পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদিন মানুষের শঙ্কা-উৎকণ্ঠা কী ঘটতে যাচ্ছে : কোটি চোখ ছিল খালেদা জিয়ার দিকে
শফিউল আলম : ‘সকাল ৭টায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঘর থেকে বের হই। এই বিকাল বেলা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে ভাড়া যা মিলেছে বাসার বাজার খরচও পোষাবে না। মালিকের জমা, গ্যাসের দাম গাঁটের টাকা দিয়ে পূরণ করতে হবে। শহরের রাস্তাঘাটে তো তেমন মানুষই দেখি না। যাত্রী পাব কই’। গতকাল (বৃহস্পতিবার) কথাগুলো বললেন অটোরিকশা চালক মোঃ ইলিয়াস। বাড়ি ভোলা জেলার মনপুরায়। বেসরকারি ব্যাংককর্মী মাসুদ জানালেন, আজ সারাদিনে তেমন লেনদেন হয়নি। অফিস ছুটি শেষে যাবেন গ্রামের বাড়ি দোহাজারীতে। তবে বাস চলছে না। তাই লোকাল ট্রেনে যেতে হবে’। এসএসসি পরীক্ষায় আজ নির্ধারিত ইসলাম ধর্ম বিষয়ে পরীক্ষা শেষে ছেলে রাওহাকে কিভাবে ফিরবেন গত ক’দিন দুশ্চিন্তায় ছিলেন পিতা খোকন। অবশেষে ঘরে ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
এমনিভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র সারাদিন পেরিয়ে সন্ধ্যা অবধি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিরাজ করে সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, শঙ্কা-আতঙ্কÑ কী ঘটতে যাচ্ছে। ঢাকার পরিস্থিতি কি। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশা, বয়সের কোটি চোখ ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিকেই। দুপুর গড়ানোর সময়ে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদÐ এবং তাকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর খবর মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে জনমনে আতঙ্ক ভাব আরও বেড়ে চলে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহানগরী ও শহরতলী ছিল অনেকটা নির্জীব।
বেগম জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিশেষত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি তৎপরতার ফলে অচলদশায় পড়েছে চট্টগ্রামের স্বাভাবিক জনজীবন। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানায় স্থবিরতা নেমে আসে। সকাল থেকেই নগরীর অধিকাংশ বিপণিকেন্দ্র, দোকান-পাট, মার্কেট বন্ধ থাকে। দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনারসহ পণ্যসামগ্রী ওঠানামা হলেও খালাস ডেলিভারী পরিবহন খুবই আংশিক হয়েছে। লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি চলছে হাতেগোনা। সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা অনেকাংশে অচল থাকার কারণে চট্টগ্রামে গতকাল একদিনেই শত কোটি টাকার লোকসান ও গচ্ছা হয়েছে। বাস-কোচ চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ও যাত্রীর ভিড় ছিল।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ ও সওদাগরী পাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জে মন্দা বিরাজ করে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলো ছিল এই ভরা মওসুমেও পর্যটকশূণ্য। চট্টগ্রাম নগরী হয়ে কক্সবাজার, তিনটি পার্বত্য জেলা-উপজেলার সড়ক-মহাসড়কের সকল রুটে বাস-মিনিবাস কোথাও আংশিক চলছে কোথাও বন্ধ থাকে। মহানগরীতে গণপরিবহন চলাচল ছিল কম, যাত্রীর সংখ্যাও কম। তবে দূরপাল্লার যানবাহনের অভাবে হাজার হাজার মানুষকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও তেমন সচল ছিল না। তাছাড়া উৎকণ্ঠিত অগণিত মানুষ গত বুধবার নগরী ছেড়ে ঘরমুখী হয়, আজ ও কাল সাপ্তাহিক ছুটির সুবাদে।
এদিকে গতকাল ভোরবেলা থেকেই চট্টগ্রামের সচেতন সাধারণ মানুষ জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্রগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া মামলার রায়ের পরিস্থিতি, কঠোর নিরাপত্তা টহল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এপিঠ-ওপিঠ আলোচনা-পর্যালোচনায় মেতে থাকেন।
দুপুর পর্যন্ত সাধারণ মানুষ অনেককেই মতামত ও ধারণা ব্যক্ত করতে শোনা গেছে, বেগম জিয়াকে কি শেষ পর্যন্ত কারাদÐ দেয়া হবে? তিনি কখন জামিন পেতে পারেন? তাহলে কী গৃহবন্দী (গুলশানের বাসভবনে) হবেন নাকি কারাগারে পাঠানো হবে? ঘুরেফিরে উঠে আসে জনমুখে এসব নানা প্রশ্ন আর জল্পনা। গতকালের দৈনিক ইনকিলাবের প্রধান শিরোনাম- ‘সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া : কারাগারের ভয়ে ভীত নই’ পত্রিকার পাঠকমহলে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।