Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নার রোল

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

মালেক মল্লিক : রায় শুনে আদালত প্রাঙ্গণে কাঁদলেন বিএনপি নেতা ও আইনজীবীরা। অনেকেই বার বার চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছিলেন না। দু’চোখে বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। কান্না গোপন করতে আবার চোখ মুছছিলেন অনেকেই। যেন মুহূর্তেই স্বজন হারানোর বেদনায় আবেগাপ্লুত হয়ে যান তারা। অনেকেই কোন কথা না বলে চুপচাপ কিছুক্ষণ আদালত প্রাঙ্গণে বসে থাকেন। শোকে মূহ্যমাণ খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও স্বজনেরা। গতকাল এমনি অবস্থা দেখা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারক ড. মো. আখতাতারুজ্জামান রায় ঘোষণার পর।
গতকাল দুপুর ১টায় ৫২ মিনিটে আদালতে প্রবেশ করেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ২টা ১১ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। পিন পতন নিরবতার মধ্যে বিশেষ আদালত রায় ঘোষণা করেন। এসময় এজলাসের বাম পাশে সামনের দিকে সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বসা ছিলেন। ডানপাশে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। বিচারকের মুখোমুখি সামনের সাড়িতে বসা ছিলেন আসামী পক্ষের আইনজীবীরা। এসময় আদালতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ আদালতে খালেদা প্রবেশ করার পূর্বেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ও সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতে প্রবেশ করেন। রায় ঘোষণার পর বার বার চোখ মুছতে দেখা যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এছাড়াও বার চোখ মুছছিলেন স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া কোন কথা না বলে শুধু বলেন, এটা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ।
এছাড়াও কাঁদতে বিএনপি আইনজীবী নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, সাবেক এমপি আফিয়া আশ্রাফী পাপিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কয়েকজন আইনজীবীও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই মামলায় রায় ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আপিল করবো। এসময় তার চোখে বেয়ে পানি পড়ছিল। রায় ঘোষনার সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলাম খান,আমীর খসরু মাহমুদসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ হোসন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজ্জাক খান, মীর মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ সিনিয়র আইনজীবীরা উপিিস্থত ছিলেন।
খালেদার জিয়ার দুই গাড়িচালকের কান্না
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের রায় শোনার পর কাঁদলেন তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক জালাল উদ্দিন। ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষটি প্রতিদিন খালেদা জিয়াকে সব জায়গায় আনানেয়া করতেন। এছাড়া আরেক চালক আমিনও খালেদা জিয়ার গাড়ি চালাতেন। গতকাল খালেদা জিয়াকে আদালতে নিয়ে যান আমিন। এ সময় বাইরে বকশিবাজার মোড়ে অন্য গাড়িতে বসা ছিলেন জালাল উদ্দিন। বেলা দুইটার পর খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার কথা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জালাল উদ্দিন। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে গøাসের ফাঁক দিয়ে কান্নার দৃশ্য দেখেন সাংবাদিকরা। সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার আগেই বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছছিলেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১১বছর ধরে থাকা নরসিংদীর জালাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কি বলবো বলেন। মানতে পারছি না। কিভাবে ম্যাডাম থাকবেন। এ কথা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছিলো। পরে কয়েকজন আইনজীবী এগিয়ে এসে কথা বলেন। তাকে শান্তনা দেন। কিছুক্ষণ পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জালালের গাড়ির কাছে আসলে পাশে থেকে একজন কান্নার বিষয়টি তুললে তারও চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। বলেন, কি করবে বলেন। সে তো ম্যাডামের পরিবারের মত হয়ে গেছেন। এদিকে, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগতসহ তার বহরের সব গাড়ি বকশিবাজারের আদালত থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় তার অন্য গাড়িচালক আমিনকে কান্না করতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ গাড়ি আটকে থাকায় কাছে গিয়ে তাকে কান্না করতে দেখা যায়। অল্প কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে চলে যান আমিন।
কাঁদলেন রিজভী
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন দলটির সিনয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শুধুমাত্র সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, তাকে (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক হয়রানি করতে, বিপন্ন-বিপর্যস্ত করতে এই মিথ্যা বানোয়াট মামলা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই আমি তাকে জোর করে হলেও শাস্তি দেবো, অন্য কিছু নয়।
স্বজনেরা কাদলেন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতের রায় শুনতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেলা পৌনে ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে বের হন। আদালতে যাওয়ার সময় তার বাসভবনে হাজির ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা। সেখানে আসেন খালেদা জিয়ার বড় বোন, বোনের স্বামী, ভাগ্নে, ভাই শামীম ইস্কান্দর, দুই ভাইয়ের স্ত্রী, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর শ্বশুর বাড়ির স্বজনেরা। বাসা থেকে খালেদা জিয়া বের হয়ে গাড়ির ওঠার সময় স্বজনেরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের শান্তনা দেন। তিনি সবাইকে তার জন্য দোয়া করতে বলেন।



 

Show all comments
  • সোলায়মান ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:২৭ এএম says : 0
    ওটা ছিলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:২৮ এএম says : 2
    কান্নাকাটি না করে নিজেদেরকে ও দলকে সংগঠিত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৮:০৭ এএম says : 0
    Madam khaleda zia jodi mittha mamlar ray a karagar a jeye thaken,tahole Allah jeno tar bichar koren.
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Taleb ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২০ পিএম says : 0
    .....................!!! ব্যাংক লুটের বিচার হয় না!!!!!!!....................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ