Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ রায় : সবার দৃষ্টি আদালতের দিকে

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় আজ। বকশিবাজার মাদরাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এ এই রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৬ জন আসামী। মামলা চলার অন্যান্য দিনের মতোই বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হবেন। মামলার রায় কী হয় তা দেখার জন্য দেশবাসীর দৃষ্টি এখন আদালতের দিকে। শুধু দেশের মানুষ নয়, ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিক-দাতাদেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও মামলার রায় শোনার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। এই রায় ঘোষিত হলে এটাই হবে বাংলাদেশের সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচারের প্রথম রায়। অবশ্য এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার রায় হয়েছে।
এক এগারোর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে সংস্কারের নামে মাইন্যাস টু ফর্মূলার আবির্ভাব ঘটানো হয়। দুই শীর্ষ নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টায় নানা কৌশল করা হয়। ওই সময় বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ অর্ধশতাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। দুই শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতার করে বিশেষ কারাগার ও অন্যান্যদের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সব মামলাই তুলে নেয়া হলেও বেগম জিয়াসহ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ফাইলবন্দী করে রাখা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনে ইস্যুতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখেও ভোটের পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অতপর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলাসহ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়ার অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলায় এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়। মামলা দায়ের করা হয় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায়। মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারমান তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামী করা হয়। আসামিদের মধ্যে তারেক জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে এবং ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান বিদেশে রয়েছেন।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। যার চলতি হিসাব ৫৪১৬। ওই অ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুনে এক সউদী দাতার পাঠানো ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যেমে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার যার মূল্য তৎকালীন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়। ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই অর্থ কোনো এতিম খানায় দান করা হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তারেক রহমান তার ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকো ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ৫০ লাখ টাকা কাজী সলিমুল হকের নামে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, এই শাখায় কাজী সলিমুল হকের নামের পরিবর্তে ২ কোটি টাকার আরো দুটি এফডিআর খোলা হয়। যা তিনি নিজ নামেই ট্রান্সফার করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে একটি এক কোটি টাকা এবং দু’জনের যৌথ নামে আরেকটি এক কোটি টাকার এফডিয়ার খোলেন কাজী সলিমুল হক।
এই দুই এফডিয়ার থেকে গিয়াসউদ্দিন উদ্দিন আহমেদের এফডিআরে ট্রান্সফার হয়। এর কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন আহমেদ তার এফডিয়ারের এক কোটি টাকা ভেঙে ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিয়ার করেন। এরপর আবার সেই এফডিয়ার ভেঙে শরফুদ্দিনের অ্যাকাইন্টে ৬টি পে অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করেন। ট্রাস্টের কাজে শরফুদ্দিন আহমেদ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা তুলে নেন। এই টাকাটি আত্মসাতের অভিযোগেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। দীর্ঘদিন হীমঘরে থাকার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনের দু’মাস পর ১৯ মার্চ ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করেন। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৭ মে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে স্থানাস্তর করা হয়।
বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মোট ৩৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দুর্নীতির অভিযোগে করা। দুর্নীতির এ মামলাগুলো করা হয়েছে বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়। এ ছাড়া বাকি মামলাগুলো পুলিশের কাজে বাধা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ৯ বছরে করা হয়েছে। এরপর ২৩৬ কার্য দিবসে ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, ২৮ কার্য দিবস আত্মপক্ষ সমর্থন ও ১৬ কার্যদিবস যুক্তি তর্কের শুনানি শেষে আদালত ৮ ফেব্রæয়ারী রায়ের দিন ধার্য করেছে। তবে আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, ওই ট্রাষ্টের নামে লেনদেনের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্কই নেই। আর যে টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করা হয় সে টাকা এখনো খরচ হয়নি; বরং ব্যাংকে জমানো সেই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে। ##

 



 

Show all comments
  • ইমরান ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    রায় যা-ই হোক না কেন, আমরা দেশে শান্তি চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    এটাই হবে বাংলাদেশের সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচারের প্রথম রায়।
    Total Reply(0) Reply
  • গনতন্ত্র ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৬ এএম says : 0
    এটা মামলার রায় নয়, প্রতিহিংসার রায়। ক্ষমতায় থাকার চক্রান্ত ।কতটুকু ফল হবে দেখার পালা ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ