Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্ভাবনাময় রফতানি বাজার নেপাল

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, ফার্নিচার, এগ্রো ফুড ভালো চলছে। পাশাপাশি প্লাস্টিক, হোম টেক্সটাইল, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: হিমালয়ের দেশ নেপাল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি নেপাল। বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্টই নেপালের মূল প্রতীক। প্রতিবছর মাউন্ট এভারেস্টের আকর্ষণে নেপাল আসে লাখ লাখ পর্যটক। মন্দির,স্বচ্ছ হ্্রদ, সারি সারি সবুজ উপত্যকা, বন্য প্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র , আকাশ ছোঁয়া পাহাড় কিংবা রাজপ্রাসদ সমূহ সব কিছুতেই ছড়িয়ে আছে মুগ্ধতা। আর এ মুগ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য উকি দেয় অপার সম্ভাবনা। এরইমধ্যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে নেপাল। বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের বড় বাজার এখন নেপাল। এছাড়া নেপালের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে ভারতের পণ্য ব্যবহার করছে। তারা এখন নতুন ভালো মানের পণ্য খুঁজছে। আর তাই নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদাড় হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নেপালে বাংলাদেশি হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশটি শতভাগ আমদানি নির্ভর। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য আসে ভারত থেকে। বাকিটা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসে। সুতরাং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য এখানে বিশাল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৭৮টি পণ্য নেপালের বাজারে রয়েছে। হাইকমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এখানে এসেছে। গত অর্থবছরে এটি চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এখানে ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, ফার্নিচার, এগ্রো ফুড ভালো চলছে। পাশাপাশি প্লাস্টিক, হোম টেক্সটাইল, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
গার্মেন্টস্ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রবাসী বাংলাদেশি হিমেল খান বলেন, নেপাল বাংলাদেশের গার্মেন্টস্ পণ্যের একটি বড় রপ্তানির বাজার হতে পারে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো আর্থিক লেনদেনের। নেপাল থেকে বাংলাদেশে সরাসরি টাকা পাঠানোর কোন মাধ্যম নেই। পাশাপাশি এশিয়ার অধিকাংশ দেশের মুদ্রা বিনিময় করার সুযোগ থাকলেও নেপালে বাংলাদেশী টাকা বিনিময়ের সুযোগ নেই। তাছাড়া নেপাল ছোট বাজার বলে আমাদের সরকার হয়তো খুব একটা আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, আর্থিক লেনদেনের সমস্যাটি সমাধান করা গেলে নেপাল বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির বড় বাজার হয়ে উঠবে।
নেপালের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনার ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী শিল্পমন্ত্রী এবং ২০১৭ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী নেপালী কমিউনিস্ট পার্টির নর্বনির্বাচিত সংসদ সদস্য (ভক্তপুর আস) মহেশ বাসনেত বলেন, নেপালের সাথে বাংলাদেশের বণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির জন্য যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে যেন নতুন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে সে জন্য আলোচনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভূমিকম্প পরবর্তি নেপাল বির্নিমানের বাংলাদেশের ভূমিকা অভাবনীয়। নেপালীরা বাংলাদেশের মানুষকে কাছের বন্ধু মনে করে। প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষার জন্য নেপাল থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে।
নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্যাকেটজাত খাবার, পাট, হোমটেক্স পণ্য, ফার্নিচার সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স ও গৃহস্থলি পণ্য সামগ্রী, ওষুধ, মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নেপালের বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্টস্, সিরামিকসহ আরো বেশ কিছু পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, স্থল পথে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন ভারতের ভেতর দিয়ে পণ্য যাতায়াতে ভারত ঝামেলা সৃষ্টি করে। আসলে এই ধারণা একেবারেই ভুল। বাংলাবান্ধায় নেপালের ওয়্যার হাউস আছে। সেখান থেকে সরাসরি কাঠমান্ডুতে পণ্য চলে আসতে পারে। মাঝে ভারতে কোনো চেক করা হয় না। নেপালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, এ ছাড়াও আরেকটি ধারণা রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মনে করেন নেপালের মানুষের মাথাপিছু আয় কম। সুতরাং এখানে ব্যবসা ভালো হবে না। কিন্তু এটিও সঠিক নয়। নেপালিরা সৌখিন জীবনযাপন করেন। তারা ভালো মানের পণ্যকে প্রাধান্য দেয়।
সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে সফররত মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (মিয়াযাব)-এর সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এবং সদ্য বিদায়ী শিল্পমন্ত্রী মহেশ বাসনেত এ কথা বলেন।



 

Show all comments
  • Ashraf khan ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৫৯ পিএম says : 0
    নেপাল থেকে গবাদি পশু আমদানিকরে তা রপতানি করতে চাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রফতানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ