Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাবিতে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ‘মানসিক ভারসাম্য’ হারাল শিক্ষার্থী

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জাবি সংবাদদাতা : ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, গুম করে ফেলবে। মরার আগে একটু মায়ের সাথে দেখা করতে দেন ভাই।’ বন্ধুদের ভাই ভাই করে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিল র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রাহমান। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে’র ১ম বর্ষের (৪৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। সে বিভাগের ২য় বর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের দ্বারা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে বলে জানা যায়।
মিজানুরের বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, ‘বুধবার দুপুরে বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে পরিচিত হওয়ার জন্য (সিটিং) ডাকে। সেখানে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন (র‌্যাগিং) করে। এ সময় মিজানুরকেও অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়াসহ শারীরিক নির্যাতন করে। এছাড়া সংযুক্ত শহীদ সালাম বরকত হল ছেড়ে আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হলে তাকে আসতে বলে। না আসলে তাকে হত্যা ও গুম করার হুমকি দেয়। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও তাকে বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা মানসিক নির্যাতন ও হুমকি দেয়। যার কারণে নবীন শিক্ষার্থী মিজানুর ভয় পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মিজানুরের সহপাঠীদের সূত্রে আরো জানা যায়, ‘এ ঘটনার পর মিজানুর বৃহস্পতিবার রাতে থেকে হলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে দেখতে আসলে ‘তুই আমার জীবন শেষ করেছিস, তোরা আমাকে মেরে ফেলবি’ এমন অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এমনকি শুক্রবার দুপুরে সে তার বন্ধুদেকে বলে ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ‘গুম করে ফেলবে। মরার আগে একটু মায়ের সাথে দেখা করতে দেন ভাই ’।
এমন অবস্থায় পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে রাতে তার পিতা ও চাচা ক্যাম্পাসে আসে। তারপর ডাক্তারের কাছে নেওয়ার জন্য গাড়িতে উঠাতে চাইলে উদ্ভট আচরণ করে মিজানুর। এদিকে মিজানুর তারা বাবা ও চাচাকে প্রথমে চিনতে পারছিলনা। অনেক পরে চিনেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ছেলেকে পাঠিয়ে এমন অবস্থা দেখে চাপা কান্নায় ভেঙে পড়ে মিজানুরের পিতা।’
গতকাল চাচা জয়নাল আবেদীনের কাছে মিজানুরের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিজানুরের অবস্থা এখন আরো খারাপ। সে কোন স্বজনকেই চিনতে পারছে না। এমনকি কাউকে দেখলেই সে ভয় পাচ্ছে।’ উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মানসিক ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
এদিকে র‌্যাগিংয়ের সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে শুক্রবার রাত ১টার দিকে বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের মামুন, হিমেল, সুদীপ্ত ও ক্লাস প্রতিনিধি আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। তবে তাদের কথা শুনে যতোটুকু বোঝা গেছে তারা র‌্যাগিংয়ের সাথে জাড়িত ছিল। ’
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রবিবার সকালে সাড়ে ৯টায় একাডেমিক বৈঠক বসবে। সেখানে ঘটনার সাথে জাড়িতদের আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন জানাবো।’
এদিকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনার জাড়িতদের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।



 

Show all comments
  • সৌরভ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে এই র‌্যাগিং বন্ধ করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩৬ এএম says : 0
    এই র্যা গিং এর প্রচলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে কিন্তু এমন অসভ্যতা কিংবা ক্ষতিকারক কোন র্যাকগিং আমরা করতে দেখিনি। আমাদের সময় প্রথম দিনই শুধু র্যা গিং হতো তাও আবার রং খেলার মত করে পানি ছিটিনো এটাই ছিল সর্বউচ্চ র্যা গিং। এনিয়েও নতুন ছাত্র ছাত্রীদের আভিযোগ চলতে থাকে তখন এমন রং ব্যাবহার করা হত যা নাকি শুকানোর সাথে সাথে রঙও চলে যেত। আমাদের সময় এভাবেই নতুন ছাত্র ছাত্রীদের সাথে র্যামগিং করা হতো তাদের যাতে কোন রকম অনিষ্ট বা কোন রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হতে হয়। তবে কথার মাধ্যমে নাজেহাল করা হত তাও আবার সাময়িক ভাবে মাত্র প্রথম দিনে। আমার এখন স্মরণ হয় আমি আমার প্রথমদিনে র্যা গিং এর ভয়ে ক্লাশে যাইনি। আজকাল র্যা গিং এর নামে যেভাবে অত্যাচার করা হয় এটা একটা অসভ্যদেশেই সম্ভব বলে বিজ্ঞজনের মন্তব্য। আজ দেশে জনগণের সরকার তারপরও কিভাবে এটা চলছে দেখতে গিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রযালোচনা করে দেখা যায় যারা এসব করছে তাদের বেশীরভাগই সরকারি দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। তাই এদের বিচার হচ্ছেনা বলেই এদের পশুচরিত্রের আচরণ দিন দিন বেরেই চলেছে। এরা নবাগতদের সাথে যা করছে সেটা পশুকেও হারমানাচ্ছে বলে বিজ্ঞজনের মন্তব্য। এখন সরকার যদি এদেরকে আইনের আওতায় না আনতে পারেন নিজেদের লোক বলে, তাহলে একদিন মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা মানষিক রোগী হতে থাকবে আর দেশ আস্তে আস্তে চলে যাবে রসাতলে এটাই বিজ্ঞজনের মন্তব্য। আল্লাহ্‌ আমাদের সন্তানদেরকে জালীম, জঙ্গীবাজ ও সন্ত্রাসী ছাত্রদের হাত থেকে, সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • H.M Abdur Rahim ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৫১ এএম says : 0
    এগুলো অবশ্যই বন্দ করতে হবে এবং জঘন্যতম কর্মের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ