Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যটনের সুবিধা নিতে ইসলামী দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট : ২:১৮ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার : পর্যটনকে কেন্দ্র করে মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পর্যটন একটি দ্রæত বিকাশমান খাত যা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পর্যটন শিল্প অন্যতম ক্ষেত্র যেখানে একসঙ্গে কাজ করার বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির পর্যটন মন্ত্রীদের দশম ইসলামিক সম্মেলনের (আইসিটিএম) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসিভুক্ত দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আগামীতে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে এই সম্মেলনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে এ সম্মেলন নতুন সুযোগ ও দিগন্ত উন্মোচন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় নিজেদের মানোন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন, পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ইসলামী দেশগুলো বৃহত্তর সুযোগ ও সম্ভাবনা খুঁজতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামিক অর্থনীতি একটা নতুন বিষয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটির বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং সারাবিশ্বের মুসলমানদের দ্বারাই এটি পরিচালিত হবে। ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বিশাল ভোক্তা থাকার কারণে, বিশ্বাস-ভিত্তিক পণ্য ও সেবার স¤প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি অমুসলিম স¤প্রদায়ের কাছেও এ সকল পণ্য ও সেবা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। হালাল খাদ্য, ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল ঔষধ এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিষ্ণু খাতগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খাতগুলির উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলিকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন যাবৎ উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবেলা করে আসছে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু স¤প্রতি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। নিজ বাসভূমিতে জাতিগত নিধনের ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি ওআইসিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ওআইসির বহুমাত্রিক ভূমিকা প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বের মুসলমানদের মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে ওআইসির সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থরক্ষায় সহায়ক হচ্ছে। তিনি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাস এবং যৌথ ধারণার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ওআইসিতে যোগদান করেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইসলামের মহৎ মূল্যবোধগুলো যেমন- ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার, একতা এবং সকলকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মার সংহতিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের দেশে সম্পদের অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভসহ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন বাংলাদেশে অবস্থিত। সাগরকন্যা কুয়াকাটা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এসব স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে পারে।
শতশত নদী জালের মত ছড়িয়ে থেকে বাংলাদেশকে ছবির মত সুন্দর করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শত শত সবুজ চা বাগান আপনাকে দিবে অবকাশ যাপনের চোখ জুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এছাড়াও, আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও প্রতœ-সমৃদ্ধ স্থানসমূহ, বৈচিত্রময় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যসমূহ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তিনি বলেন, সর্বোপরি বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ, তাঁদের আতিথেয়তা এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গের গৌরবময় ইতিহাস স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। তিনি বলেন, প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি ঢাকার সঙ্গে সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে পর্যটকগণ সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবেন। কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও, বেসরকারি খাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনসহ অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য। এখানে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর, অভিজ্ঞতা বিনিময়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, বেসরকারি খাত ও সহযোগী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়সহ শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের ক্ষেত্রসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
বাংলাদেশকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য ১০ম ইসলামিক কনফারেন্স অব ট্যুরিজম মিনিস্টারস- আইসিটিএমের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করায় তিনি সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, পরবর্তী দু’বছরে বাংলাদেশ সভাপতি হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক কিছু অর্জনে সক্ষম হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী আ ক ম শাহজাহান কামালের সভপতিত্বে অনুষ্ঠানে ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওসাইমিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বক্তব্য দেন। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক স্বাগত বক্তৃতা করেন। এছাড়া, নাইজারের পর্যটন মন্ত্রী এবং সম্মেলনের বিদায়ী চেয়ারপার্সন আহমেদ বথু এবং জাতিসংঘোর ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (ইউএনডবিøউটিও) এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইসলামী ঐতিহ্যের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। রীতি অনুযায়ী নাইজারের পর্যটন মন্ত্রী এবং সম্মেলনের বিদায়ী চেয়ারপার্সন আহমেদ বথু পরবর্তী দুই বছরের জন্য আইসিটিএমের চেয়ারপার্সনশীপ বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী আকম শাহজাহান কামালের কাছে হস্তান্ত করেন।



 

Show all comments
  • আশিক ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৫৩ এএম says : 0
    ভালো প্রস্তাবনা
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৫৪ এএম says : 0
    পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য আগে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন
    Total Reply(0) Reply
  • জুবায়ের ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৫৫ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ