পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েকবছর যাবত আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশে হাজার হাজার যোগ্য, দক্ষ ও উচ্চমানের আলেম থাকা সত্তে¡ও নানা কারণ দেখিয়ে যেখানে সেখানে শত শত ভারতীয় আলেমকে দাওয়াত করে আনা হচ্ছে। কেউ চার তরিকার বড় পীর ও বড় বুযুর্গ পরিচয়ে এদেশে ওয়াজ মাহফিলে আসছেন। কেউ কেউ নিজেকে নবী বংশ দাবি করে এদেশে ভক্ত-মুরিদান বৃদ্ধি করছেন।
অনেকে নিজেকে আজমীর শরিফের প্রতিনিধি দাবি করেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। গতকাল একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে দুইদিনব্যাপী ইসলামি মহাসম্মেলনে যে তিনজন অতিথির নাম ছাপা হয়েছে তার তিনজনই ভারতীয়। বাংলাদেশের কোনো আলেমের নাম পোস্টারে ছাপা হয়নি। অনেকে এটিকে স্বদেশী আলেমদের অবমূল্যায়ন ও ভারতীয় আলেমদের গুরুত্ববৃদ্ধির চেষ্টা বলে ধরে নিয়েছেন। দেশের অনেক মাদরাসায় বছরের শুরুতে ‘সবক শুরু’, ‘খতমে বুখারী’, ‘বার্ষিক সভা’ ইত্যাদি কারণে অসংখ্য ভারতীয় আলেমকে দাওয়াত করে আনা হচ্ছে। যার কোনো প্রয়োজন দেশের সচেতন আলেমসমাজ বোধ করেন না। কেননা, যাদের আনা হয় তাদের চেয়েও বর্ষিয়ান, দক্ষ, সিনিয়র ও সুযোগ্য আলেম বাংলাদেশে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় আলেমদের আসা যাওয়া বৃদ্ধি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এরাই এসব কাজ করতেন। অনেকের ধারণা, হঠাৎ করেই বেশ গুরুত্ব দিয়ে একটি মহল ভারতীয় আলেম আনা শুরু করেছে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে বড় ব্যবসায়ী পরিচয়ে তাদের কিছু ভক্ত এসব আলেমকে আনার প্রস্তাব দেয়। আসা যাওয়ার খরচ এমনকি হেলিকপ্টারের ভাড়া তারাই বহন করে। শর্ত দেয় এলাকার সব লোককে তাদের মুরিদ বানাতে হবে। সারা দেশেই গত কয়েকবছর ধরে এ চিত্র দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের গুরুত্ব বাড়ানো হয়ে থাকে। যিনি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ‘শাইখুল হাদীস’ বা ‘সিনিয়র মুহাদ্দিস’ হিসাবে। ভারতের অনেক আলেমকে দেখা যায় বছরে একাধিকবার এ দেশে ঘুরতে আসেন। তারা নিজেদের পাঠদান বা স্বদেশী জনগণকে ওয়াজ নসিহত করার সময় কখন পান তা বোঝা যায় না। অনেকে ধারণাতীত মোটা হাদিয়া নিয়ে দেশে ফিরে যান। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে ভারতীয় ভাবধারা জনপ্রিয় করে তুলতেও মিটিং, বৈঠক, সাক্ষাত ইত্যাদি করেন। গতকাল সম্মিলিত মুফতি পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক আল্লামা মুফতি ওয়াহিদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মাওলানা মুফতি জাকারিয়া আল মাহমুদ এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, দেশে যেন ভারতীয় আলেমের সয়লাব চলছে। ভারতে যখন মানুষের চেয়ে গরুর মর্যাদা বেশি, যখন গরুর কারণে বহু মুসলমানকে হত্যা করা হচ্ছে, মুসলমানদের আখ্যায়িত করা হচ্ছে ভারতের সমস্যা হিসাবে, লাখো মুসলমানকে নাগরিকত্ব হারা করার চেষ্টা চলছে, বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণ এখন সময়ের ব্যাপার, তাজমহল কে বলা হচ্ছে ‘তেজ মন্দির’ এবং সেখানে স¤্রাজ্ঞী মমতাজের কবর প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হচ্ছে ‘রামলীলার’। তখন ভারতীয় আলেমরা এসব নিয়ে বয়ানে কোনো কথা বলেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত বা সমর্থনও চান না। এমনকি তাদের বিপদগ্রস্থ ভারতীয় মুসলমানদের জন্য দোয়া করতেও শোনা যায় না। কোনো কোনো আলেম গত ৪ বছরে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বার বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেছেন বলে জানা গেছে। কিছু আলেম ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সফরের ছদ্মাবরণে রাজনৈতিক দর্শন প্রচার ও কুটনীতি করে থাকেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা ভারতের দূতের ভ‚মিকায় রয়েছেন বলে বহু আলেম-ওলামা মতপ্রকাশ করেছেন। দেশে এত বড় বড় আলেম থাকতে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন ও ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালনে রত এসব ভারতীয় আলেমের আনাগোনার হেতু কি, তা সরকারকে তলিয়ে দেখতে হবে। আশাকরি দেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।