Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যুক্ত হবে চীন, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সমীক্ষা সম্পন্ন

বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের রেল যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার/আবু তাহের আনসারী পঞ্চগড় থেকে : বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ট্রেন যোগে ভারত নেপাল ভুটান হয়ে চীনে যাওয়ার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার। দিনাজপুর থেকে ঢাকা যেতে যে সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে চীনে পৌছে দিবে বাংলাদেশ রেল। ভারতে যেতে সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট আর নেপাল ও ভুটানে যেতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ ব্যাপারে প্রতিবেশী তিনটি দেশের সম্মতিও মিলেছে। সরকার এরই মধ্যে পঞ্চগড় ষ্টেশন থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত সমীক্ষাও চালিয়েছে। সমীক্ষামতে ৫৭ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপনের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাশ হলেই কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই প্রক্রিয়ায় চীনকেও যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে মালামাল আমদানীর পাশাপাশি ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করছে।
রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা রুটে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হবে। এই রুটের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে সোনা মসজিদ ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ফলে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে। স্থল বন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে যাত্রী ছাড়াও আমদানি-রফতানি মালামাল পরিবহণ সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য ইনকিলাবকে বলেন, ‘চারটি দেশের সঙ্গে রেলপথে আমাদের এক করতে পারে বাংলাবান্ধা। সেই জন্য পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত আমরা নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করবো। আমাদের অংশে আমরা করবো ভারতের অংশে ভারত করবে। যেমন আখাউড়া-আগরতলা। নেপাল ভূটানের সঙ্গে রেল সংযোগ দেবে ভারত।’
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের পরিত্যক্ত বিভিন্ন রুটে রেল সংযোগ পুন:স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে বৃহত্তর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে নতুন রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের দুরত্ব অত্যন্ত কম। এরমধ্যে বাংলাবান্ধা থেকে কয়েকশ গজের মধ্যেই ভারত সীমান্ত। এই স্থলবন্দর থেকে নেপালের দুরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। ভুটানের দুরত্ব মাত্র ৬৮ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিলোমিটার। সম্ভাবনাময় এই বন্দরটি ৫টি বন্ধু-প্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। সেই জন্যই বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপন করতে চায় সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমদানী-রপ্তানী, চিকিৎসা এবং ভ্রমণে স্বল্প সময়ে কম খরচে যাতায়াত করতে পারবে সাধারণ মানুষ। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে চার দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন হলে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।
জানা গেছে, মূল প্রকল্প শুরুর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল জোন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। জুন ২০১৯ সালের মধেই ১২ কোটি টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হবে। এর পরেই নেওয়া হবে মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের আশা করছে বাংলাদেশ সরকার।
তেঁতুলিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে চারটি দেশে আমদানী-রপ্তানী,ভ্রমণ সহ নানা কাজে মানুষ যাতায়াত করছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি স্থানীয়দের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। রেল যোগাযোগ শুরু হলে রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। সেই সাথে স্থানীয়দের মধ্যে আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। তেঁতুলিয়াবাসী দীর্ঘদিন থেকে ট্রেন চলাচলের দাবী জানিয়ে আসছে।’
বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর আমদানী রপ্তানীকারক এসোসিয়শনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে খুব সহজেই চারটি দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্ভব। আমরা সরকারকে রেল লাইন স্থাপনের আবেদন জানিয়ে আসছি। রেল লাইন স্থাপন হলে বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন এর সাথে আন্তঃ বানিজ্য সম্প্রসারিত হবে বলে পঞ্চগড় তথা উত্তরাঞ্চলের জনগনের প্রত্যাশা। তাহলে বাংলাবান্ধা স্থুল ইমিগ্রেশন থেকে সরকার প্রচুর পরিমানে রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে পঞ্চগড় তথা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ