পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : “আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী; চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি ” নজরুলের ভাষায় বসন্ত এলে বনভূমিও সুন্দরী হয়ে উঠে নতুন ফুলের সাজে, সেই সাথে উঠে তরুণীর পায়ে পায়েলের গুঞ্জরণ। “ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানী, ভোমরাটা গায় গান ঘুম ভাঙানি ” র্ফরুখ আহমেদের ভাষায় এই ফাল্গুনে পাখিদের ঠোটে বেজে উঠে ঘুম ভাঙ্গানী সুর।
শীতের রুক্ষতা আর জড়তাকে কাটিয়ে প্রকৃতিতে এক নতুন প্রাণের সঞ্চরণ নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। এতদিনের জীর্ণতা সড়িয়ে ফুলে ফুলে আজ ভরে উঠেছে প্রকৃতি। পলাশ আর শিমুলের গাছে যেন জমেছে আগুনের খেলা। কৃষ্ণচূড়ার আগুন যেন জানান দিচ্ছিল ফাগুনের আগমনের। শীতের খোলসে লুকিয়ে থাকা প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে তার ঐশ^রিক মোহনীয়তা আর নজরকাড়া রুপ।
ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুচক্রের রাজা বসন্তের আগমন। তাই বসন্তকে বরণ করে নিতে চারদিক সেজেছে নানা বর্ণিল আয়োজনে।
তাইতো দিনের শুরুতেই বসন্তকে বরণ করে নিতে তরুণীরা সেজেছে বাসন্তী সাজে। তরুণীদের হলুদ শাড়িতে মাথায় টায়রা আর খোপার গোজা গাঁদা ফুলের সাজ সেই সাথে হাত ভর্তি কাচের চুড়ি যেন বসন্তকে দিয়েছে স্বর্গীয় রুপ। তরুণরাও সেজেছেন বাসন্তীর রুপে। হলুদ পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা আর মাথায় পাগড়ী বেধে উৎসবের সাথে সুর মেলাতে বের হয়েছেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
তরুনীদের খোপায় গোজা ফুল আর গাছের শাখে নতুন ফোটা ফুলের ঘ্রাণে মম করে উঠে চারপাশের পরিবেশ। যেন বসন্ত মানেই আজ হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। তাই সকলে নিজেদেরকে স্বাধীনভাবে রাঙ্গিয়ে হারিয়ে পড়েন প্রকৃতির মাঝে। সকলের মাঝেই যেন একটি শান্ত শীতল আর উৎসুক আনন্দ কাজ করছিল এই রঙ্গিন প্রকৃতিকে ঘিড়ে।
এই বসন্ত উৎসবের উৎপত্তিটাও অনেক পুরোনো। ১৫৮৫ সালে মোঘল স¤্রাট আকবর বাংলা পঞ্জিকা চালুর পর তার খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ১২ মাসে মোট ১৪ টি উৎসবের আয়োজন শুরু করেন। তার মাঝে অন্যতম হলো বসন্ত উৎসব।
সেই সাথে এই বসন্ত আমাদের অধিকার আদায়ের ঋতুও। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এই বসন্তেরই ৮ই ফাল্গুন আমাদের ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘আহা, আজি এ বসন্তে এতো ফুল ফোটে/এতো বাঁশি বাজে, এতো পাখি গায়...’। কবিগুরুর তালে তাল মিলিয়ে বসন্তকে বরণ করতে গতকাল নগর জুড়ে ছিল নানা আয়োজন।
ঊসন্তকে বরণ করতে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও রমনা বটমূল প্রাঙ্গনে জমে উঠেছিল মানুষের ভীড়। সকলেই নজরকাড়া সাজে নিজেদের সাজিয়ে এসেছিলেন বসন্তকে বরণ করে নিতে। বেলা গড়াতেই যেন ঢাবি ও আশেপাশের এলাকা হয়ে উঠলো হলুদিয়া ফুলের বাগান। চারদিকে হলুদ শাড়ি পড়া রমনীদের সাজে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল ফাগুনের আগুনের উত্তাপ।
তরুণীরা শাড়ি চুড়ি আর পায়েলের ঝঙ্কারে বেজে উঠছিল পুরো প্রাঙ্গন। সেই সাথে তরুণদের কন্ঠে বাসন্তী গান তাকে দিচ্ছল অনন্য মাত্রা।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইছার আহমেদ ও তাহমিনা শিকদার বলেন, আসলে বসন্ত মানেই একটি অন্যরকম উৎসব যেন প্রাণের সাথে জড়ানো। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বসন্তগুলো অনেক ভালো লাগে নানা আয়োজনের কারনে। তাছাড়া যেহেতু এখন মাস্টার্সে পড়ছি তাই এই বছর আমাদের জন্য এটি ক্যাম্পাসের শেষ বসন্ত উৎসব তাই আগ্রহটা আরো বেশি কাজ করছে সেই সাথে খারাপ লাগাটাও।
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গনে বকুলতলায় দীপনের গিটারের মুর্ছনায় ১৪২৮ বঙ্গাব্দের বসন্ত উৎসব শুরু হয়।
‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ সেøাগানে বসন্ত উৎসব-১৪২৪ এর এ আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।
সকাল থেকেই শাস্ত্রীয় সংগীত, দলীয় নৃত্য, বসন্ত কথন, আবির রাঙানো, দলীয় সংগীত, একক সংগীত, আবৃত্তির মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বসন্ত উৎসবের প্রথম পর্ব।
সকালের বসন্ত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত আবৃত্তিকার সৈয়দ হাসান ইমাম, উৎসব আয়োজন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শফি উদ্দীন আহমেদ, উৎসব কমিটির নাঈম হাসান সুজা, মানজার হাসান সুইট প্রমুখ।
বসন্ত উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৩টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলা, বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান।
এছাড়াও ঢাবির বটতলায় সমগীতের প্রযোজনায় সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বসন্ত উৎসব এতে যন্ত্র সংগীত, একক নৃত্য, দলীয় নৃত্য, আদিবাসী নৃত্য ও দলীয় সংগীতের মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেয়া হয়।
বিকেলে বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অনুষ্ঠিত হয় ফাল্গুন কনসার্ট। এতে বিভিন্ন ব্যান্ড ছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।