Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হোসাইন আহমদ হেলাল : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে, এটি মানতেই পারছেন না নেতা-কর্মী সমর্থকরা। দশ বছর মামলাটি ঝুলে ছিলো নানা কারণে। নির্বাচনী বছরে এসেই হঠাৎ রায় হয়ে তিনি কারাবরণ করবেন এমনটি তিনি নিজেও হয়তো মনে করেননি। বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমানে তিনি একটি নির্জন কারাগারে, সাধারণ কয়েদীর মত। গণতান্ত্রিক সমাজে এটি বিস্ময়কর বলে মনে করছেন নানান পেশার মানুষ। একজন সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের অন্যতম একটি বৃহত্তম দলের চেয়ারপার্সনকে এভাবে কারাবরণ করতে হবে এটি এখন কোন সভ্য সমাজে বা দেশে আছে বলে মনে করছেন না অনেকে। তবুও সেই নেত্রীর নির্দেশে আজ তার দলের নেতা-কর্মী সমর্থকরা শান্ত রয়েছেন।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে প্রতিবাদ ক্ষোভ প্রকাশের চেষ্টা করছেন। তাতেও বাধা, গ্রেফতার, লাঠি চার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ। শুধু গ্রেফতারই শেষ পরিণতি নয়, শুরু হয় রিমান্ড নির্যাতন। তাহলে কি খালেদা জিযার কারামুক্তি বিলম্ব হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে রায়ের দিনে প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগ মুহূর্তে নেতাকর্মী-সমর্থক ও দেশবাসীর কাছে দেয়া নির্দেশনায় বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ। শুধু তাই নয় গ্রেফতার আতংক কেটে গেছে তাদের। গত ৩ দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি, প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল তারই প্রমাণ মিলেছে। বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্ব হলেও নেত্রী ও দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে দেশবাসীর কাছে, তবে এটি সহনশীলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হলে দেশে বড় সংকট চলে আসতে পারে। এটি উভয়দলের জন্য ভয়াবহ, ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। সরকারীদলের নেতা-কর্মীদের নানা উস্কানিমূলক বক্তব্যকে উপেক্ষা করেই বিএনপি তাদের লক্ষ্য নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনে বাধা কেন? তাহলে কি দেশে গণতন্ত্র থাকবে না। থাকলেও বিএনপির জন্য জরুরী অবস্থা জারি হলো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) ইনকিলাবকে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যা মেলানো যায় না। দুই এ দুই এ চার একথা বলা অপরাধ হয়ে ওঠেছে। উন্নত দেশে সব সম্ভব, আমাদের দেশে নয়। তিনি বলেন, ২০১৪সালের ৫ জানুযারীর মত নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায়না। সংকট মুহূর্তে সমাধান করতে না পারলে সমস্যা বাড়বে, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠতে পারে পরিস্থিতি। বিএনপির অসহিংস শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা কেন? তাহলে কি গণতন্ত্র থাকবে না? দেশে কি বিএনপির জন্য জরুরী অবস্থা? নির্বাচন নিয়ে সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। তাহলে অন্যের মতামতকে সরকার আমলে নিবে না? ্উভয়ে অনড় অবস্থান থেকে একটু সরে আসলে সমাধান আসবেই। অতীতে বিএনপি-আওয়ামীলীগ এক সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। তার নজীর রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেছেন, আইনী লড়াই ও ন্যায় বিচার পেলে বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রশ্নেও ওঠেনা। সরকারের ভূমিকা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের ধৈর্যের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। আওয়ামীলীগ চাইলেও বিএনপি আন্দোলন করবে না। আন্দোলনের সময় হলে বিএনপি আছে কিনা নেই তার প্রমাণ দেবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকলেই সিদ্ধান্ত হবে বিএনপির রাস্তার নামার ক্ষমতা আছে কি না নেই। তিনি আরও বলেন, ম্যাডাম জেলে যাওয়ার পর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি অনেক শক্তিশালী ও সু-সংগঠিত। গত কয়েক দিনের রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা গ্রেফতার, গুম-খুনকে ভয় করেনা। ১/১১ মাইনাস ফর্মূলা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শেখ হাসিনার পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। বিএনপি ভদ্রলোকের দল। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে।
সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়ির আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ ফয়সাল ইনকিলাবকে বলেছেন, পরিস্থিতি যা বুঝা যাচ্ছে, দু‘দলের অনড় অবস্থানে রয়েছে। দুই নেত্রীর বিরোধ আরও কঠোর হবে। এতে করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন দীর্ঘ সময় গড়াতে পারে। বেশ ক‘টি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। তাছাড়া রায় হওয়া মামলার সই মোহরের নকলের কপি সংগ্রহ, মামলা ফাইলিং করা, আদালতের শুনানী নিয়ে রয়েছে নানা প্রক্রিয়া। এছাড়া কালেদা জিয়াকে কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হবে এমন কথাও শুনা যাচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকদের মামলা নিয়ে বিচারকগণ অনেক সময় বিব্রতবোধ করেন। এনিয়ে সময় ক্ষেপণ হতে পারে। অন্য মামলায় শোন এ্যারেস্ট না দেখানো হলে হয়তো কারামুক্তি দ্রæত হতে পারেনা হয় বিলম্ব হবে। তিনি বলেন, মাইনাস ফর্মূলা বাঙালী জাতি কখনো মেনে নেয়নি। এখনো সম্ভব হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেছেন, কোন ঘটনার প্রভাব ছাড়া কোন কিছু ঘটেনা। এ রায় নিয়ে নানা ভাবে প্রভাব পড়বে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার সমীচীন নহে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন সন্ত্রাসী ধরছেন, তাহলে কি আইনশৃংখলা বাহিনী এতোদিন সন্ত্রাসী ধরতে পারেননি। বিএনপিতে সঙ্কট আছে, আওয়ামীলীগেও সংকট আছে। আওয়ামীলীগ ঘর সামলে নির্বাচন করবেন, না সামলে নির্বাচনে যাবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে ঘর না সামলিয়ে নির্বাচনে গেলে চ্যালেঞ্জ হবে। ব্যাংক খাতে, শেয়ার বাজার নিয়ে হাজার-হাজার কোটি টাকার তদন্ত নিয়ে গড়িমসি চলছে। সেখানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোটি টাকার মামলা নিয়ে উচ্ছ¡সিত হওয়ার কিছুই নেই। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাবেক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ইনকিলাবকে বলেছেন, দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া নির্দেশনায় আমাদের মহা-সচিব সকল নেতা ও কর্মীদের নিকট সুন্দরভাবে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে সিনিয়র নেত্রীবৃন্দ কর্মসূচী দিচ্ছেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। সরকারী দল নানাভাবে উস্কানী দিচ্ছে। তারপরেও বিএনপি এখন উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ। আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে, বিক্ষোভে বাধা দিলে এবং বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিলম্ব করা হলে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কোন পথে যাবে তা সময়ে বলে দিবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ