Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চার দিন পর আদালতের নির্দেশে ডিভিশন পেলেন খালেদা জিয়া

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে চার দিন পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন (সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর সুবিধা) পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখারউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, আদালতের নির্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এ ডিভিশন পেয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দিতে নির্দেশ দেন।
কারাগারের ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রায়ের পর বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল পুরনো কারাগারের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে, যা আগে একজন কারা কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন। এখন তাকে সেখানে থেকে দোতলার অন্য একটি কক্ষে নেয়া হয়েছে। দোতলার ওই কক্ষটি এক সময় ব্যবহৃত হত কারাগারের ডে-কেয়ার সেন্টার হিসেবে। গত শনিবার কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। তাকে একজন সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে। নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে নেত্রীকে। সেখানে অন্য কোনো কারাবন্দি নেই। এটি অন্যায়, আমরা এ বিষয়ে আদালতে যাব। এর পর গতকাল রোববার আদালতে খালেদা জিয়ার জন্য জেলে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বিধি অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। তাই তার ডিভিশন আবেদন মঞ্জুর করা হোক। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ডিভিশনের চেয়েও বেশি মর্যাদা পাচ্ছেন। তার পক্ষে ডিভিশন আবেদনটি মঞ্জুর করা হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এ সময় আদালতে খালেদার আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, জিয়াউদ্দিন জিয়া, এম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলার রায়টি যেন দ্রæত কার্যকর করা হয় এবং আদালত বেগম খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে যে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন তা যেন রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এদিক-ওদিক না তাকিয়ে যাবেন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার পর যেন পুরনো রূপে ফিরেছে ওই এলাকা। কারাগার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কারাগারের ২ নম্বর গেটের বিপরীতে সড়কে বসানো হয়েছে পুলিশের ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেড মাড়িয়ে জনসাধারণের সামনে যাওয়া নিষেধ। তাই রাস্তাটি ধরে নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরতেও অনেককে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। গতকাল রোববার স্থানীয় বাসিন্দা আমির আলী জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখার পর আমরা নিজেদের বাড়ি-ঘরে ঢুকতে চাইলেই নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। বাসা থেকে বের হতে গেলে নানা জবাবদিহিতে পড়তে হয়। এ কারণে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আমরা ঘর থেকে বের হই না। কারাগারের ২ নম্বর গেটের পাশেই আনোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এখানকার শিক্ষার্থীরাও বলেছেন পুরনো ভোগান্তি ফিরে আসার কথা। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শুভ ও শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, স্কুল ড্রেস ছাড়া এই এলাকায় প্রবেশ করা যায় না। আমাদের স্কুলে কাজ থাকলেও যাওয়া যায় না। আর আমাদের অভিভাবকরা তো যেতেই পারেন না।
সাবেক ডিআইজি প্রিজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামছুল হায়দার সিদ্দিকী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত হলে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। ডিভিশন পাওয়ার জন্য হয় আদালতে আবেদন করতে হবে অথবা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। পরে জেল কর্র্তপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ডিভিশন প্রদান করবে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও সাবেক একজন সেনা প্রধানের স্ত্রী কেন ডিভিশন পাবেন না এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামছুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, জেল কোডে এ ব্যাপারে ডিভিশন দেয়ার কোন নির্দেশনা নেই। তাছাড়া তিনি যে রাজনৈতিক দলের প্রধান সে দলের কোন সদস্য জাতীয় সংসদের সদস্যও নন, এ জন্য ডিভিশন পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তার পক্ষ থেকে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে দ্রæত সময়ের সধ্যে তিনি ডিভিশন পেতে পারেন। যেহেতু তিনি নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ