পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালদ্বীপে রাজনৈতিক গোলযোগ চীন ও ভারতের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট : মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দমনের চেষ্টা ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রটির জন্য এক ট্র্য্রাজেডি, তবে এর প্রভাব দেশটির উপক‚ল ছাড়িয়ে বহদূর পর্যন্ত প্রসারিত হবে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন তার নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থনে দেশের পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। তিনি পার্লামেন্ট বন্ধ, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা এবং প্রধান বিচারপতি ও তার বিরোধিতাকারী নেতাদের আটক করেছেন। তিনি তার স্ব-অভ্যুত্থানে সংবিধানকে অগ্রাহ্য করেছেন ও আইনের শাসনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি তার শাসন বিরোধীদের বার বার দমনের চেষ্টা করেছেন। তার এবারের চেষ্টা সফল হয়েছে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
তবে এ সব স্থানীয় রাজনৈতিক ঘটনাবলীর একটি ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ভারত মহাসাগরে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্ব›িদ্বতা ক্রমবর্ধমান, আর মালদ্বীপের অবস্থান তার মধ্যে।
মালদ্বীপের এ অভ্যুত্থানের পিছনে কি বিদেশী শক্তিরা থাকতে পারে? এটা আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? অন্যদেশগুলোর সাড়া কি ধরনের হতে পারে?
এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে ভারত ,যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মত বৃহৎ শক্তিগুলো যাদের এ অঞ্চলে স্বার্থ আছে, তারা মালদ্বীপের ঘটনায় সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছে। কিন্তু এ অভ্যুত্থানের ফলাফল তাদের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তারা ঘটনাবলীর দিকে তীক্ষè নজর রাখছে।
এ অঞ্চলের বৃহৎ শক্তি ভারত আঞ্চলিক শান্তি রক্ষকের কাজ করছে। অতীতে যখন নিজের নিরাপত্তা বা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি সৃষ্টি হয়েছে , ভারত হস্তক্ষেপ করেছে। ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপের রাজধানীতে একদল ভাড়াটে সৈন্য হামলা করলে ভারতের ছত্রী সেনারা সরকারকে রক্ষায় এগিয়ে আসে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মালদ্বীপের বিরোধী নেতারা , যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পুনরায় হস্তক্ষেপ করার জন্য ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তবে মালদ্বীপের ব্যাপারে নয়াদিল্লীর বড় উদ্বেগ গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি নয়, তার উদ্বেগ চীনের দিকে মালদ্বীপের ঝুঁকে পড়া, বিশেষ করে চীনের সেখানে নৌ ও বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে। মালদ্বীপের কাছে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি নিয়ে আলোচনা চলছে যেমন চীন তৈরি করেছে দক্ষিণ চীন সাগরে। মালদ্বীপে একটি চীনা নৌ ঘাঁটি গোটা ভারত মহাসাগরে নৌ ভারসাম্য বিপর্যস্ত করতে পারে। তা ভারতের মূল ভ‚খন্ড ও কাছে দিয়েগো গার্সিয়ায় মার্কিন নৌ ঘাঁটির জন্য সম্ভাব্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
এতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না যে নয়াদিল্লী ইয়ামিনকে দেখতে চায় না, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারতের কিছু করার সুযোগ আসলে একেবারে সীমিত। ইয়ামিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রকাশ্য সামরিক পদক্ষেপ হবে নজিরবিহীন ঘটনা। সাধারণ ভাবে ভারত আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং ঐতিহ্যগত ভাবে শাসক পরিবর্তনের বিরোধী।
ইয়ামিন ক্ষমতায় থাকাকালে নয়া দিল্লী মালদ্বীপের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও আরো দূরত¦ সৃষ্টির ঝুঁকি নিতে পারে না। ১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রের সপক্ষে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে বড় রকমের ভুল হিসেবে দেখা হয় যা তাদেরকে চীনা অস্ত্র সংগ্রহের দিকে চালিত করে। আবার সংবিধান নিয়ে বিরোধে ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ দেশটিকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার দিকে ঠেলে দেয়।
সংক্ষেপে, ইয়ামিনকে ক্ষমতাচ্যুত করা অথবা চ‚ড়ান্ত ভাবে তাকে চীনের কাছ থেকে সরিয়ে আনা নয়াদিল্লীর জন্য কঠিন। যতক্ষণ না ইয়ামিন চীনের সাথে তার সম্পর্কের কারণে বাড়াবাড়ি না করে সীমা অতিক্রম না করছেন , ততক্ষণ নয়াদিল্লীর কাছে তিনি উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাবেন। তবে এ সমীকরণে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশ হিসেবকে পাল্টে দিতে পারে।
মালদ্বীপের ঘটনাবলী বেইজিংকেও উদ্বিগ্ন করেছে। ইয়ামিন চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি বিতর্কিত মালে বিমান বন্দর প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প চীনা কোম্পানিগুলোকে দিয়েছেন। কিন্তু মালদ্বীপের গোলযোগ, যা ইয়ামিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে, এ অঞ্চলে চীনের অনেক সম্পর্কের ভঙ্গুর দিকের প্রতি ইঙ্গিত করে। ২০১৫ সালে গণতন্ত্রের দিকে মিয়ানমারের যাত্রার ফলে চীনের বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রকল্প বাতিল হয়্। এরপর চীন পাশ্চাত্য দেশগুলো ও ভারতের সাথে অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। একই বছরে শ্রীলংকার কর্ত্তৃ¦ পরায়ণ প্রেসিডেন্ট রাজাপাক্ষে নির্বাচনে বিস্ময়কর ফলাফলে ক্ষমতা হারান। রাজাপাক্ষে হাম্বানটোটা বন্দর ও কলম্বো বন্দর নগরী প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি অত্যন্ত বিতর্কিত প্রকল্প চীনা কোম্পানিগুলোকে দেন। ক্ষমতা থেকে তার সরে যাওয়ার ফলে এ সব প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়।
চীনের সাথে ইয়ামিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অর্থ তিনি ক্ষমতাচ্যুত হলে বহু চীনা প্রকল্পই পুনর্বিবেচিত হবে। বেইজিংয়ের জন্য শিক্ষণীয় যা তা হচ্ছে স্বৈরশাসকদের সাথে কারবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চেয়ে অনেক ভালো হতে পারে, কিন্তু তাতে এর নিজস্ব ঝুঁকি আছে। উল্লেখ্য, মালদ্বীপে চীন ও সউদী আরবের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।
মালদ্বীপে রাজনৈতিক গোলযোগ ভারত ও চীন উভয়ের জন্যই গুরুত¦পূর্ণ ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এবং ঘটনাবলী গতিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে উভয় দেশেরই সামান্যই কিছু করার থাকতে পারে। যদিও কোনো সন্দেহ নেই যে ইয়ামিন এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশকে ব্যবহারের চেষ্টা করবেন , কিন্তু সীমা অতিক্রম না করার ব্যাপারে তার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভারত মালদ্বীপে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বরদাস্ত কর্েব না।
এদিকে এনডিটিভি জানায়, ক্ষমতার লড়াইয়ে সুবিধাজনক স্থানে থাকা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন দেশের পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য বুধবার তিনটি বন্ধু দেশে প্রতিনিধি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ দেশগুলো হল চীন, পাকিস্তান ও সউদী আরব। এ বন্ধু দেশের তালিকায় ভারত নেই।
চীন মালদ্বীপে কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ না করার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণের কয়েক ঘন্টা পর ইয়ামিন দূত প্রেরণের কথা ঘোষণা করেন। চীন বলে, সামরিক হস্তক্ষেপ মালদ্বীপের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে ভারতের উদ্দশ্যেই চীন এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কারণ, মালদ্বীপের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ আটক বিচারক ও রাজনীতিকদের মুক্ত করতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সমর্থনে প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদন জানান।
ভারত মঙ্গলবার মালদ্বীপ বিষয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি ও জরুরি অবস্থা জারিকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করে। এ বিবৃতিতে মোহাম্মদ নাশিদের আবেদন সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।