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, মূলধন ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকটি প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদার কথা জানিয়েছে। এছাড়া রূপালী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক বড় ঘাটতিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া ব্যাংকগুলোর সেপ্টেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদন অনুসারে, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ২৭৩ কোটি। রুপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৬৯০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক প্রথম বারের মতো ঘাটতিতে এসেছে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকায় সরকারি ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বছর কখনই প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি সরকারি ব্যাংকগুলো। এ জন্য গত ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর এ চার বছরে জনগণের করের টাকা থেকে সরকার সর্বমোট ৯ হাজার ৬৪০ কোটি জোগান দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর সম্পদ (ঋণ) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বাড়ে। ঋণের মান অনুযায়ী বৈঠক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারি সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে। সেখানে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে ২৪ হাজার কোটি টাকা জনগণের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো জনগণের সেবায় যুক্ত থাকলেও কোন আর্থিক সুবিধা পায়না। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্ত কর্মসূচীর মতো সরকারি অর্থ বিতরণে ব্যাংকগুলো যে সেবা দিয়ে আসছে তার জন্য সার্ভিস চার্জ চায় তারা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকার প্রত্যান্ত অঞ্চলে সরকারি সেবা ছড়িয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এ মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো ভূমিকা রাখতে গিয়েও ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বেও সঙ্গে বিবেচনা করছে। জানতে চাইলে রূপালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। আমাদের ব্যাংক আগের থেকে ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে। আর কিছু সহায়তা সরকার করলে ব্যাংকটি আরো ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব আমরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ