Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট- মেঘনার বুকে ভাষানচরকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


আনোয়ারুল হক আনোয়ার, নোয়াখালী থেকে : মেঘনার বুকে জেগে উঠা ভাষান চরের দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। মাত্র দেড় বছর পূর্বে ঠেঙ্গারচর নামক দ্বীপটি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর অজানা ছিল। মহিশের বাথান কিংবা জেলেদের সাময়িক বিশ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ভাষানচর। ২০১৬ সালের শেষদিকে ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গা শরনার্থী পূর্ণবাসনে সরকারী সিদ্বান্তের পর চরটি রাতারাতি আন্তর্জাতিক শিরোনামে পরিণত হয়। ২০১৭ সালের ফ্রেব্রæয়ারিতে সর্বপ্রথম ঠেঙ্গারচর নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হবার পর মিডিয়ার লোকজন ভাষানচরে যাতায়াত শুরু করে। পরবর্তীতে ঠেঙ্গারচর নাম পরিবর্তন করে ভাষানচর রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষানচরে রোহিঙ্গা শরনার্থী পূর্ণবাসনের তার সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর থেকে সেখানে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক তত্বাবধানে তিনশত বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভাষানচরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কসহ পঞ্চাশ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে। ভাষানচরে প্রতি প্যাকেজে ৪টি করে ক্লাস্টার শেড নির্মিত হবে। প্রতি শেডে ৪৮টি পরিবার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ৩০টি প্যাকেজে সর্বমোট ১২০টি ক্লাস্টার শেড নির্মিত হবে। ভাষাণচরে ৪ তলা বিশিষ্ট ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে এবং এর সাথে ৩০টি বৃহদাকারের পুকুর খনন করা হবে। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণের লক্ষে ১৮০টি গভীর নলকূপ স্থাপিত হবে। যোগাযোগ সুবিধার্থে ইতিপূর্বে ভাষানচরে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সর্বোপরি ভাষানচরে বসবাসকারীর সূবিধার্থে যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ পূরোদমে এগিয়ে চলছে।
ভাষানচরে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে একশত বর্গকিলোমিটার আয়তন সম্পন্ন আরো একটি চর জেগে উঠেছে। জেলেরা এটির নাম রেখেছে গাঙ্গুরিয়ার চর। আগামী এক দশকে চরটি ভাষাণচরের সমপরিমাণ আয়তন হবে বলে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে। ভাষানচরের ১৫ কিলোমিটার উত্তরে স্বর্ণদ্বীপের অবস্থান। স্বর্ণদ্বীপে এশিয়ার বৃহৎ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নোয়াখালী জেলা সদর থেকে দক্ষিণে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। তেমনিভাবে ভাষাণচরে নৌবাহিনীর সার্বিক তত্বাবধানে উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ সম্পন্ন হলে নোয়াখালী জেলার গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে। স্বর্ণদ্বীপে সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষন কেন্দ্রের পাশাপাশি অবশিষ্ট বিশাল চরাঞ্চলের যে কোন একটিতে নৌঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি জনমনে আলোচিত হচ্ছে। নোয়াখালীর ভৌগলিক অবস্থান এবং দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে নৌঘাঁটি স্থাপিত হলে জলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। নোয়াখালী মূলভূখন্ডের পাশাপাশি রয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপাঞ্চল। এর সাথে যুক্ত রয়েছে মেঘনা পেরিয়ে বিশাল বঙ্গোপসাগর। নোয়াখালীর দ্বীপ বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রতি বছর মেঘনার বুক চিরে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠছে। হাতিয়া উপজেলার চর্তূদিকে অর্ধশত চর রয়েছে। এরমধ্যে জেগে উঠা ১৫টি চরের মধ্যে ৮টিতে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। আগামী এক দশকে অবশিষ্ট চরগুলো জেগে উঠার উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নোয়াখালীর বিশাল ভূমি ও নৌপথকে বহুমুখী কাজে ব্যবহারের লক্ষে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। যার ফলশ্রæতিতে আগামীতে নোয়াখালী অঞ্চলে আরো বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজের সম্ভাবনা রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ