পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : ছিলনা কোন পথ সভা। না ছিল জনসভা। প্রচারণা তো হয়োইনি। কর্মী নিয়ে জমায়েত হওয়ার নির্দেশও দেয়নি নেতারা। রাজনৈতিক কোন সফর নয়, একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটে গিয়েছিলেন কেবল হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও হযরত শাহ পরান (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে। কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তাসবিহ, তাহলিল ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমেই সময় কাটিয়েছেন দরগা দুটিতে।
এই সফরের পুরো সময়জুড়ে কোথাও কোন বক্তব্যও রাখেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কথা না বললেও একটি বারের জন্য তাকে দেখতে রাস্তায় রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ। যাত্রা পথ থেকে শুরু করে সিলেটের প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে ছিল দলীয় নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ও বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার উপস্থিতি। যাত্রা পথের প্রতিটি বাজারেই নেমেছিল মানুষের ঢল। অনেকেই অলি-গলি, ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট থেকে বেড়িয়ে এসেছেন খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখতে। কেউবা শিম ক্ষেত, সবজি ক্ষেতে কাজ করার সময় চিৎকার করে ইশারা দিয়ে থামানোর অনুরোধ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।
মানুষের ছুটে আসা চোখে পড়লেই হতাশ করেননি খালেদা জিয়া। হঠাৎ চলতি পথে মাঠের মাঝখানেই থেমে গেছেন গণমানুষের নেত্রীর মতোই। কথা বলেছেন মাঠ-ঘাট, ক্ষেত-খামার থেকে ছুটে আশা মানুষের সাথে। প্রিয় নেত্রীকে কাছে পেয়ে এক নজর দেখে মানুষও প্রকাশ করেছেন হৃদয় নিঙরানো ভালোবাসা। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতার ভালোবাসা দেখে অভিভূত হয়ে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন। রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও সিলেটে মানুষের ঢল কিভাবে নেমেছিল জানতে চাইলে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, এমনিতেই খালেদা জিয়ার এই সফরটি কোন রাজনৈতিক সফর ছিল না। তারপরও আমরা চেয়েছিলাম ম্যাডাম সিলেটে এসে বিএনপি কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে কিছু বলবেন। এজন্য আমরা মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা জমায়েতের জন্য কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়াই সাধারণ মানুষ যেভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছে তা সত্যিই আশাতীত। এতো মানুষ হবে আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি। এটিই প্রমাণ করে দেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কতটা জনপ্রিয়।
গত ৫ ফেব্রæয়ারি হযরত শাহজালাল (রহ:) ও হযরত শাহ পরান (রহ:) এর মাজার জিয়ারত করতে সিলেটে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১ ফেব্রæয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও জিয়ারত করেছেন মাজার দুটি। এই দুই নেতাই জিয়ারতের মাধ্যমে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। তাদের সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসনের হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারতের ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই মনে করেছিলেন খালেদা জিয়াও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু গত ৩ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনের এক বছর আগেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার সমালোচনা করেন তিনি। ফলে এটি যে নির্বাচনী প্রচারণা হবে না তার ধারণা পাওয়া গিয়েছিল কিছুটা। তারপরও অনেকেই প্রশ্ন করলে সফরের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার সিলেট সফর কোন রাজনৈতিক সফর নয়, এটি কেবল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সেই লক্ষ্যেই সকাল সোয়া ৯টায় গুলশানের বাসভবন থেকে সড়ক পথে সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা হন তিনি।
এর আগে কক্সবাজারের উখিয়া যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ি থেকে শুরু করে কাচপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ছিল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোর্ড, সাইনবোর্ড, কাঁচপুরে বিভিন্ন নেতারা তাদের কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। তবে এবার সিলেট যাত্রায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এসব এলাকায় কোথাও কোথাও দু’একজন ছাড়া পাওয়া যায়নি কোন নেতাকর্মীই। রাস্তার দু’ধারেই ছিল পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রিজন ভ্যান, ট্যাঙ্কার, জলকামানও কোথাও কোথাও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। রাস্তার পাশে কেউ দাঁড়াতে আসলেই পুলিশ লাঠি নিয়ে তাড়া করে তাদের সরিয়ে দিচ্ছিলেন। তবে পুলিশী বাধার মুখেও ভুলতা-গাউছিয়া, নরসিংদীর মাধবদী, ইটানগর, ভেলানগর, কামারটেক, বারৈচা ও বেলাবো পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে অবস্থান নেন। কামারটেকে রাস্তার পাশে অভ্যর্থনা জানাতে জড়ো হওয়া নারীদের দেখে গাড়ি থামান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকে থামতে দেখে আশপাশের বাড়িঘর থেকে নারী-শিশুরাও ছুটে আসেন। গাড়িবহর বারৈচা স্টেশনে যাওয়ার আগে একটি ব্রিজ অতিক্রম করার সময় খালেদা জিয়া দেখতে পান তার গাড়িবহর দেখে সবজি ক্ষেত থেকে দৌড়ে আসছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। অনেকেই হাত ইশারা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থামতে বলেন। মানুষের ছুটে আসা চোখে পড়লে ব্রিজের উপরইে গাড়ি থামিয়ে দেন তিনি। এ দৃশ্য দেখে চারদিক থেকেই মানুষ খালেদা জিয়ার গাড়ির কাছে ছুটে আসেন এবং তাকে অভ্যর্থনা জানান। খালেদা জিয়াও তাদের হাত নেড়ে জবাব দেন। ঢাকা থেকে নরসিংদী পর্যন্ত রাস্তায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রত্যাশিত না থাকলেও দৃশ্যপট পাল্টে যায় গাড়িবহর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গেলেই। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গলি, মার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের নামে ¯েøাগান দিতে দিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে আসে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখে গাড়ি থামিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, বিশ্বরোড, সরাইলের কুট্টাপাড়া, মালিহাতাসহ বিভিন্ন পয়েন্টেও অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গাড়িবহর সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌছার পর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। মাধবপুর, গোলচত্ত¡রে জেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থক, শায়েস্তাগঞ্জে হবিগঞ্জর পৌর মেয়র জি কে গউছের সমর্থক, বাহুবল, মিরপুর, আউশকান্দিতে সাবেক এমপি শেখ সুজা মিয়া সমর্থকরা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। শায়েস্তাগঞ্জে তোরণ নির্মাণ ও রাস্তার পাশে মঞ্চ করে মাইকে ¯েøাগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে বরণ করে স্থানীয় বিএনপি। হবিগঞ্জের শেরপুর কিবরিয়া চত্বরে পুলিশের বাধার মুখেও রাস্তায় অবস্থান নেন বিএনপির হাজার হাজার বিএনপি। সিলেটের গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর ও রশিদপুরে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর ছবি সম্বলিত ফেস্টুন হাতে হাজার হাজার কর্মী সমর্থক ¯েøাগানে ¯েøাগানে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে অভ্যর্থনা জানায়। সিলেট সদরের দক্ষিণ সুরমা চন্ডিপুল এলাকায পৌঁছালে শতাধিক মোটর সাইকেলের একটি বহর খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে স্কট দিয়ে সার্কিট হাউসে পৌঁছে দেন। বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির কারণে সুরমা নতুন ব্রিজের মেন্দিবাগ থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত দুই মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে গাড়ি বহরের প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এ সময় নেতাকর্মীদের মুখে ছিল একটিই ¯েøাগানÑ ‘আমার নেত্রী, আমার মা- বন্দী হতে দেব না’। সার্কিট হাউসের দুই পাশে খোলা জায়গা এবং কিন ব্রিজের ওপরে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। সন্ধ্যায় প্রথমে শাহজালাল ও পরে শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করতে যান খালেদা জিয়া। সার্কিট হাউস থেকে মাজারের পথেও মানুষের ভিড়ের মধ্যে পড়তে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে। খালেদা জিয়ার আগমনে সিলেটের প্রতিটি সড়ক সেদিন হয়ে ওঠেছিল লোকে লোকারণ্য। যে পথেই যান সে পথেই রাস্তা ভর্তি মানুষ হাত নেড়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। কেউবা এক পলক দেখার জন্য রাস্তার পাশে বাসার বারান্দা, ঘরের জানালা, ভবনের ছাদ কিংবা দোকান-পাটের বারান্দায় মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দরগা দুটিতেও হাজার হাজার মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কেবল মাজার দুটিতেই নয়, সিলেটে প্রবেশের পর থেকে প্রতিটি সড়কেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঘিরে ছিল বিএনপি নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ও উৎসুক জনতার ভিড়। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আসা নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে তিনি হাত নেড়ে অভ্যর্থনার জবাব দেন। সিলেটে সাধারণ মানুষের ভালাবাসা দেখে অভিভূত খালেদা জিয়া সফর শেষে ফেরার পথে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেখেছেন মানুষের ঢল। সরকার যতই বাধা দিবে ততই মানুষের ঢল নামবে। কোন কর্মসূচি ছাড়াই মানুষের ঢলকে নিরব প্রতিবাদ হিসেবেও মনে করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।