Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কর্মসংস্থান শাখায় সিন্ডিকেট চক্র তৎপর : ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে এজেন্সি নবায়নের ফাইল ঝুলছে

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতায় সংকট নিরসনের পড়েও রিক্রুটিং এজেন্সি’র নবায়নের ফাইল ঝুলছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দাবী অনুযায়ী বকশিস না দিয়ে নিয়োগানুমতির ফাইল নড়াচড়া করে না বলে একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে। এতে রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিক-প্রতিনিধিরা জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে অনেক বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে নতুন ভারপ্রাপ্ত সচিব যোগদানের পর তার বলিষ্ঠ উদ্যোগে সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদারের দপ্তরে বিভিন্ন ফাইল কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই দ্রæত ছাড় পাচ্ছে। এতে এজেন্সি’র মালিকরা অত্যান্ত খুশি। কিন্ত প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে দুদক চলে যাওয়ায় কর্মসংস্থান শাখায় সিন্ডিকেট চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠছে। সংশ্লিষ্ট শাখায় মেসার্স আই ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ১০০ জনের ফাইল, বোনানজা ওভারসীজের (৫৭৯) ১১৬ জনের ফাইল, ফরাজী ট্রেড ইন্টরন্যাশনালের ৬৩ জনের ফাইল এবং বিডি স্টারের ৪৮ জন সউদী গমনেচ্ছু কর্মীর নিয়োগানুমতির ফাইল দীর্ঘ দিন যাবত শাখায় বিনা কারণে আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। আটকেপড়া এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতিদিন ধরণা দিয়েও হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বলে অভিযোগে প্রকাশ। শাখার নুসরত আলী ও শাহেদও নিয়োগানুমতির ফাইল নিয়ে নানা টালবাহানা করে বলে জানা গেছে। বিএমইটি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: তাজুল ইসলাম নবায়নের জন্য গত ৯ জানুয়ারী প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর স্বারক নং ১২৬-এর নোটশীটে ইস্ট ওয়েষ্ট ট্রেড লিংকার্স রিক্রুটিং এজেন্সিকে নবায়নের জন্য সুপারিশ করার পরেও অসৎ উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য অফিস সহকারী আব্দুর রহিম ও মনিরুল ইসলাম যোগসাজস করে ফাইলটি আপত্তি দিয়ে আটকে দেয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শাহীনা ফেরদৌসীকে ইস্ট ওয়েষ্ট ট্রেড লিংকার্সের নবায়ন সংক্রান্ত আপত্তির বিষয়টি দ্রæত তদন্ত করে সচিবের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনো তদন্ত কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এজেন্সিটি’র প্রায় দু’শতাধিক বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসা সউদী দূতাবাসে জমা দিতে পারছে না। এসব কর্মী প্রতিদিন এজেন্সির কাকরাইলস্থ অফিসে ধরণা দিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। 

২০১৪ সালে ইস্ট ওয়েষ্ট ট্রেড লিংকার্স রিক্রুটিং এজেন্সি লেবাননের বৈরুতে আলী আছি ইস্ট কোম্পানীতে বেশ কিছু কর্মী প্রেরণ করে। এক পর্যায়ে লেবাননে ৯ জন কর্মী ঠিকমতো বেতন ভাতা ও খাবার না পাওয়ায় ইস্ট ওয়েষ্ট ট্রেড লিংকার্স-এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসান স্ব-উদ্যোগে লেবাননের কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনে ব্যর্থ হন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে বিষয়টি দ্রæত নিরসন এবং বৈরুতস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসের সহায়তায় ৯ জনকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেশে ফেরত আনার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি’র ডিজি’র কাছে লিখিত আবেদন পেশ করেন। এতে মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি কোনো সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তার লিখিত আবেদনই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালে ইস্ট ওয়েষ্ট ট্রেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসান উল্লেখিত ৯ জন কর্মীর মধ্যে ৮ জনকেই স্ব-উদ্যোগে অর্থ ব্যয় করে দেশে ফিরিয়ে আনেন। একজন ভালো বেতন পাওয়ায় এখনো লেবাননে চাকুরি করে রেমিটেন্স আয় করছে। বাকিদের অনেকেই বিদেশে চলে গেছে। গতকাল সোমবার মোহাম্মদ হাসান কাকরাইলস্থ তার অফিসে এসব তথ্য জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের কাউকে দোষ দিচ্ছি না । এটা আমার কপালের দোষ। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে জনশক্তি রফতানির কাজ কর্ম ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ২০১৬ সালে লেবাননে ৯ জন্য কর্মীর সংকট নিরসন করা হলেও অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে কি এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না বলে তিনি জানান। রাতে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে ইনকিলাবকে বলেন, কর্মসংস্থান শাখায় কোনো সিন্ডিকেটের সাথে আমি জড়িত নই। নিয়োগানুমতি’র ফাইল আমার দায়িত্বে না। তিনি বলেন, নিয়োগানুমতির শাখার দায়িত্বরত ব্যক্তিদের এসব অনিয়মের অভিযোগ সর্ম্পকে আজ জিজ্ঞাসা করবো। রাতে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য কর্মসংস্থান শাখার অফিস সহকারী আব্দুর রহিমের মোবাইল ফোনে (০১৬৮১১২২১৮৩) একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ