পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসাইন আহমদ হেলাল : প্রকৃতিতে অর্ধশতাধিক রাসায়নিক উপাদানকে ভারী ধাতু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ধাতুই বিষাক্ত। পানির এ বিষাক্ত খাতুর মধ্যে আর্সেনিক, সিসা, ক্যাডমিয়াম ও পারদ অন্যতম, এসব ধাতুমিশ্রিত বিষাক্ত পানিই খাদ্যচক্রকে বিষাক্ত করে তুলছে। কৃষিজমি, মাছ, গবাদিপশু বা হাঁস-মুরগির খামারে ব্যবহৃত পানি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। অন্যদিকে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে কৃষিজমি ও কৃষককে বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং ৮ দফা সুপারিশ করেছেন এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ডরিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)। শিগগিরই কৃষিজমি রক্ষায় আইন করা হলে দেশে কৃষি খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা মনে করছেন। খাওয়ার পানি নিরাপদ রাখতে নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও কৃষিজমি, মাছ, গদাবিদ পশু বা হাঁস-মুরগির খামারে ব্যবহৃত পানি নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ইমপ্রæভিং ফুড সেফটি ইন বাংলাদেশ কার্যক্রমের সিনিয়র ন্যাশনাল উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহমনির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ‘শুধু অনিরাপদ বা দূষিত খাওয়ার পানিই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা মোটেই নয়; এর সাথে আর্সেনিক, কার্বনেট, সিসা, পারদসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পানির মাধ্যমে সরাসরি বা বিভিন্ন ফল-ফসল-খাদ্য হয়ে নানা প্রক্রিয়ায় মানুষের শরীরে ঢুকছে। এ কারণে লিভার, কিডনি, ক্যান্সার ও ¯œায়ুর নানা জটিল রোগ, এর বিস্তার ঘটছে। অনেক রাসায়নিকই আগুনের উচ্চতাপেরও নষ্ট হয় না। আর্সেেিকর জোগান প্রাকৃতিকভাবে এলেও অন্যসব ক্ষতিকর ধাতু সাধারণত কীটনাশকে বা শিল্পে কারখানার বর্জ্য থেকে আসছে। অনেক রাসায়নিক আছে যা আগুনের তাপে, পানি ফুটিয়ে সাধারণ জীবাণুমুক্ত করা গেলেও হেভি মেটালের দূষণমুক্ত করা যায় না। আর্সেনিকের মাধ্যমে কারো শরীরে একবার আর্সেনিকেসিস ঢুকে পড়লে পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর প্রভাবে উদ্ভব হওয়া বিভিন্ন উপসর্গ সাময়িক চিকিৎসা আমাদের দেশে হচ্ছে। এমন চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর্সেনিকোসিস রোগীরা সাধারণত ক্যান্সার, হৃদরোগ, চর্মরোগ ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় বেশী। তাই খাদ্যে পানিবাহিত হেভি মেটাল পরিস্থিতি নিয়ে আরও গবেষণাও নজরদারি জরুরিভাবে বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সার্বিকভাবে ভারী ধাতু গ্রহণে শরীরের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাঘাত, অঙ্গহানি, ক্যান্সার, স্নায়ুবিক দুর্বলতা বা ক্ষতিসাধন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কিছু ভারী খাতু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, কিডনির রোগসহ শরীরের সঞ্চালন ও স্নায়ুবিক পদ্ধতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসির) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বেশ কিছু এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের শরীরের রক্তে যেসব হেভি মেটালের নমুনা পেয়েছি, তা সাধারণত খাদ্যচক্রের মাধ্যমেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এ ক্ষেত্রে পানি থেকেই খাদ্যে প্রবেশ করে থাকে। খাদ্যচক্রে অল্প অল্প পরিমাণে হেভি মেটালগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জাগালেও সেøা পয়জনিংয়ের মতো ধীরে ধীরে নানা উপসর্গের মাধ্যমে কঠিন রোগের জন্ম হয়। অনেক গবেষণা ও পরীক্ষায় খাদ্যচক্রে রাসায়নিক বিষক্রিয়ার নমুনা পাওয়া গেছে। নওগাঁ, ঢাকার ধামরাইয়ে গবেষণায় ১১ শিশুর মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের নানা গোলযোগের উপসর্গ পাওয়া যায়; এ ১১ শিশুর ৬ জনেরই শরীরে ঠাÐা হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়া, হাত-পা দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং অচেতন হওয়ার উপসর্গ ছিল। এসব শিশুর বয়স ছিল ১৬ মাস থেকে ৮ বছরের মধ্যে। শিশুদের বেশিরভাগের রক্তে ও প্রস্রাবে কীটনাশক উপাদানের বিষক্রিয়া পাওয়া গেছে। কারো কারো শরীরে বিষক্রিয়া পাওয়া গেছে। কারো কারো শরীরে বিষক্রিয়ার মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের চেয়েও ৬ থেকে ২৩ গুণ পর্যন্ত বেশি ছিল।
এক তথ্যে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় খামারে পরিবেশনে করা পানি ও খাবার থেকে পালিত লেয়ার মুরগির ভেতর আর্সেনিক প্রবেশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ৪৮.৪ শতাংশ ঘরে তৈরি বিভিন্ন উপাদানের খাদ্যও ৫১.৬ শতাংশ কমার্শিয়াল খাদ্য দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ মুরগির ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে শ্যালো-টিউওয়েল পানি এবং বাকিটা ডিপ-টিউবওয়েলের পানি। এর মধ্যে ৪৮.৪ শতাংশ মুরগি ৫০ পিপিবি পর্যন্ত আর্সেনিক এবং ২৭.৪ শতাংশ মুরগি ৫১ থেকে ১০০ পিপিবি পর্যন্ত মাত্রার আর্সেনিক গ্রহণ করে থাকে। এসব মুরগির বিষ্ঠায় ভয়াবহ মাত্রায় আর্সেনিক থাকায় তা অনেক সময় মাছের খাবার বা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহারের ফলে পানি-মাটি-খাদ্য হয়ে পুনরায় মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায়, রংপুরে পীরগাছায় পানিতে কার্বামেট ও অর্গোনা ফসফেট জাতীয় কীটনাশক উপাদানের বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ কারণে ধানক্ষেতের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত কার্বোফুরান ও কার্বোরিলের উপাদান পাওয়া যায়। যা মানুষের শরীরের জন্য ভয়াবহ।
প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এ প্রবণতারোধ না করলে খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘিœত হবে। গত ১০ ফেব্রæয়ারি এএলআরডি গোলটেবিল আলোচনায় এ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধে ৮ দফা সুপরিশে উল্লেখ করা হয়, ভূমি ব্যবহারনীতিতে উল্লেখিত ভূমির মালিকানা সনদ স্কিমটি দ্রæত প্রচলন করা, কৃষি এলাকায় সরকারি- বেসরকারিভাবে স্থাপনা তৈরিসহ সকল প্রকার অকৃষি জমি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, কৃষি খাস জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যেই বন্দোবস্ত দেয়া সুনিশ্চিত করা, ইটভাটার গ্রাস থেকে কৃষি জমিকে রক্ষা করা।
অনুষ্ঠানে এক বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, গ্রামীণ হতদরিদ্র, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের কৃষি জমি ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে। এদের হাত থেকে কৃষি জমি বাঁচাতে হলে ‘কৃষকের হাতে জমি’ Ñএ নীতিকে সামনে রেখে ভূমি সংস্কারের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবহার সংস্কার এবং আমলা ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি দমনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি কৃষি জমি সুরক্ষা ও খাদ্য অধিকার অঙ্কনের খসড়া দেয়া হলে তা প্রাইভোট বিল আকারে সংসদে উত্থাপনের প্রতিশ্রæতি দেন।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে যারা বাঁচিয়ে রেখেছেন সেই কৃষক, তাদের সন্তান, প্রবাসী শ্রমিক ও পোশাক শিল্প শ্রমিকরা রাষ্ট্রের কাছে উপেক্ষিত। তিনি বলেন, ভূমিদস্যু, ব্যাংক ডাকাত ও লুটেরাদের মত নব্য দখলদার বাহিনীর হাতে রাষ্ট্র আজ বেহাত হয়ে যাচ্ছে। বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁঞা বলেছেন, লুটেরাদের বিরুদ্ধে জনশক্তি নিয়ে সংগঠিত হয়ে না দাঁড়াতে পারলে কৃষিজমি সুরক্ষা করা যাবে না। কৃষি জমি রক্ষার আইনটি দ্রæত প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।