পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : কী হবে কী ঘটবে! খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও নানামুখী শঙ্কা ভর করেছে। সবখানে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। আজ (বৃহস্পতিবার) এই মামলার রায় ঘোষণার দিন বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মাঠ দখলের চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। উভয় প্রধান দলের প্রথম সারির নেতাদের স্পষ্ট ঘোষণা, নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্পটে রাজপথে অবস্থান করবেন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা থাকছেন নগরীর ২০টি জায়গায়। আর বিএনপির স্পট ৭টি। পাল্টাপাল্টি চলবে অবস্থান, সভা-সমাবেশ ও মিছিল। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষায় তারা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে থাকবে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অবস্থান করে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। দেশের রাজনীতির অঙ্গনে প্রধান দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকবে নাকি সংঘাত-সহিংসতার দিকে মোড় নেবে- তা নিয়ে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বশ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে গতকালও দিনভর এখানে-সেখানে আলোচনায় উঠে আসছে। আলাপে-আড্ডায় সবার কথাবার্তায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ। গতকাল (বুধবার) সকাল থেকে মহানগরী ও জেলার অধিকাংশ স্থানে জনসাধারণের চলাচলের ওপর কঠোর পুলিশি নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হয়েছে। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিংবা সম্ভাব্য যেকোনো নাশকতা কিংবা গোলযোগের অপচেষ্টা যাতে কেউই করতে না পারে এবং জনগণের আইন-শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা বিধানে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সাদাপোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পতেঙ্গায় দেশের প্রধান জ্বালানি তেল স্থাপনাসহ স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি অনেক স্থানেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। রেলওয়ের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর প্রবেশপথে ৫টি স্থানে এবং চট্টগ্রামের অনেকগুলো স্পটে যানবাহনে ব্যাপকহারে চলছে তল্লাশি ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সারপ্রাইজ চেকিং অব্যাহত রয়েছে। আজ রায় ঘোষণাকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা বাড়তে থাকায় গতকাল বিকেল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রাইভেট যানবাহন চলাচল কমে যেতে থাকে। অভিজাত বিপণি কেন্দ্রগুলোতে ক্রেতা সমাগম ছিল কম। রাস্তা-ঘাটে পুলিশের চেকিংয়ের কারণে এবং ঘরমুখী মানুষের ভিড় বেশি থাকায় গণপরিবহনে দেখা গেছে যাত্রীদের তীব্র চাপ।
এদিকে সরকারি দল, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনসমূহ এবং পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তামূলক তৎপরতার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশি ধরপাকড় চলছে। গতকালসহ তিন দিনে চট্টগ্রামে প্রায় ২৩০ জন বিএনপির কর্মী-সমর্থককে আটকের খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, তাদের অন্তত ৩শ’ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গতকাল পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। আটকের পর অনেকের নাম বিনা অপরাধে মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে গ্রেফতারি আতঙ্ক। অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থেকেই কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছেন। অনেক নেতার বাসাবাড়ি ও নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে গতিবিধি নজরে রাখছে পুলিশ। আজকের অবস্থান ও সভা-সমাবেশের জন্য বিএনপির ৭টি স্পটে গতকাল থেকে বৃদ্ধি করা হয় পুলিশের নজরদারি। আশপাশের লোকজন রয়েছে শঙ্কা ও ভয়-ভীতির মধ্যে।
পাল্টাপল্টি অবস্থান
খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে আজ (বৃহস্পতিবার) পাল্টাপাল্টি ‘অবস্থান’ কর্মসূচি পালনের জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক পক্ষ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে গতকাল। দলীয় কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ইনকিলাব প্রতিবেদককে বলেছেন, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার বিষয়টি প্রধান দায়িত্ব মনে করে। আমাদের নেতা-কর্মী ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা নগরীর ২০টি স্পটে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান নেবেন। আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।। এসব স্থানে সভা-সমাবেশ চলবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো একটিাই যাতে কেউ আইন-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা বিনষ্ট করতে না পারে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত কিংবা কোথাও কোনো ভীতিকর অবস্থা তৈরি হতে দেয়া যাবে না। এরজন্য আমরা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছি।
অপরদিকে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে গতকাল ইনকিলাবকে জানান, আমরা চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডকে ৭টি ভাগে বিভক্ত করে সেসব স্থানে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও সমাবেশ করবো। স্পটগুলো হচ্ছে নগরীর অক্সিজেন, কর্ণফুলী সেতু, বন্দর এলাকা, নিমতলা, নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়, বহদ্দারহাট ও সিটি গেইট। বিএনপি সবসময়ই রাজপথে জনগণের পাশে থাকে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অবস্থান ও সমাবেশ করতে। ডা. শাহাদাত বলেছেন, রায় এখনও হয়নি অথচ তার আগেই পুলিশ কর্মীদের নির্বিচারে আটক করছে। রায়কে কেন্দ্র করে অমানবিক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। নেতা-কর্মী, সমর্থক এমনকি তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ঘরে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। মা-বাবাকে পর্যন্ত হয়রানি ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। পুলিশ আওয়ামী লীগের দলীয় ইচ্ছা পূরণে নেমে গেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
নিরাপত্তা বলয়ে চট্টগ্রাম
আজ খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং জেলার অনেক জায়গায়। রায় ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশ জনসাধারণের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। গতকাল সকালে সিএমপি পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেকোনো অবাঞ্ছিত ব্যক্তির প্রবেশ, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা বা লাঠি বহন, ইট পাথর বা নিক্ষেপযোগ্য কোন কিছু বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উশৃঙ্খল নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকাÐের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে মহানগরীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে। তাই জনস্বার্থে ১৯৭৮ সালের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশ এর ২৯ ও ৩০ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। আজ ভোর ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আদেশ বলবৎ থাকবে।
তাছাড়া গতকাল বিকেল থেকে আজ রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর যান চলাচল করবে। এসব এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের প্রধান জ্বালানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) থাকার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার খাতিরে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশ এলাকায় পুলিশের টহল তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে। একই সাথে জনমনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অজানা শঙ্কা আর উদ্বেগের ছায়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।