Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরাও পারি

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সৈয়দপুর কারখানায় তৈরী হলো অত্যাধুনিক রেল কোচ : প্রতিটি কোচে খরচ ৫০ লাখ : প্রতি কোচে সাশ্রয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা : গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা একেকটি কোচের দাম পড়েছে ৪ কোটি টাকা
নূরুল ইসলাম : ইন্দোনেশিয়া থেকে গত বছর ১৫০টি কোচ কিনেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ৫০টি ছিল ব্রডগেজের। বাকি ১২০টি মিটার গেজের কোচ। এই ১৫০টি কোচের জন্য বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫৮৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচের দাম পড়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। বর্তমান বিশ্ব বাজার দর অনুসারে একটি মিটারগেজ কোচের দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। প্রায় একই মানের কোচ সৈয়দপুর কারখানায় তৈরী করা হয়েছে। প্রতিটি কোচে খরচ পড়েছে ৫০ লাখ টাকারও কম। এতে করে প্রতিটি কোচে সাশ্রয় হলো প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। ১৮টি কোচে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮১ কোটি টাকা। দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় তৈরী করা তিনটি কোচের ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে গত শুক্রবার। দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫২ কিলোমিটার রেলপথে সর্বোচ্চ ৮৫ কিলোমিটার গতিতে চলেছে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি। ধবধবে সাদা জমিনে জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজ রেখায় সজ্জিত করে বিশ্বমানে রুপান্তর করা হয়েছে কোচগুলো। স্বল্প সময়ে এগুলো নির্মাণে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, কর্মচারি ও শ্রমিকরা। এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, পুরাতন ইরানী ১৮টি কোচ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কারখানায় পড়ে ছিল। আমরা সেগুলোর চেসিস ব্যবহার করেছি মাত্র। বাকী ৮০ শতাংশ কাজ নতুন করে করতে হয়েছে। সব মিলে কাজটি ছিল আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, গত শুক্রবার পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ট্রায়াল রানের সময় পরীক্ষামূলক ট্রেনটি দেখতে হাজার হাজার উৎসুক মানুষ ভিড় করে। ট্রেনে তখন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লাস প্রকাশ করে তারা উৎসুক মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, দ্যাখো ‘আমরাও পারি’। ইতোমধ্যে রেলওয়ের এ উদ্যোগ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামীতে রেলের চাহিদা মেটাতে কোচ আমদানীর পরিবর্তে নিজেরাই তৈরী করলে যেমন কোটি কোটি টাকার সাশ্রয় হবে, তেমনি কোচ নির্মাণে রেলের সম্ভাবনাও দিন দিন উজ্জ্বল হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ইরান থেকে আমদানী করা হয়েছিল ৬৭টি যাত্রীবাগী কোচ। দীর্ঘ দুই যুগ চলার পর কোচগুলো ক্রমে নষ্ট হতে থাকে। এক পর্যায়ে সেগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে পাহাড়তলী কারখানায় মেরামত করে কিছু কিছু কোচ লোকাল ট্রেনের বহরে সচল রাখা হয়েছে। বাকীগুলো মেরামতের অযোগ্য হওয়ায় ফেলে রাখা হয়েছিল। সূত্র জানায়, পাহাড়তলী কারখানায় পড়ে থাকা ১৮টি ইরানী কোচের সুপার স্ট্রাকচার (মূল কাঠামো) নষ্ট হলেও এর আন্ডারফ্রেম ছিল মোটামুটি সচল। ওই কোচগুলো নতুনরূপে পুনর্বাসনের (রিহ্যাবিলিটেশন) উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পাহাড়তলী কারখানা থেকে ইরানী কোচগুলো সৈয়দপুর কারখানায় এনে পূর্নবাসনের কাজ শুরু করা হয়। এজন্য প্রকল্প গ্রহণ করার কথা থাকলেও পরে তা হয়নি। প্রাথমিকভাবে কোচপ্রতি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি কোচে খরচ পড়েছে ৫০ লাখ টাকারও কম। এক্ষেত্রে কোচপ্রতি সাশ্রয় হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন কোচ তৈরীর কাজ শুরু করা হয়। এই কয়েক মাসে প্রাথমিকভাবে আমরা তিনটি কোচ তৈরী করেছি। এগুলোর চেসিসটা শুধু পুরাতন। বাকী সবই নতুন করে তৈরী করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোচগুলোতে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। যেমন, গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা কোচগুলোর প্রতিটি চেয়ারে চার্জিং পয়েন্ট নাই। আমরা প্রতিটি চেয়ারে চার্জিং পয়েন্টু যুক্ত করেছি যাতে মোবাইল ও ল্যাপটপ চালানো যায়। তিনি জানান, কোচগুলোতে অত্যাধুনিক ও আরামদায়ক চেয়ার (আসন) ও আধুনিক লাইট সংযোজন এবং মেঝেতে মাইল্ড স্টিলের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিল ও ফ্লোরম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে চেইন টেনে কেউ যাতে ট্রেন থামাতে না পারে, সেজন্য পুরাতন আমলের ব্যবস্থার পরিবর্তে অ্যালার্ম চেইন পুলিং কন্ট্রোলার ও টয়লেটে আধুনিক কমোড বসানো হয়েছে।
সৈয়দপুর কারখানার ডিএস জানান, ১৮টি কোচের মধ্যে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা তিনটিসহ ১২টি কোচ সংযোজিত হবে লালমনিরহাট-ঢাকা রেলপথের লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে। আগামী মাসের মধ্যেই পুরনো কোচ পাল্টে ট্রেনটি চলবে নতুন কোচ দিয়ে। বাকি ৬টি কোচ রিজার্ভ থাকবে। এর সাথে চীন থেকে আনা সাদা কোচের একটি এসি কেবিন ও একটি এসি চেয়ার কোচ যুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, আগে লালমনি এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। আধুনিকায়নে কোচগুলোর গতি ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে ট্রেনটি।
এদিকে, দেশে তৈরী নতুন কোচগুলো লালমনি এক্সপ্রেসে যুক্ত হচ্ছে জেনে ভীষন খুশি লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ট্রেন যাত্রীরা। রেল ফ্যান ফেসবুকগুলোতে ইতোমধ্যে এ নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরাম ফেসবুকে একজন লিখেছেন, “অপেক্ষায় আছি দেশে তৈরী নতুন কোচের লালমনি এক্সপ্রেসে কবে চড়বো”।

 

 



 

Show all comments
  • rakib ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৪৫ এএম says : 0
    amra keno parbo na??? churi ghush bondo kore aktu desher kotha chinta korlle e amar ai chotto Bangladesh ke porboter churay wthate pari !! dorkar wddok r shotota !! bassss
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Ahmed ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৩ পিএম says : 0
    bhalo laglo..japan e bullet train e cori.ar bhabi kobe je amr deshe ei rokom train hobe..
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৪ পিএম says : 0
    সাবাস। আমরা কি সারা পৃথিবীর চাইতে ১০০বছর পিছিয়ে!! এত দিন পরে পারলাম কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Solaiman ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৪ পিএম says : 0
    দেশের সরকার ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি কিছুটা মন মানসিকতা বদলাত , তাহলে দেশ আরও পনের বিশ বছর আগে উন্নত হত।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Abdul Mazid ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৬ পিএম says : 0
    আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Wahid Ujjaman ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৬ পিএম says : 0
    এগিয়ে যান। ধন্যবাদ আমাদের গর্বিত ভাইদেরকে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ