পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই উত্তরসহ প্রশ্নপত্র চলে আসে পরীক্ষার্থীদের কাছে। এসময় আটক করা হয় ২৭ জনকে । আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে ডেস্ক রিপোর্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই উত্তরসহ পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে থাকা ফাঁস হওয়া সে প্রশ্ন পরীক্ষার আসল প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে যায়। গতকাল (মঙ্গলবার) এসএসসি পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নগরী ও জেলার ফটিকছড়ি থেকে প্রশ্নসহ হাতেনাতে আটক করা হয় এক শিক্ষিকা ও ১৮ পরীক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে দুইজন নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ (বাওয়া) বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার দায়ে বহিষ্কার করা হয় ওই ১৮ জনসহ ৩৩ জনকে।
পটিয়া আইডিয়াল হাই স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে নগরীর বাওয়া স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসে। তাদের বহনকারী বাসটি থামে কেন্দ্রের অদূরে ওয়াসার মোড়ে। পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগেই তারা দলবেধে কয়েকজনের মোবাইলে আসা প্রশ্ন ও উত্তর দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বাসে ঢুকে পড়েন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আটক করা পাঁচটি মোবাইল ফোনেই পদার্থ বিজ্ঞানের এমসিকিউ প্রশ্ন ছিল। পরীক্ষায় আসা সেসব প্রশ্ন মিলে গেছে। মানবিক কারণে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক শিক্ষা বোর্ডকে জানানো হয়। এরপর পরীক্ষা চলাকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সেখানে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের একটি বিশেষ টিম। তিনি যাদের কাছে প্রশ্ন পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে আটক করার নির্দেশ দেন।
বোর্ডের সচিব শওকত আলম জানান, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নকল করে পরীক্ষা দেয়ার দায়ে বাওয়া স্কুল কেন্দ্র থেকে ২৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই অপরাধে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী বাওয়া স্কুলের দুই ছাত্রীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বাওয়া স্কুলের ওই দুই শিক্ষার্থী সহোদর বোন। পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের বাবা মোবাইল থেকে প্রশ্ন দেখে উত্তর বলে দিচ্ছিলেন তাদের। তাৎক্ষণিক বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেন অভিভাবকরা। এসময় পুলিশ আসলে ওই দুই শিক্ষার্থীর বাসা মোবাইল ফোন ও তাদের দুই মেয়েকে ফেলে দ্রæত পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের আটক করে। বাওয়া স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, আটক দুই শিক্ষার্থীর একজন স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।
এছাড়া ফটিকছড়ির হেঁয়াকো বনানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা থেকে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে প্রশ্নসহ সাত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। ওই সাতজন ফটিকছড়ি বাগান বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, গজারিয়া জেবুন্নেসা পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং চিকনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মোঃ শহীদুল হক জানান, কেন্দ্রের বাইরে নয় শিক্ষার্থী এবং ভেতরের প্রাঙ্গণ থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ। ওই ১০ জনের মধ্যে তিনজনের কাছ থেকে অন্যরা বই নিয়ে উত্তর খুঁজছিল।
এদের মধ্যে সাতজনের কাছে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ছিল। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইলও জব্দ করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের সচিব শওকত আলম জানান, তাদের সবাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে বাওয়া স্কুল কেন্দ্রের সামনে বাসে থাকা ৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের কাছে প্রশ্ন পাওয়া গেছে তারা ভ্রাম্যমান আদালতকে জানায়, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগে তাদের কাছে উত্তরসহ প্রশ্নপত্রের সফট কপি আসে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার প্রস্তুতি চলছিল।
দিনাজপুর অফিস জানায়, প্রশ্নপত্র পাশের সাথে জড়িত থাকার অভিযেগে দিনাজপুরের ৩ ও বিরামপুরে ৩ জন মোট ৬ জন পরীক্ষার্থীকে মুঠোফোনসহ আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বিরল উপজেলার ধুকুরঝাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারের সম্মূখে একজন এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে স্মার্ট ফোনের গ্যালারীতে ২জন পরীক্ষার্থী কয়েকজনকে সাথে নিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দেখার সময় ঘটনাস্থলে আকস্মিক ইউএনও উপস্থিত হয়ে তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলেন।
অপরদিকে বিরামপুর সরকারী উচ্চ বালিকা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় ৩ পরীক্ষার্থীকে মোবাইলসহ আটক করা হয়। আটকের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা তাদের মোবাইল লোক করে দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিকভাবে তাদের আটক করে মোবাইল জব্দ করে পুলিশে দেয়। পুলিশ আদালতের অনুমতি নিয়ে মোবাইল লোক খুলে প্রশ্নপত্র আছে কিনা তা যাচাই করবে বলে জানিয়েছেন বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরের ক্যান্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে জায়েদ আলী নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বজলুর রশিদ ওই পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনসহ গ্রেফতার করে। লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজের পরীক্ষার্থী জায়েদ আলী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সময় হাতেনাতে আটক করে ওই কর্মকর্তা। পরে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে তার মোবাইল ম্যাসেজে থাকা প্রশ্নের মিল পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। আটক জায়েদ আলী বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারের গাজীউর রহমানের পুত্র। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান পাশা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার মুরাদনগরে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী সিন্ডিকেট চক্রের সক্রিয় সদস্য খাইরুল ইসলাম নামের এক যুবককে দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম। সাজাপ্রাপ্ত খাইরুল ইসলাম উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের তারিকুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, মঙ্গলবার এসএসসি’র পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘন্টা পূর্বে উপজেলা প্রশাসন গোপন সূত্রে সংবাদ পান যে রামচন্দ্রপুর এলাকায় প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রটি তৎপর। ওই সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম মঙ্গলবার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হান মেহেবুবকে রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়ে নিজেও যান। উভয়ই ঘটনাস্থলে এসে হাতেনাতে দু’টি স্যামসাং মোবাইল ফোন সেটসহ খাইরুল ইসলাম (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়ম ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে তার অপরাধ স্বীকারোক্তি মোতাবেক পাবলিক পরীক্ষা সমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০ সালের ৯ এর খ ধারায় তাকে দুই বছর কারাদন্ড দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়ম জানান, গ্রেফতার কৃত খাইরুল ইসলামের কাছ থেকে জব্দকরা মোবাইলে প্রশ্ন ফাঁসকারী অনেকের ফোন নাম্বার ও ছবি রয়েছে। অপরাধ স্বীকার করায় তাকে দু’বছর স¯্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।