পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসাইন আহমদ হেলাল : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘিরে সারাদেশে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক অনাস্থা, সন্দেহ-অবিশ্বাস, পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারিতে জনগণ আতঙ্কিত। নানা ভোগান্তির আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
চলতি বছর নির্বাচনের বছর। নির্বাচনকে এ দেশের মানুষ উৎসব মনে করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্বাচনী বছর এলেই শুরু হয় পেশাজীবীদের দাবি-আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয় হিংসা-প্রতিহিংসা। ক্ষমতা যাওয়া, ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে চলে নানা হয়রানি, সহিংসতা, অশোভন আচরণ, শত্রæতা। জনগণ পড়েন নানা ভোগান্তিতে। তখন উৎসব আর থাকে না। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন নতুন করে উত্তপ্ত হচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলার অজুহাতে রাজধানীসহ সারা দেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে চলছে গণগ্রেফতার। এ গণগ্রেফতারে ঢাকাসহ জেলা-উপজেলা পর্যন্ত ছিন্নমূল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিচারিক বিষয় বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক বিষয় আলোচনার টেবিলে বসে শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিভিন্ন পেশাজীবী সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ব্যক্তিত্বের অভিমতÑ রাজনৈতিক সঙ্ঘাত চলতে থাকলে এর সুযোগ নেবে তৃতীয় পক্ষ। তাদের পরামর্শ, সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিপক্ষের বিষয়ে সংবেদনশীলও হতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার ভরসা তৈরি করতে হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক মাহফুজ উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, সমস্যা সৃষ্টির জন্য রাজনীতি নয়, সমঝোতার জন্য রাজনীতি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার লড়াই দেশের ক্ষতি হবে। দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবে। রাজনীতিকদের ক্ষমতা চলে যাবে অন্যদের কাছে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন দেশে গণতন্ত্র নেই, চলছে টাকাতন্ত্র। জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠন হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা। সাংবাদিক নঈম নিজাম বলেন, জনগণের জন্য রাজনীতি, দুর্ভোগের জন্য নয়। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ইতিবাচক। ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে হবে সব মহলকে। আন্দোলন প্রতিবাদ হবে, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। এটি যাতে অসহনীয় না হয়। সাবেক সচিব মো. ফজলুল করিম বলেন, দু’দলের অনঢ় অবস্থান থেকে উত্তরণের বিকল্প নেই। বিতর্কের মধ্যেই সমঝোতা ও সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
সাংবাদিকনেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধান ঠিক রাখতে হলে দু’পক্ষকে ঐকমত্য হতে হবে। রায় নিয়ে বাড়াবাড়ি বেশি হচ্ছে, আমরা আশা করব, সবাই ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করবে। প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন।
সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা বলেন, বিএনপি নেত্রী সড়কপথে সিলেট যাবেন না বিমানে যাবেন? এটা তার ব্যক্তিগত ও দলীয় সিদ্ধান্ত। এখানে মন্তব্য করার কিছু নেই। ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সারাদেশে গণগ্রেফতারের কোনো কারণ নেই। বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুযোগ দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। না হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।
রামগতি, ল²ীপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এ এন আশরাফ উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় একটি স্থিতিশীল পরিবেশ ও জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকের ভোট প্রদান মুখ্য অধিকার। ২০১৪ সালের এ নির্বাচন নিয়ে ঘটেছে ভয়াবহ সহিংসতা। এ সহিংসতায় অনেক নিরীহ মানুষকে অকারণে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবারো এসেছে সেই নির্বাচন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছেÑ জনগণে ভয়, উৎকণ্ঠা, নির্যাতন, শঙ্কা ততটাই ঘনীভ‚ত হচ্ছে।
মোহাম্মদ আব্দুল্যাহ তুহিন ধানমন্ডি এলাকার একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পরমতসহিষ্ণুতা বাংলাদেশে এখন অলীক স্বপ্ন। এ কারণে কেউ কারো মতামতের সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিক এ ছাড়া আর কি বলার আছে। রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মনির বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলে। ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা, সেই সাথে দেশের অর্থনীতি। আমার ৪৫ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৫ জন চলে গেছে পুলিশের নানা হয়রানির কারণে। আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী নেতা মনজুরুল ইমলাম ভূঁইয়া বলেন, গণতন্ত্রে সঙ্ঘাত ও অস্থিতিশীলতার কোনো স্থান নেই। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সঙ্ঘাত ও অস্থিতিশীলতা সর্বদা লেগেই আছে। ছাড় দেয়ার মনমানসিকতা কারো নেই। জনগণকে জিম্মি করাই রাজনীতির মূল্য লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিবিদরা জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনে করছেন। ঢাবির ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি রায় কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অশনিসঙ্কেত। এসব কাম্য নয়। রায় মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। রাস্তায় সহিংসতা বন্ধ করে মানুষের ভোগান্তি দূর করুন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার একজন ইউপি চেয়ারম্যান (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, একজন চান ক্ষমতায় টিকে থাকতে, আরেকজন চান ক্ষমতায় যেতে, সেটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রের মাধ্যমে হলে জনভোগান্তি, জনআতঙ্ক থাকবে না। মানুষ ভোটকে উৎসব হিসেবে উপদযাপন করবে। এখন এমপি সাহেবরা মানুষকে মানুষ মনে করছেন না। কারণ তাদের তো জনগণের কাছে ভোট চাইতে হয়নি। তাদের দায়ও নেই। এক-এগারোর সময়ে দু’নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলো। একজনের সব মামলা খালাস পেলেন। অন্যজনকে হয়রানি করার রহস্য বুঝতে পারছি না। জনগণ এখন বোকা নয়, তারা সব বুঝে। রাজধানীর একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অনিল চন্দ্র দেবনাথ ইনকিলাবকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। যারা পাকিস্তানের পক্ষে রাজনীতি করে, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাÐ নিষিদ্ধ না করলে অস্থিতিশিলতা দূর হবে না। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিদের নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকার মতিঝিল এলাকার চাকরিজীবী আব্দুল মান্নান মুন্সী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের জন্য মহাসঙ্কট। অতীতে ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতিবিদ এবং উচ্চাভিলাষী সেনানায়কদের হীন খায়েশ চরিতার্থ করতে গিয়ে জাতিকে অনেকবার সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, গত দুইদিন থেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। বাড়িতে চলে যাব। এখানে রাত-দিন পুলিশ হয়রানি করছে, আমরা নাকি বিএনপি করি। এ যাতে আমাকে দু’বার আটক করেছে, বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে জামিন নিয়েছি।
ফেনীর মহিপাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা টেলিফোনে জানান, রাজনৈতিক অস্থিশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ একটাই, সরকারকে সহনশীল হওয়া, পাশাপাশি বিরোধী দলকে আপোষহীন মনোভাব থেকে বিরত থাকা। তাহলেই সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। গাজীপুর সদর থেকে শামছুল ইসলাম জানান, বিচার বিভাগ যেন স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারে, সরকারকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রায়ের মধ্যে দিয়ে যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ না পায়। তেমনটা হলে বিএনপি রায় মেনে নেবে না। এর ফলে প্রতিহিংসা আরো বাড়বে। সহিংসতা আর দেখতে চাই না। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারি, সেটিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। রাজনধানী মতিঝিল এলাকার হকার আব্দুল্যা বলেন, গত তিন-চারদিন থেকে পুলিশ তাদের নানাভাবে হয়রানি করছে। রাজধানীর হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নাকি বিএনপি-জামায়াত করে। এ জন্য তাদের বাড়ি যেতে বলে, নচেৎ গ্রেফতার করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাবো কি? বাড়িতে গেলেও হয়রানি, অনাহারে না খেয়ে মরতে হবে। বাংলাদেশ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেছেন, নির্বাচনী বছরে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন দাবিদাওয়া নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে দুপক্ষের আইনজীবী ভিন্নমত পোষণ করছেন। এরই মধ্যে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের ওপর হামলা এটা একটা তাÐব। এ তাÐব কারা করল, সত্যিকারে তাদের চিহ্নিত করা উচিত। ঢালাওভাবে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার সহনীয় নয়। প্রতিবাদের সুযোগ থাকতে হবে। অহিংস প্রতিবাদ কামনা করছে জনগণ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চিকিৎসক ডা. নাসির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, দেশে রাজনীতি যখন অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, তখন সাধারণ মানুষ উৎকণ্ঠা বোধ করে। জনকল্যাণে রাজনীতি, দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য নয়। গণতন্ত্র মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, গণতন্ত্র মানে উচ্ছৃঙ্খলতা নয়। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একদল অন্যদলের বিরুদ্ধে কথা বলে, চরিত্রহনন করে। একদল অন্যদলকে শত্রæ মনে করে। প্রতিদ্ব›িদ্বতা থাকবে, শত্রæতা নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।