পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সর্তকভাবে দায়িত্ব পালন এবং কেপিআইয়ের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে। একই সাথে গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন ও পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ নজরদারিতে করা হচ্ছে রাজধানীর মেস ও আবাসিক হোটেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। রায় ঘিরে কেউ যেন গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য রাজধানীর সকল প্রকার গণপরিবহনেও নজরদারীর মধ্যে রাখা হচ্ছে। সাধারন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা এবং দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কোন ঘটনা ঘটলে দ্রæত পুলিশ সদরদফতরের সাথে সমন্বয় করতেও বলা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারদের। সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ ফের্রুয়ারী বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিতিশীলতাসহ ছয় ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে বলে পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। এরইমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। গত মঙ্গলবার থেকে এই ধরপাকড় শুরু হয়। ছয় দিনে বিএনপির ৬৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। এর বাইরে অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের সব পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে যেসব আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে দুষ্কৃতকারীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরের দিকে আসতে পারে। তারা ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে পারে। পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে পারে। নাশকতা করতে পারে। গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে। এমনকি কেপিআইভুক্ত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেলপথে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগও করতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ৫ ফের্রুয়ারী রোববার গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর কোনো ধরনের নাশকতা-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি হতে দেবে না। কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। পুলিশ দৃঢ়তার সাথে এ কাজ করে যাচ্ছে। যাতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকে সে জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে ঘিরে কেউ যাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাই প্রস্তুত রয়েছে।
পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ৮ ফের্রুয়ারি কোনো সহিংসতার আশঙ্কা করছি না, তবে সারাদেশের পুলিশ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেপিআইয়ের নিরাপত্তা জোরদার এবং সমন্বয় করে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ সদরদফতর থেকে।
সূত্র জানায়, পুলিশ সদরদফতর থেকে পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো চিঠিতে পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১৮ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্য রয়েছে, কৌশলগত স্থানে নিরাপত্তা বাড়ানো, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা, থানাসহ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, পুলিশের সব সিসি টিভি ক্যামেরা সচল রাখা, প্রয়োজনে ক্যামেরা ভাড়া করা, যেসব স্থানে আগে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থান চিহ্নিত করা, গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, টহল বা অভিযানে পুলিশ সদস্যরা যেন একা একা না যান। টহলের সময় সবাইকে একসাথে থাকার কথা বলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্যামেরা রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তারা ছবি তুলে রাখতে পারেন এবং সেই ছবি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন। ছবি জোগাড় করতে গণমাধ্যমকর্মীদের সাহায্য নেয়ার কথাও বলা হয়। একই সঙ্গে এ ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে জনমত গড়তে পেশাজীবী ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে যে কোনো নৈরাজ্য ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর সব মেস ও আবাসিক হোটেলের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের কোনো ছাড় না দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মহানগর পুলিশেল পক্ষ থেকে। রাজধানীর সব প্রবেশপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে গতকাল থেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলাও করা হতে পারে। কেপিআইভুক্ত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলপথ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করতে সারাদেশ থেকে রাজধানী ছাড়াও অন্যান্য বড় শহরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা চলছে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলতে পারে। এমন আশঙ্কার আলোকে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে সতর্ক করেছে পুলিশ সদরদফতর।
চট্টগ্রামে সতর্ক অবস্থা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইগুলোতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুুতি নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আগামী ৮ ফেব্রæয়ারী এতিম খানা দুর্নীতি মামলার রায়। এই রায়কে ঘিরে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মাঠে নামার ঘোষণাও দিয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, সাজানো মামলায় প্রহসনমূলক কোন রায় হলে তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানাবে। নগর বিএনপির পক্ষ থেকে ওইদিন মহানগরীর একাধিক পয়েন্টে নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারাও রাজপথে যে কোন নৈরাজ্য প্রতিরোধে তাদের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে বলেছেন।
এ অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় পুলিশ। সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, রাস্তায় কাউকে নৈরাজ্য করতে দেয়া হবে না। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সবকিছুই করবে। এদিকে আগামীকাল বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নগরীর বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ওইসব এলাকার নৌবাহিনী বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ওই এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত¡ তেল কোম্পানী পদ্মা মেঘনা যমুনার ডিপোসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনার নিরাপত্তায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। এর পাশাপাশি মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের কেপিআইগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্টে তল্লাশি অভিযান চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।