Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যুবলীগের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার অভ্যর্থনা সমাবেশ পন্ড করার ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নরসিংদীতে আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র অর্ধ শতাব্দীকালের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অনিশ্চয়তা
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদী সদর উপজেলা যুবলীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া সোহেলের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়ার অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান পন্ড করার ঘটনা নিয়ে নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও সৌখিন রাজনীতিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। সৌখিন রাজনীতিকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান পন্ড করার মাধ্যমে নরসিংদীতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে শতাব্দীকালের ইতিহাসে ছেদ পড়ে গেছে। দাগ পড়ে গেছে দীর্ঘ দিনের সামাজিক সম্পর্কে। ইত:পূর্বে জাতীয় বা স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে নরসিংদীর আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে কখনোই এমন অপ্রীতিকর ও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেনি। জাতীয় রাজনীতির নিরিখে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকতে পারে। কিন্তু দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কেউ কোনদিন বিএনপি’র কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে বলে জানা যায়নি। যুবলীগ নেতাদের এই অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ দুটি দলের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে এক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। যার কারণে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশংকা করছে শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ।
স্বাধীনতার পূর্বাপর সময়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন মরহুম এমপি মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি সভাপতি পদে বহাল থাকা অবস্থায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে জাতীয় বা স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে কখনোই কোন সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়নি। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন, মরহুম এড. আসাদোজ্জামান। তখন নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন লোকমান হোসেন। এই ২০ বছর সময়ের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছে। কোনদিনই বিএনপি ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা মুখোমুখী হয়নি। মেয়র লোকমান হোসেন বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে অত্যন্ত ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। জাতীয় বা স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে এড. আসাদোজ্জামান বা মেয়র লোকমান হোসেনকে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন উস্কানীমূলক আচরণ করতে শুনা যায়নি। ১৯৭৮ সালের পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. কফিল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন ইরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলী মৃধা জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন। তাদের আমলে আওয়ামীলীগ, বিএনপি’র মধ্যে কখনোই কোন হামলা, মামলার ঘটনা ঘটেনি। নরসিংদী জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সামসু উদ্দিন আহমেদকে বলা হতো চরম আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী। কিন্তু এরপরও তিনি বা তাঁর নেতাকর্মীরা জাতীয় বা স্থানীয় কোন রাজনৈতিক কারণে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কোন উস্কানিমূলক আচরণ করেননি। ঘটাননি কোন হামলা, মামলার ঘটনা। সামসু উদ্দিন আহমেদ এছাক মঞ্চে দাড়িয়ে আওয়ামীলীগের অনেক সমালোচনা করেছেন, পক্ষান্তরে মুসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া, এড. আসাদোজ্জামানও মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপি’র অনেক কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা কখনোও ব্যক্তি বিদ্বেষ বা হামলা, মামলার আশ্রয় নেননি। রাজনীতি নিয়ে কোন হঠকারী সিদ্ধান্তও দেননি। প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ধরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। রাজনীতি ভিন্ন প্লাটফরমে করলেও আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যক্তিগত, সামাজিক, ব্যবসায়িক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বিরোধী দলে থাকাকালে কয়েকবার নরসিংদী সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী হবার পরও তিনি নরসিংদী সফর করেছেন। এসব সফরের সময় বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনতে গিয়েছেন। পক্ষান্তরে বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কয়েকবার নরসিংদী সফর করেছেন। বিরোধী দলে গিয়েও কয়েকবার নরসিংদীতে সভা সমাবেশ করেছেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী - সমর্থক কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতেও শুনা যায়নি। এমনিভাবে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে নরসিংদীতে দু’টি রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় সভা-সমাবেশ করে আসছে। কেউ কারো কর্মসূচীর অন্তরায় হয়ে দাড়ায়নি। গত সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট সফর কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া সোহেলের নেতৃত্বে মিছিল, জুতা মিছিল, উগ্র ¯েøাগান এবং অভ্যর্থনাকারীদের সামনে বেরিকেড তৈরী করে দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীকালের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে একটি দাগ কেটে দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সাবেক এমপি রোকেয়া আহমেদ লাকী যখন ভেলানগর মহাসড়কের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষমান তখন যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া সোহেল তাঁর দলবল নিয়ে রোকেয়া আহমেদ লাকীর সামনে গিয়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে। বিএনপি নেত্রী রোকেয়া আহমেদ লাকী প্রথমে তার সামনে ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া সোহেলকে বেরিকেড তৈরী করতে দেখে অনেকটাই বিস্মিত হন। পরে তিনি লাইন থেকে সামনে এগিয়ে সোহেলকে ডেকে তার সামনে থেকে চলে যাবার জন্য বার বার অনুরোধ জানান। কিন্তু সোহেল, বিএনপি নেত্রী রোকেয়া আহমেদ লাকীর অনুরোধকে কোন প্রকার পাত্তা দেননি। এ সময় অন্যান্য বিএনপি নেত্রী বলতে থাকেন, রাজনীতির নামে এমন আদব বহির্ভূত আচরণ অতীতে কেউ করেছে বলে জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি বিজয় গোস্বামীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার অভ্যর্থনা সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া সোহেলের জুতা মিছিল ও বেরিকেড তৈরীর ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে যুবলীগের কেন্দ্র থেকে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলেও জানা নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য নির্বাচিত সভাপতি বিপ্লবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি অসুস্থ শেষ দিকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। মিছিল করেছে দেখেছি, জুতা মিছিল করতে দেখিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ