Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মেক্সিকো কি বিশে^র সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক দেশ?

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আল জাজিরা : ২০০৬ সালে মেক্সিকো তার উত্তরের চিরসহায়তাকারী প্রতিবেশি যুক্তরাষ্ট্রের জোর সমর্থনে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। আজ এক দশকের সামান্য কিছু বেশি সময় পর দেখা যাচ্ছে যে এ যুদ্ধে আনুমানিক ২ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ হয়েছে ৩০ হাজার বা তারও বেশি সংখ্যক লোক আর অব্যাহত ভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছে চিহ্নহীন গণকবর।
সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সাল ছিল মেক্সিকোর সর্বাপেক্ষা সহিংসতার বছর। এ বছর ২৯ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফল হচ্ছে এই যে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। মেক্সিকোর মাদক ব্যবসা সেখানে মন পরিবর্তন করার বিভিন্ন সামগ্রীর আকাশচুম্বী চাহিদা সৃষ্টি করেছে।
মেক্সিকোর নামী দৈনিক লা জর্নাডার সাংবাদিক আর্তুরো কানো এক সময় মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রতিক‚ল পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, মেক্সিকো সস্তা শ্রমিক দেয় আর যুক্তরাষ্ট্র ফেরত দেয় বহিষ্কৃতদের। মেক্সিকো দেয় মৃত আর নিখোঁজদের, আর যুক্তরাষ্ট্র দেয় বিপুল সংখ্যক মাদক ব্যবহারকারীদের।
কানো সাবেক ১৯১৫ সালে মৃত মেক্সিকান স্বৈরশাসক পরফিরিও ডায়াজের এক আক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেছিলেন, দুর্ভাগা মেক্সিকো! ঈশ^র থেকে বহু দূরে, আর যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছে।
ভৌগোলিক দুর্ভাগ্যের কারণে মেক্সিকো তার উত্তরের প্রতিবেশির অর্থনৈতিক শোষণের সহজ শিকার। মেক্সিকোর সামনে মুক্ত বাণিজ্য নামের গালভরা ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার ভর্তুকি পণ্যে মেক্সিকোর বাজার ভরে দেয় আর কয়েক মিলিয়ন মেক্সিকান চাষীকে তাদের পেশা থেকে বিতাড়িত করে।
গোটা জনগোষ্ঠির জীবিকা নির্বাহের পথকে ধ্বংস করার মাধ্যমে লোকজনকে মাদক সহ অন্যান্য আর্থিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে টিকে থাকা থেকে বিরত রাখার সর্বোত্তম পন্থা নয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শত শত কোটি ডলার দান করে মেক্সিকোকে একটি মাদক রাজ্যে পরিণত না হতে দেয়ার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করছে।
এ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশে ক্রমাগত অধিক অর্থ ঢালছে যেখানে দুর্নীতির জন্য কুখ্যাত নিরাপত্তা বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যায় লিপ্ত । শুধু তাই নয়, মাদক চক্রের সাথে রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক।
এটা নয় যে পুলিশ যেখানে নিয়মিত ভাবে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের গুলি করে হত্যা করে সে দেশটিকে নৈতিক আচরণের পতাকাবাহী বলে গণ্য করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে যে মেক্সিকোর মাদক যুদ্ধের ফলে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার ৬শ’ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
২০১৬ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক দলিল মতে, মেক্সিকোর নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত ভাবে নারীদের নির্যাতন ও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় ফল হচ্ছে এটা সমাজকে দেখানোর জন্য নারীদের দল বেঁেধ গ্রেফতার করা হয়।
পুরনো অভ্যাস জিইয়ে রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) সীমান্তের ওপারের মত একই নৌকার আরোহী। অথচ আপনি যদি মাদক পাচারের বিরুদ্ধে প্রকৃতই লড়াই করেন তাহলে আর কোনো আয়ের কথাই আসে না।
কারমেন বুলুসা ও মাইক ওয়ালেস তাদের বই ‘এ নারকো হিস্টরি: হাউ দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড মেক্সিেেকা জয়েন্টলি ক্রিয়েটেড দি মেক্সিকান ড্রাগ ওয়ার’ -এ বলেছেন যে ডিইএ তার বার্ষিক ২শ’ কোটি ডলার বাজেটকে যৌক্তিক প্রতিপন্ন করতে কিভাবে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে থাকে।
২০০৬ সালে জিনজার থম্পসন নিউ ইয়র্কার -এ লেখা ‘ট্রাফিকিং ইন টেরর’ নামক রচনায় নতুন ভীতিকর ‘মাদক সন্ত্রাস’-এর সাহায্যে মাদকের লাভজনক যুদ্ধে ডিইএ-র নিজেকে শীর্ষস্থানে রাখার কথা জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষট্র নির্লজ্জ ভাবে ডিইএ ও মেক্সিকোর সিনালোয়া চক্রের মধ্যে সহযোগিতা অনুমোদন করেছে।
মাদক ও মানব পাচার রোধে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দেয়াল নির্মাণের প্রবক্তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৮ জানুয়ারি টুইটে বলেন, মেক্সিকো থেকে মাদকের ব্যাপক পাচার রোধে আমাদের দেয়াল নির্মাণ প্রয়োজন। দেশটি এখন বিশে^র সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ।
বলা দরকার যে যুক্তরাজ্যের আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলো এবং কলম্বিয়ার মত পছন্দনীয় মাদক যুদ্ধের অংশীদার দেশগুলোর তুলনায় মেক্সিকোতে খুনের হার আসলে কম।
অন্যদেশে ইচ্ছেমত আগ্রাসন চালানো ও বিপর্যয় সৃষ্টি যুক্তরার্ষ্টের অভ্যাস। এ সত্যের প্রেক্ষিতে মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র নিজেও বিশে^র অন্যতম বিপজ্জনক দেশ হতে শুরু করেছে।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ