Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিন্ডিকেট চক্রে বিতর্কে বিজেএমসি!

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : মামলা, গ্রেফতার, প্রতিমন্ত্রীর আবেদন এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন বিজেএমসি‘র সিন্ডিকেট চক্র। জালিয়াতির মাধ্যমে পাট সরবরাহকারীদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও অপরাধীরা এখনো বহাল আছেন। এমনকি গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। অথচ পাট সরবরাহ করেও পাওনা টাকা পাচ্ছেন না অনেক পাট ব্যবসায়ী। এ সব ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর এ অবস্থায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাট ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে মনে করছেন পাটকল কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। বিজেএমসিতে প্রতারক চক্রের দাপটে সরকারের ভাবমূর্তী মারাত্মকভাবে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই প্রতারণা শিকার হয়ে বিভিন্ন জেলায় মামলা করেছেন। এদিকে পাট সরবরাহকারীদের টাকা পরিশোধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের মর্যাদা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলী এমপি। চিঠি দিয়েছেন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকেও।
ব্যবসায়ীদের মামলার কাগজপত্র, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চিঠি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলীর লেখা আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিজেএমসির নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে রাজবাড়ী থেকে পাঠানো পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে কৌশলে মালিক ও এজেন্সির নাম পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি চক্র।
ব্যবসায়ীরা নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলে পাট পাঠালেও কৌশলে দীপক কংস বণিকের মালিকাধীন চরমুগরিয়া পাট ক্রয় কেন্দ্র পরিবহন ঠিকাদার মাদারীপুর ঠিকানায় পাটের চালান গ্রহণ দেখানো হয়। যাতে ট্রাক নাম্বার ও পাটের পরিমাণ ঠিক রয়েছে। একই অপকর্ম করা হয়েছে অন্য জেলা থেকে আসা পাটেও। এমন বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে। কর্মকর্তা মনোয়ারসহ জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মাদারিপুরে এবং নারায়ণগঞ্জে মামলা হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যতম ও মামলার প্রধান আসামী বিজেএমসি’র আওতাধীন ইউএমসি জুট মিলের তৎকালীন সাবেক পাট বিভাগীয় প্রধান (ম্যানেজার, জুট উপব্যবস্থাপক (পাট বিভাগ) এস এ এইচ মনোয়ার আলী। যিনি এখন আছেন ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জুট ফাইবার গøাস ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-ব্যবস্থাপকের পদে।
মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেনÑ মাদারীপুরের ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরিয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্চেজার মোজাম্মেল হক, ইউএমসি জুটমিলের সহপাট ক্রয় কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ দেওয়ান, ইউএমসি জুটমিল ঘাট কয়াল আব্দুস সাত্তার ওরফে কাজল, ইউএমসি জুটমিলের সহব্যবস্থাপক (পাট) নুরুল ইসলামসহ ৭ জন। কয়েক কোটি টাকা আতœসাতের অভিযোগে রাজবাড়ী থানায় দায়েরকৃত মামলায় নুরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেফতারও করেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ দু’জনই ঘটনার জন্য দায়ী করেন প্রধান আসামী এমএএইচ মানোয়ার আলীকে। এরপর মনোয়ার আলী মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে হাজতে পাঠিয় দেন। তবে পরে জামিনে মুক্তি পেয়েই বিজেএমসি ও মন্ত্রনালয়ের বিশেষ মহলের আশির্বাদ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নির্বিঘেœ।
অথচ ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো, শহীদুল্লা সরকার, কার্তিক চন্দ্র সাহাসহ পাট ব্যবসায়ীরা কৃষকের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আটকের পর আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এমএএইচ মানোয়ার আলীর নির্দেশে তারা সহযোগীতা করেছেন।
একটি মামলার বাদী ও পাট ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো বলেন, ইউএমসি জুটমিলের পাট বিভাগীয় প্রধান (ম্যানেজার, জুট) এমএএইচ মানোয়ার আলী ও মাদারীপুরের ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরীয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্চেজার মোফাজ্জেল হকের মৌখিক নির্দেশে দশটি ট্রাকে প্রতিটি ১৩০ কেজি ওজনের এক হাজার বেল পাট রাজবাড়ীর কালুখালী গুদাম হতে সরাসরি নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে পাঠান। যার মূল্য ৬২ লাখ ৮৭ হাজার ১২৫টাকা। অথচ তার পাঠানো চালানগুলো মোজাম্মেল হক এবং এমএএইচ মনোয়ার আলী ও গুদাম ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম পরিবর্তন করে ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরীয়ার গুদাম মালিক ও পরিবহণ ঠিকাদার দীপক কংশ বনিকের মাধ্যমে পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে সু-কৌশলে নতুন বিল তৈরী করে অবৈধ ভাবে ওই টাকা তুলে আত্মসাত করে। পরবর্তীতে তিনি নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে কোন পাটের চালান জমা হয়নি। এর পর অনেক দেন দরবার করে তিনি পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পেলেও বাকী ৫২ লাখ ৩২ হাজার ১২৫টা আজ অবধি তিনি পাননি।
আরেক মামলার বাদী নারায়নগঞ্জের পাট ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ সরকারের দুই কোটি ১৮ লাখ, ফরিদপুরের পাট ব্যবসায়ী বাচ্চুর ৮ লাখ ৩০ হাজার, কিশোরগঞ্জের পাট ব্যবসায়ী তাজু, মাহাবুব ও খোকন বাবুর এক কোটি ১৭ লাখ, পাবনার পাট ব্যবসায়ী আরজুর ৩৩ লাখ এবং পাবনার অপর পাট ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র সাহার ৬০ লাখ টাকা আতœসাত করা হয়েছে। পাওনা ৮ কোটি টাকার মাত্র ৪০ লাখ টাকা পেয়ে অভিযোগ নিয়ে ঘুরছেন আরেক পাট ব্যবসায়ী চিত্ত রঞ্জন কর।
ব্যবসায়ী চিত্ত রঞ্জন কর বলেন, অপরাধীদের হতিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকার ভাগ পান শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই। তাই তদন্ত এমনকি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আদেশ হলেও অপরাধীদের তারা আগলে রাখছেন।
অভিযোগের বিষয়ে এমএএইচ মানোয়ার আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
বিজেএমসি’র উপদেষ্টা (উৎপাদন ও পাট) এ কে নাজমুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি জানতে পেরে ইতোমেধ্য অভিযুক্তদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি এমএএইচ মনোয়ার আলীকে ওএসডি করে সংযুক্তি করা হয়েছে। এখন তার কোন কাজ নেই। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের টাকা জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন এ কে নাজমুজ্জামান। বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান মাহমুদুল হায়দারের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল ও এসএমএস পাঠালেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ