Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ বসন্ত

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে/ এসেছে দারুণ মাস।’- এমনি করেই প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। আর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসন্ত উপলব্ধি করেছেন এভাবে ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত।’ হ্যাঁ, গাছের শাখার শাখায় রঙিন ফুলের পসরা সাজিয়ে, ঝরিয়ে দিয়ে মলিন পাতার রাশি, আজ মঙ্গলবার আবার এলো পহেলা ফাল্গুন, আজ বসন্তের প্রথম দিন। বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাসে কোকিলের মিষ্টি কলতানে উন্মাতাল হবে প্রকৃতি। ফুলেল বসন্ত যৌবনের উদ্দোমতা বয়ে আনে। আনন্দ আর উচ্ছ¡াসমুখরতায় মন-প্রাণ ভরিয়ে তোলে।
ভূগোলবিদ ও পঞ্জিকা বিশারদরা ঈসায়ী বর্ষের দ্বিতীয় মাস ফেব্রæয়ারি ও বঙ্গাব্দের একাদশ মাস ফাল্গুনের সাথে মৈত্রী তেরি করে দিয়েছেন। ফাল্গুন পেরিয়ে বসন্ত তার যৌবনের চৌকাঠ মাড়িয়ে চৈত্রে পদার্পণ করবে। ফাল্গুন মাসের নাম ‘ফাল্গুনী› তারা, আর চৈত্র মাস ‘চিত্রা› তারার নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয়েছে। এ সময় মহান আল্লাহপাকের অপার সৃষ্টি মহিমায় দক্ষিণ গোলার্ধ পরিভ্রমণ শেষে সূর্য তার কক্ষপথে উত্তর-অভিমুখে ধাবিত হতে থাকে। আপনা হতেই প্রকৃতিতে লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। উত্তরী বায়ুর যাত্রাপথ রুদ্ধ হয়ে দখিনা মৃদুমন্দ সমীরণ লহর তোলে। তরুলতা পুরানো পাতা ঝেড়ে ফেলে নববধূরূপে মুকুলিত হয়। পত্রপল­বে সুশোভিত হয় সবুজ উদ্যান। সত্যিই বসন্তের আমোদনে ফাল্গুনের ঝিরি ঝিরি হাওয়া, নির্মেঘ রোদ্দূর নতুন মাত্রা যোগ করে নিসর্গে। কোকিলের কুহুতান তো বসন্তেরই মর্মগান।
প্রকৃতির মতোই শিল্প-সাহিত্য এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত বাঙালি জীবনে তৎপর্যময়। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের শুরু। বসন্তের আগমনবার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি’ ও ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে বসন্তের দোলা। উৎসবে মেতে ওঠে নগরবাসী। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত শুধু প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও রঙিন করেছে। তাই আজ পহেলা ফাল্গুনের সুরেলা এ দিনে তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরবে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেবে শাশ্বত বাঙালিপনা।
রাজধানীতে ১৪০১ বঙ্গাব্দে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদ্যাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। রাজধানীতে এ বছরের বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালা আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে।
কর্মসূচি : পহেলা ফাল্গুনে আজ রাজধানীতে রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। চারটি স্থানে আয়োজন করা হয়েছে ‘বসন্ত উৎসব’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় দিনব্যাপী এবং ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ, ল²ীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে বিকেল থেকে রাত অবধি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবে যন্ত্রসংগীত, বসন্তকথন পর্ব, প্রীতিবন্ধনী, আবির বিনিময়, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, একক সংগীত, দলীয় সংগীত, দলীয় নৃত্য, উপজাতিদের ও শিশু-কিশোরদের বিশেষ পরিবেশনা থাকবে। দেশের অগ্রগণ্য দল ও বরেণ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেবেন। চারুকলার সকাল ও বিকেলের অনুষ্ঠানটি সরাসরি স¤প্রচার করবে কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী ‘বসন্ত উৎসব’। একাডেমি প্রাঙ্গণে নন্দনমঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় থাকবে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ