পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদালত রায় দিয়েছে, এতে আমাদের কিছু করার নেই
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, আর বিএনপি এসে লটুপাট করে, এতিমের টাকা মেরে খায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পরে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত না করে তিনি ঘরে ফিরবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ৩ হাজার গাড়ী পুুড়িয়েছে, অসংখ্য মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। কিন্তু আজ সে কোথায়? আল্লাহ তার বিচার করেছে। আজ সে ধরা পড়েছে। ইসলাম এটা সমর্থন করে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদালত রায় দিয়েছে, এতে আমাদের কিছু করার নেই।
গতকাল বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই জনসভাস্থল থেকেই প্রধানমন্ত্রী ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এ বিশাল জনসভার আয়োজন করে।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা এতিমের টাকা মেরে খায় তাদের ভোট দিলে দেশের কোন উন্নতি হবে না। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য বরিশালবাসীকে দুহাত তুলে ওয়াদা করান তিনি।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে এ বিশাল জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সমাজকল্যান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, মহানগর সম্পাদক এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর ছাড়াও একাধিক স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সা¤প্রতিককালে বরিশাল মহানগরীতে আওয়ামী লীগের বিশাল এ জনসভায় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির ওয়াদা করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বরিশাল-ভোলাসহ সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থেকে প্রায় ২৫ হাজার সংখ্যালঘু অত্যাচারে কোটালীপাড়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের অমানবিক অত্যাচারে হাজার-হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল। তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।
দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনে বরিশাল নিয়ে আসব, ভোলা ও বরিশালে অনেক শিল্প কারখানা হবে। ভোলাতে আরো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করব। তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশে মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পরে আর কিছু হয়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করি। আজ দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১সালে দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করবে। এখন দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, ২০২১ সালে শতভাগ মানুষই বিদ্যুৎ পাবে। উপকূলের যেসব এলাকায় গ্রীড লাইনে বিদ্যুৎ নেয়া সম্ভব নয়, সেখানে আমরা সোলার বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করছি। এতে পিছিয়ে পড়া এলাকার জীবনমানের ব্যাপক উন্নতি ঘটছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা বছরের প্রথম দিনেই ৩৫ কোটিরও বেশী পাঠ্য পুস্তক ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। দেশের ১কোটি ৩০ লাখ মাকে সন্তানদের প্রাইমারী স্কুলে পাঠানের জন্য বৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মাধ্যমিক স্তর থেকে বিভিন্ন স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করছি। সারা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা উপজেলা পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারন করছি। ফলে এক বছরে ১০ লাখ মানুষ বিদেশে গেছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় করেছি। পর্যায়ক্রমে বরিশাল সহ প্রতিটি বিভাগেই মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হবে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আর কিছুই করেনি। আমরা ২০০৯ সালে এসে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আমাদের বদনাম করল। আমি ও আমার পরিবারের কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। কানাডার আদালত রায় দিয়েছে পদ্মা সেতুতে কোন দুর্র্নীতি হয়নি। আমরা বিশ্ব্ ব্যাংকের ঋণ ছাড়াই সেতু নির্মান করছি। এটা এখন দৃশ্যমান। পদ্মা সেতু ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে বিশ্ব দরবারে আমাদের সক্ষমতা প্রমানে সমর্থ হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবক, শিক্ষকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি সন্তান-সন্ততিদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তাদের কাছে টেনে নেয়ার আহবান জানান। যাতে কারো সন্তান মাদকাসক্ত না হয়, জঙ্গিবাদে না জড়ায়। তিনি বলেন উন্নত সমাজ, সংসার ও জাতি গঠনে আগামী দিনের নাগরিকদের প্রকৃত সত্য ও নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ করে গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা সমুজ্জল করে গেছেন। তাই তিনি সবার সহযোগীতা কামনা করে আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য হাত তুলে সকলকে ওয়াদা করান।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্রকরে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল কেন্দ্রীভুত হয়েছিল বরিশাল মহানগরীতে। সকাল ১০টার পর থেকেই মহানগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানমুখি জন¯্রােত শুরু হয়। বাস, লঞ্চ, ট্রলার সহ বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় নগরীতে। যানবাহন নিয়ন্ত্রনে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। নগরীর প্রবেশ মুখগুলোতে সব ধরনের যানবাহন থামিয়ে দেয়ার পরে পায়ে হেটে নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানে পৌছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন ছাড়াও বিভিন্ন সাইজের নৌকা নিয়ে জনসভাস্থলে হাজির হন। সকাল ১০টার পরেই গোটা মহানগরী প্রকম্পিত করে জয়বাংলা শ্লোগান তুলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমবেত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। দুপুর ৩টায় সভা শুরু পর্যন্ত সভাস্থল ছিল শ্লোগানে মুখরিত। শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে পৌছলে উল্লাসিত আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন শ্লোগানে তাকে স্বাগত জানান। বিকেলে আকাশ পথেই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।