Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাসে ১৩ বার বিদেশ ভ্রমণ এমডির

বাপেক্সের প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সরকারি ভাবে বরাদ্দ দিলেও সময় মতো তা ব্যয় করতে পারছে না অনুসন্ধান-উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সাত মাসে বেশিরভাগ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনও কোনও প্রকল্পের একটি টাকাও ব্যয় করতে পারেনি এ প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সরকারি প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানাগেছে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌঃ মোঃ নওশাদ ইসলাম বেশির ভাগই বিদেশে কাটান। প্রকল্প বান্তবায়নের ধীর গতির কারণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলে জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকতা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাপেক্সের প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে এ বছরের জুনের মধ্যে প্রতিদিন ১৬২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত বাপেক্সের প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের এক যুগ্মসচিব বলেন, সরকার এ খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে,গ্রাহকের অর্থে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গড়ে উঠেছে। এই তহবিল থেকেও প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমন বরাদ্দ দেওয়ার পরও কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এক বৈঠকে প্রকল্প বান্তবায়নের ধীর গতির কারণে সংশ্লিষ্টদের প্রতিত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় জ্বালানি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বরাবরই কম। তিনি বলেন, বাপেক্সকে কাজ করার বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হলে খরচ বেড়ে যায়। তাই খরচ না বাড়িয়ে দ্রæত বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায় তার চেষ্টা করা উচিত। এই অবস্থায় বাপেক্সের একটি কর্মপরিকল্পনা করা উচিত। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কী কী সমস্যা হচ্ছে এবং তা সমাধানের জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নির্ধারণ করা দরকার। জালানী ও খানিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্সকর্তা বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌঃ মোঃ নওশাদ ইসলাম বেশির ভাগই বিদেশে ভ্রমণ করেন। প্রধান কর্মকর্তা বেশি সময় বিদেশ ভ্রমণ করলে কি কর্মচারীরা কাজ করে। সে কারণে প্রকল্প বান্তবায়ন ধীর গতিতে। আর আমাদের এমডি স্যার মাসে ১ থেকে ১৪বার বিদেশ যান।
জ্বালানি বিভাগ সূক্রে জানা গেছে, এডিপিভুক্ত ২-ডি সাইসমিক সার্ভের ওভার এক্সপ্লোরেশন বøক ৩বি, ৬বি ও ৭ শীর্ষক প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১৮৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের কোনও অর্থ ব্যয় করতে পারেনি বাপেক্স। দ্রæত এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। রূপকল্প-৯: ২ডি সাইসমিক প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে এই প্রকল্পের ৬৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনও কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি বাপেক্স। গত সাত মাসে এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। একে হতাশাজনক হার বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রকল্পের অগ্রগতি দ্রæত করতে কর্মপরিকল্পনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিতাস, হবিগঞ্জ, নরসিংদী ও বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে ৭টি কূপের ওয়ার্কওভার প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে এ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনও অর্থ ব্যয় হয়নি। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫ দশমিক ৫৩ ভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। রূপকল্প-৫ খনন প্রকল্প: ২টি অনুসন্ধান কূপ (শ্রীকাইল নর্থ-১ ও মোবারকপুর সাউথ ইস্ট-১), ১টি মূল্যায়ন এবং উন্নয়ন কূপ ( বেগমগঞ্জ-৩) নামের প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩০ হাজার লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি বছর ৪২ কোটি ৬ লাখ টাকা খরচ করার কথা থাকলেও গত সাত মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি বাপেক্স। প্রকল্পটির মাধ্যমে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে ২টি অনুসন্ধান কূপ, ১টি উন্নয়ন কূপ এবং ১টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার কথা। এর মাধ্যমে ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। রূপকল্প ৪ খনন প্রকল্প : ২টি অনুসন্ধান কূপ (শাহবাজপুর পূর্ব-১ ও ভোলা উত্তর-১) এবং ২টি ওয়ার্কওভার কূপ শাহবাজপুর নামের প্রকল্পটির চলতি বছর বরাদ্দ ছিল ২২৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬৫৭ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯৫ ভাগ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। রূপকল্প ৩ খনন প্রকল্প: ৪টি অনুসন্ধান কূপ (কসবা-১, মাদারগঞ্জ-১, জামালপুর-১ ও শৈলকুপা-১) শীর্ষক প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ১১ ভাগ। এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হলে জুনের মধ্যে প্রতিদিন ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রূপকল্প ২ খনন প্রকল্প: ৪টি অনুসন্ধান কূপ (সালদা নদী দক্ষিণ-১, সেমুতাং-দক্ষিণ-১, বাতচিয়া-১ ও সালদা নদী পূর্ব-১) শীর্ষক প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১২০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৩ লাখ টাকা। এর অগ্রগতি মাত্র দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জুনের মধ্যে প্রতিদিন ২৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো। রূপকল্প ১ খনন প্রকল্প: ৩টি অনুসন্ধান কূপ (হারারগঞ্জ-১, শ্রীকাইল ইস্ট-১ ও সালদা নর্থ-১) ও ২টি উন্নয়ন কূপ (শ্রীকাইল নর্থ-২ ও কসবা-২) শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দশমিক ২৭ ভাগ। এ বাস্তায়িত হলে প্রতিদিন ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো। এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌঃ মোঃ নওশাদ ইসলাম ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ